হোসেনপুরে কথিত চুরির অভিযোগে অহিদুল ইসলাম অহিদ (২৫) নামে এক যুবককে গাছে বেঁধে মধ্যযুগীয় নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের পর পুলিশ ডেকে ওই যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার পর হোসেনপুর থানায় পুলিশের কাজে বাধাদান ও আহত করার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। পরে আদালতে পাঠানোর পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত ১৬ই জুন সন্ধ্যার দিকে হোসেনপুর উপজেলার লাকুহাটি গ্রামে নির্মম নির্যাতনের শিকার হওয়া ওই যুবক গত ১৭ই জুন থেকে কারাগারে রয়েছে। নির্যাতিত যুবক অহিদুল ইসলাম অহিদ উপজেলার জগদল গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
পরিবার জানায়, অহিদুল ইসলাম অহিদ শাড়িতে রঙ ও নকশা করার কাজ করতো। গত ১৬ই জুন সন্ধ্যার দিকে হোসেনপুর উপজেলার লাকুহাটি গ্রামে অহিদকে কয়েকজন আটকে চোর অপবাদ দিয়ে গাছে বেঁধে নির্মমভাবে পেটায়। এ সময় সে বার বার আকুতি জানিয়েও নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি।
নির্যাতনের পর রাতে নির্যাতনকারীরা পুলিশকে খবর দিয়ে পুলিশের হাতে অহিদকে তুলে দেয়। পুলিশ কোন ধরনের চুরির মামলা না নিয়ে অহিদকে গত ৮ই মে পৌর এলাকার নতুন বাজারে সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনায় ৯ই মে থানায় দায়ের করা পুলিশের কতর্বকাজে বাধাদান ও আহত করার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায়। পরদিন ১৭ই জুন অহিদকে আদালতে পাঠানোর পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সোমবার ফেসবুকে অহিদকে নির্যাতনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি গাছের সাথে বেঁধে রাখা অহিদকে অবস্থায় কয়েকজন ধরে রেখে নির্যাতনের জন্য উদ্যত হয়েছে। এ সময় নির্যাতন থেকে বাঁচতে অহিদ কাকুতি-মিনতি জানাচ্ছে। সেই কাকুতি-মিনতি উপেক্ষা করে একজন লোহার পাত দিয়ে অহিদকে বেধম মারপিট করছে। উপর্যুপরি তাকে বেধম মারপিট করা হলেও আশপাশে থাকা লোকজনের কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যায়নি।
নির্যাতিত যুবক অহিদের বাবা বাবুল মিয়া অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে গাছের সাথে বেঁধে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়। তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, লাকুহাটি গ্রামের পল্টু, এরশাদ ও রাসেল সহ বেশ কয়েকজন এই নির্যাতনে নেতৃত্ব দেয়। পরে তারাই পুলিশ ডেকে তার ছেলেকে কোন ধরনের চুরির মামলা না দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। থানা পুলিশ অন্য একটি পুলিশ মারার মামলায় তার ছেলেকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরের দিন আদালতে চালান দেয়। বাবুল মিয়া বলেন, আমার নিরপরাধ ছেলেকে একেতো নির্যাতন করা হয়েছে। তার উপর মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। আমি এই ঘটনার বিচার কার কাছে চাইব?
এ ব্যাপারে হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) নূর ইসলাম জানান, যুবকটিকে নির্যাতনের ঘটনা তার জানা নেই। এছাড়া নিরপরাধ কাউকে পুলিশ এসল্ট মামলার আসামি করার কথা নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।