মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ হাইকোর্টে রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনে এই ‘নো অর্ডার’ দেন। এরফলে, মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সের ফ্রেম বাধা যায় না বলে হাইকোর্টের রায়ই বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ‘নো অর্ডার’ আদেশের মানে হলো হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল। তবে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়া সাপেক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করতে পারে। তখন বিস্তারিত শুনানি হতে পারে। আপিলের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেসুর রহমান। অন্যদিকে, রিটকারীর পক্ষে ছিলেন সাবেক বিচারপতি ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন ও ব্যারিস্টার ওমর সাদাত।
এর আগে, হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। যা গত ১৯ জুন চেম্বার বিচারপতির আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন চেম্বার বিচারপতি রায়ে স্থগিতাদেশ না দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি গতকাল আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। এ অনুসারে গতকাল রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানি হয়। চলতি বছরের ১৯শে মে, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ছয় মাস নির্ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর কোথাও মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
পরে ওই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। এর আগে ২০১৮ সালের বিভিন্ন সময় একাধিক রিটের শুনানি নিয়ে আদালত ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ছয় মাস নির্ধারণ করে সংশোধিতপরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- এ মর্মে রুল জারি করা হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা সচিব, যুগ্ম সচিব, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়। ২০১৬ সালে প্রথমে গেজেট প্রকাশ করে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৩ বছর। এরপর গত ১৭ জানুয়ারি একটা পরিপত্রের মাধ্যমে সে গেজেট সংশোধন করে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যত মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১২ বছর ৬ মাস।