বাংলাদেশের কোচ স্টিভ রোডসের সাক্ষাৎকার নিতে অনুশীলনে হাজির সঞ্জয় মাঞ্জরেকার। আজ বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের আগে দুই দেশের ভক্ত সমর্থকদের থেকে শুরু করে সংবাদ মাধ্যমে উত্তেজনা আকাশ ছোঁয়া। চলছে কথার লড়াই। চলছে উত্তপ্ত আলাপ আলোচনা। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের হারের পর তা গনগনে আগুনের রূপ নিয়েছে। ইচ্ছা করে ভারত ম্যাচ ছেড়ে দিলো! নাকি তাদের মিডল অর্ডারের দুর্বলতা? সেই দুর্বলতার সুযোগ নেবে কি বাংলাদেশ? কারণ বিশ্বকাপে টিকে থাকতে হলে ভারতকে হারানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই টাইগারদের সামনে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে এই সব প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে অস্থির হয়ে উঠলেন মাঞ্জরেকার। সেই সুযোগে দৈনিক মানবজমিনের অনুরোধে রাজি হলেন টাইগারদের নিয়ে কথা বলতে।
তার কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো।
ভারতের জন্য জয় সহজ, তবে...আমি মনে করি, ভারতের জন্য বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় কঠিন হবে না। ইংল্যান্ডে যে ধরনের ব্যাটসম্যান আছে, তাদের জোরে মারার মতো যে ক্ষমতা আছে আমি বাংলাদেশের সাকিব-মুশফিক ছাড়া তেমন কাউকে দেখিনা। এছাড়াও বোলিংয়ে বেশ দুর্বলতা আছে বাংলাদেশ দলের। পেস বিভাগে মাশরাফি পারছেনা। তার ইনজুরির কারণে হয়তো সে নিজেকে এখন পর্যন্ত সেই ভাবে মেলে ধরতে পারেনি। স্পিন দিয়ে খুব একটা সহজ হবেনা। যদিও সাকিবের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ দারুণ করছে। তবে মিরাজ উইকেট নেয়ার ক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে। আর আমি মোস্তাফিজকে নিয়ে এখন ভয় দেখছিনা। কারণ আগের মত তার বোলিংয়ের ধার নেই। সে এখন নিজের গতি বাড়াতেই ব্যস্ত। কোন সুইং নেই বোলিংয়ে। বাংলাদেশের ব্যাটিংটা ভালো হলেও আমি বোলিংটাকে বেশ পিছিয়ে রাখবো। বিশেষ করে পেস বিভাগ বেশ দুর্বল। তবে ক্রিকেটে শেষ বলে কথা নেই বাংলাদেশ এমন দল যারা আগেও প্রমাণ করেছে যে কোনো দলকে নিজেদের দিনে তারা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে। ভারত সহজেই জিতবে আশা করলেও কঠিন হতে সময় লাগবে না।
এখন পর্যন্ত দারুণ পারফরম্যান্স এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টে যে পারফরম্যান্স করেছে তা অসাধারণ। এর আগে তারা নিজ দেশের মাটিতে দারুণ শক্তিশালী হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে। এবার ইংল্যান্ডেও তারা বেশ কয়েকটি বড় দলকে হারিয়েছে। বিদেশের মাটিতে এমনটা দারুণ। যদি আমার কথা বলেন আমি বলবো এটি বাংলাদেশের সেরা পারফরম্যান্স যে কোন সময়ের চেয়ে।
বিরাট-রোহিতকে ফেরাতে হবে দ্রুতআমি মনে করি ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশকে ভালো করতে হলে দ্রুত বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মাকে আউট করতে হবে। এখানে ভূমিকা রাখতে হবে মোস্তাফিজকে। সেই কারণে মোস্তাফিজের দিকে আমিও তাকিয়ে। আমার পরামর্শ হলো যদি টসে জেতে মাশরাফি অবশ্যই আগে ব্যাটিং নিতে হবে। তারা যদি আগে ব্যাট করে এই মাঠে ২৮০ বা ৩০০ রান করতে পারে তাহলে আমি মনে করি ভারতের জন্য এই মুহূর্তে বেশ কঠিন হবে।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চেয়ে বোলিং দুর্বলআমি মনে করি এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ অসাধারণ ব্যাটিং করছে। তবে তাদের বোলিংটা নিয়ে আমি বড় আশা করতে পারছিনা। অনেকগুলো দুর্বলতা আমার চোখে পড়েছে বোলিংয়ে। বিশেষ করে স্পিনে। সেই তুলনায় ভারতের স্পিনতো বলার অপেক্ষা রাখেনা কতটা ভয়ঙ্কর। পেস আক্রমণটা যতটা ভালো হওয়ার কথা ছিল সেটিও হয়নি। আমার মনে হয় এখানে ইনজুরি গুলো বড় বাধা হচ্ছে বাংলাদেশের। যদি বাংলাদেশ ভারতকে হারাতে চায় তাদের সামনে সুযোগ আছে। কিন্তু ব্যাটিং , বোলিং ফিল্ডিং তিন বিভাগেই দারুণ করতে হবে। আসলে বিশ্বকাপে রেসে এখনো তাদের সুযোগ আছে। সেটি নিতে হলে নিজেদের শক্তি সীমানার বাইরে গিয়েও খেলতে হবে।
ভারতকে অবাক করে দিতে পারে বাংলাদেশযদি ভারতের শক্তি বিবেচনা করেন তাহলে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ। আপনি দেখেন বিরাট কিন্তু তার সেরাটা এখনো দিতে পারেনি। এখন পর্যন্ত তার একটি সেঞ্চুরিও নেই। ধোনি সেই ভাবে পারছেনা, কিন্তু সাকিব কিন্তু পারছে। ও যেভাবে তিনে নেমে বাংলাদেশকে টানাছে তা অসাধারণ। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো ইংল্যান্ডের উইকেটে দুর্বল দলগুলো কিন্তু যে কাউকে অবাক করে দিতে পারে। আমি মনে করি সেই তুলনাতে বাংলাদেশের সুযোগ আছে ভারতকে আরো একবার অবাক করে দেয়ার।