তিন বছর আগে ইডেন গার্ডেনে বেন স্টোকসকে চার বলে চার ছক্কা হাঁকিয়ে মেতেছিলেন উল্লাসে। কমেন্ট্রি বক্সে বসে ইয়ান বিশপ সে কথাই বার বার মনে করছিলেন। শনিবার ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে সেই দিনটা প্রায় ফিরিয়ে এনেছিলেন কার্লোস ব্রাথওয়েট! তবে শেষটা ইডেনের মতো করতে পারলেন না এই ক্যারেবীয় অলরাউন্ডার, আরেকটি থ্রিলার জন্ম দেয়ার আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে থামলেন জয় থেকে মাত্র ৫ রান দূরে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ২৯২ রানের লক্ষ্য অসম্ভব না। কিন্তু শুরুতেই দলীয় ৩ রানের মাথায় ১ রান করেই শেই হোপ ফিরে গেলে চাপে পড়ে ক্যারেবীয়রা। নিকোলাস পুরানও (১) খুব বেশিক্ষণ ক্রিস গেইলকে সঙ্গ দিতে পারেননি। দলের ২০ রানে ২ উইকেট হারানো উইন্ডিজ তখন ঘুরে দাঁড়ায় গেইল ও হেটমায়ারের ব্যাটে চড়ে। হেটমায়ার ৫৪ রান করে আউট হন।
রানের চাকা সচল রাখা গেইল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জেসন হোল্ডারেরও (০) চলে যাওয়া দেখেন। নিজে ৮৪ বলে ৮৭ রান করে যখন গেইল ফিরে যান তখন দলের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১৫২। ক্রিজে আসেন ব্রাথওয়েট। গেইলের পর নার্সও ১ রান করে আউট হলে হারের শঙ্কাটা গাঢ় হয় ক্যারিবীয়দের (১৬৩/৬)। স্কোরবোর্ডে আর ১ রান যোগ করে এভিন লুইসের বিদায়ে উইন্ডিজদের পরাজয় তখন সময়ের ব্যাপার ধরে নেন অনেকে । কে জানতো ব্রাথওয়েট ‘অতিমানবীয়’ এমন ইনিংস খেলবেন! ৪৩ ওভার শেষে উইন্ডিজের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ২৪৩। জিততে হলে ৪২ বলে ৪৯ রান করতে হবে। ক্রিকেটের মারমার-কাটকাট যুগে খুবই সহজ সমীকরণ। কিন্তু উইকেট যে হাতে নেই। রোচ ফিরে গেছেন ২১১ রানের মাথায়। তখনও দরকার ৭১ বলে ৮১ রানের। ক্রিজে থাকা কটরেলকে নিয়ে আর কত দূরই বা যাওয়া যায়! ৫ ওভার বাকি থাকতে পড়লো ওয়েস্ট ইন্ডিজের নবম উইকেট, তখনও জয় থেকে তারা ৪৭ রান দূরে। ৪৬তম ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের কাছ থেকে নিতে পারলেন ৭ রান। বোল্টের ওভার শেষ তখন। এলেন লকি ফার্গুসন। সে ওভারেও ৭। ফার্গুসনের ওভারও শেষ। এলেন ম্যাট হেনরি। ব্রাথওয়েট ফিরে গেলেন তিন বছর আগে ইডেনের সেই দিনে, ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির সেই ফাইনালে। প্রথম বলে ডাবলস, এরপর টানা তিন ছয়। ছয়গুলো মনে করিয়ে দিল সেই দিনটা, যেন হেনরির ওপর এসে ভর করেছেন বেন ষ্টোকস। ৫ম বলে চার, শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক রাখলেন নিজের কাছে। যে ম্যাচটা নিউজিল্যান্ড প্রায় জিতে গিয়েছিল, সেটা প্রায় ছিনিয়ে আনলেন। এলেন জিমি নিশাম। প্রথম চার বলে দুই, যেটিতে পূর্ণ হলো তার প্রথম আন্তজার্তিক সেঞ্চুরি। মাত্র ৮০ বলে ৯ চার ও ৫ ছয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা সেঞ্চুরিটি উপহার দেন এই অলরাউন্ডার। সেঞ্চুরি পূর্ণ করে পঞ্চম বল ডট। ব্রাথওয়েটের সামনে তখন দুইটি অপশন- সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক রাখা, অথবা পুরো ইনিংসের মতো অতিমানবীয় কোনো স্ট্রোকে গৌরবের দিকে এগিয়ে যাওয়া। ব্রাথওয়েট বেছে নিলেন দ্বিতীয়টি। সেটাও প্রায় পার হয়ে গিয়েছিলেন, তবে সীমানার ইঞ্চি ব্যবধানে ক্যাচ লুফে নিলেন ট্রেন্ট বোল্ট! উল্লাসে মাতলো নিউজিল্যান্ড। ক্রিজের একপাশে হাঁটু গেড়ে নুয়ে পড়লেন ব্রাথওয়েট! ২৯২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা নিউজিল্যান্ডের কাছে ৫ রানে হারলো। এ জয়ে অপরাজিত নিউজিল্যান্ড ১১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠে গেল। তবে এসব হিসাব এক পাশে রেখে এ ম্যাচে সবাই মনে রাখবে ব্রাথওয়েটের অমন দাপুটে, বুক চিতিয়ে লড়াই করা ব্যাটিংটাই।