দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, এ জন্য রাষ্ট্রের পাশাপাশি বিচার বিভাগও দায় এড়াতে পারে না। একইসঙ্গে বিলম্বিত বিচার মানে বিচারকে অস্বীকার করার নামান্তর বলেও মন্তব্য করেন আদালত। গতকাল বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক মামলা বাতিলের রিভিশন আবেদনের শুনানিতে এমন মন্তব্য করেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এর্টনি জেনারেল এডভোকেট ফরহাদ আহমেদ। বিবাদী মারুফ রেজা নামের এক ব্যক্তির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ওবায়দুর রহমান। মারুফ রেজার আইনজীবীর উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট বলেন, উনি (মারুফ) তো এই মামলায় আসামি বা সাক্ষীর কোনো তালিকায় তার নাম নেই, তাহলে তিনি কিভাবে নিম্ন আদালতের অধিকতর তদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করলেন। আপিল বিভাগের রায়ও আছে অধিকতর তদন্তের আদেশ স্থগিত করা যাবে না।
মামলার যেকোনো অবস্থায় বিচারিক আদালত অধিকতর তদন্তের আদেশ দিতে পারেন। তখন মারুফ রেজার আইনজীবী ওবায়দুর রহমান বলেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে এই মামলা নিয়ে প্রতিবেদন দেখেছি। অনেক পুরাতন মামলা। যে নথিপত্র আমাদের কাছে রয়েছে তা থেকে বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি। এরপর ২৮ বছর আগে অধিকতর তদন্তের জন্য ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের দেয়া আদেশ আদালতে পড়ে শোনান তিনি। হাইকোর্ট বলেন, অধিকতর তদন্তের আদেশে আপনার মক্কেল কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো এবং এ ধরনের রিভিশন মামলা করার আইনগত এখতিয়ার তার ছিল কি না সেটা আপনাকে ব্যাখ্যা করতে হবে। পরে ওই আইনজীবী বলেন, কোর্ট যেভাবে চায় সেভাবেই আদালতকে আমরা সহযোগিতা করবো।
১৯৮৯ সালের ২৫শে জুলাই সগিরা মোর্শেদ সালাম (৩৪) সিদ্বেশ্বরীতে ছিনতাইকারীর গুলিতে মারা যান। এ ঘটনায় ওইদিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্বামী সালাম চৌধুরী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত রিকশাচালক দু’জনকে শনাক্ত করলেও অজ্ঞাতকারণে মিন্টু ওরফে মন্টু নামে এক আসামির বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয় ডিবি পুলিশ। ১৯৯১ সালের ২৩শে মে মামলার সাক্ষ্য চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয় ঢাকার একটি আদালত। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন মারুফ রেজা। ওই বছরের ২রা জুলাই হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। এরপর দীর্ঘ ২৮ বছর মামলাটির উপর স্থগিতাদেশ রয়েছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রপক্ষ ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়।