ঋণখেলাপিদের বিষয়ে সরকার কি পদক্ষেপ নেয় তা জাতি দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট আয়োজিত ‘২৩শে জুন পলাশী ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষাপটে আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ব্যাংকে দলীয়করণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাদের না বসালে ঋণখেলাপি হওয়ার কথা না। জনগণের আমানত বিদেশে পাচার করে ব্যাংকগুলোকে খালি করে ফেলেছে ঋণখেলাপিরা। জাতীয় সংসদে এসব ঋণখেলাপির শীর্ষ ৩০০ জনের তালিকা দেয়া হয়েছে। এখন তাদের বিরুদ্ধে সরকার কি ধরনের ব্যবস্থা নেবে তা জাতি দেখতে চায়।
জাতীয় বাজেটের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আজকে সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর জন্য অস্বাভাবিক সরকার একটি অস্বাভাবিক বাজেট দিয়েছে। আধিপত্যবাদ এবং সমপ্রসারণবাদ বাংলাদেশের বাজার দখলের জন্য মরিয়া।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় ব্যবসায়ীকে কখনো অর্থমন্ত্রী বানানো হয়নি। বর্তমন অর্থমন্ত্রী দেশের ১০ জন ধনীর মধ্যে একজন। এই অর্থমন্ত্রী সুবিধাবাদীদের জন্য বাজেট দিয়েছেন। অপরদিকে মধ্যবিত্তদের ওপরে চাপ বেড়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর ভ্যাটের প্রভাব বাড়ানো হয়েছে। দেশে এখন সব শ্রেণির মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। সেই মোবাইল ফোনে কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১০০ টাকার মধ্যে ২৭ টাকা চলে যাবে। এই একটি উদাহরণেই বোঝা যায় বাজেট সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের জন্য করা হয়েছে। যারা মুদ্রা পাচার করে ও ঋণখেলাপি, তারাই এই বাজেট থেকে সুবিধা পাবে। খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, উন্নয়নের গণতন্ত্রের নামে সরকার মেগা প্রজেক্ট করে জনগণের পকেট থেকে টাকা নিচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল বাড়িয়ে ভ্যাট সমপ্রসারণ করে গরিব মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। আর এর সুবিধা নিচ্ছে সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা। কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে তিনি বলেন, গত ৫ বছরে কারা কালো টাকা কামিয়েছে? আওয়ামী লীগের নেতারা, আওয়ামীপন্থি ব্যবসায়ীরা। তাদের সুবিধা দেয়ার জন্যই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতেই বোঝা যায় এই সরকার হচ্ছে তাদের সরকার, যাদের স্বার্থে এই বাজেট দেয়া হয়েছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। তিনি দেশের যে কয়টি আসন থেকে নির্বাচন করেছেন সবক’টি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু আমরা যারা তাঁর অনুসারী তাকে আদর্শ মানি। আমরা কি করছি? তার আদর্শ মেনে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছি? সেই আত্ম-জিজ্ঞাসা ও আমাদের নিজেদের মধ্যে উদয় হওয়া উচিত। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের জন্ম তারিখ এর সঙ্গে যারা শুভেচ্ছা জানাচ্ছে এটা একেবারেই কাকতালীয় বলে আমি মনে করি। তবে এখান থেকে আমাদের অনেক কিছুই আহরণ করার বিষয় আছে। তবে আমরা চর্চা করি বেশি প্রচার করি কম। আলাল বলেন, বর্তমানে যিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং তাকে যারা সহযোগিতা করছেন তারা রাষ্ট্রকে নয়, আওয়ামী লীগ দলকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। তারা সংবিধান পরিপন্থি কাজ করছেন। তিনি বলেন, আজকে ব্যাংক থেকেও আওয়ামী লীগের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়। যখন একটি দেশের সব প্রতিষ্ঠানই একটি রাষ্ট্রের না হয়ে একটি দলের অনুগত হয়ে যায় তখন সেই জায়গা থেকে বের হওয়া খুবই কঠিন। সেই জায়গা থেকে বের হতে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে দরকার এবং তারেক রহমানকে দরকার।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেলিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ড. কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও কৃষকদলের সদস্য এম জাহাঙ্গীর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।