কংগ্রেসের নেতৃত্বে সঙ্কট এখনও কাটেনি। রাহুল গান্ধী তার সিদ্ধান্ত বজায় রেখে পদত্যাগের কথা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন। কংগ্রেস যে সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সেকথা অনেক শীর্ষ নেতাই বলেছেন। তবে রাহুল গান্ধীর পদত্যাগের ঘোষণা থেকে স্পষ্ট হয়েছে দলের অভ্যন্তরে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার প্রবণতাকে তিনি ভালভাবে নেননি। তাই দলের পরাজয়ের দায়ের কথা উল্লেখ করে রাহুল গান্ধী পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন। তবে ভাই রাহুলের এই সাহসী সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র। প্রিয়াঙ্কা এখন বিদেশে রয়েছেন। সেখান থেকেই রাহুলের পদত্যাগের কয়েক ঘন্টার মধ্যে টুইট করে বলেছেন, তুিম যা করেছো তা খুম কম জনেরই করার সাহস থাকে।
তোমার সিদ্ধান্তকে আমি সম্মান জানাই।
বুধবার এক দীর্ঘ চিঠিতে প্রকাশ্যে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করে রাহুল দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, লোকসভা ভোটে হারের দায় নিয়ে তার মতো আরও অনেকেরও ইস্তফা দেওয়া উচিত ছিল। অনেকক্ষেত্রে মোদী-আরএসএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দলের নেতারা পাশে ছিলেন না সেকথাও স্পষ্ট করে বলেছেন। রাহুল যে কথাগুলি বলেছেন, দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকেও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সেকথাই বলেছিলেন। রাহুল তার চিঠিতে চাচাছোলাভাবে বলেছেন, ভারতে এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে যে, প্রভাবশালী অংশ ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায়। কেউই ক্ষমতা বিসর্জন দিতে চায় না। কিন্তু ক্ষমতায় থাকার আকাঙ্খাকে বিসর্জন এবং গভীর আদর্শিক লড়াই করা ছাড়া আমাদের পক্ষে বিরোধী শক্তিকে পরাস্ত করা সম্ভব নয়। কংগ্রেসে আমূল সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে রাহুল বলেছেন, দলকে পুনর্গঠিত করার জন্য কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং নির্বাচনে ব্যর্থতার জন্য অনেককেই দায়বদ্ধ করা দরকার। দলের সভাপতি হিসেবে আমার দায়িত্বকে উপেক্ষা করে অন্যদের দায়ী করা অযৌক্তিক হতো। রাজনৈতিক মহলের মতে, কংগ্রেস দলের শীর্ষ নেতারা ক্ষমতা ছাড়ার পক্ষে নন। সেটাই রাহুল নগ্নভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি চেয়েছিলেন, কংগ্রেসি রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের পাশাপাশি প্রবীণ নেতরা দায়িত্বে ব্যর্থতার জন্য পদত্যাগ করুক। কিন্তু তা কেউ করতে রাজি না হওয়াতেই রাহুল ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের পদত্যাগের জেদে অটল থেকেছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, দলের প্রবীণ নেতারা পদত্যাগ মঞ্জুর হয়ে যাওয়ার ভয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে চান নি। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী ওয়ার্কিং কমিটিতেই রাহুলের পদত্যাগপত্র গৃহীত হবে এবং পরবর্তী সভাপতি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে ইতিমধ্যেই নতুন সভাপতি নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যে তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে। জানা গেছে, সভাপতির দৌড়ে রয়েছেন কংগ্রেসের দুই বর্ষীয়ান নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে ও সুশীল কুমার শিন্ডে। শোনা যাচ্ছে শচীন পাইলটের মতো তরুণ নেতার নামও। আবার অশোক গেহলটও চাইছেন সভাপতি হতে। শোনা যাচ্ছে মতিলাল ভোরাকে সামনে রেখে পরবর্তী সভাপতি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। কংগ্রেস যদি শেষ পর্যন্ত এদের মধ্যে কাউকে বেছে নেয় তাহলে তা হবে তৃতীয় কোনও কংগ্রেস সভাপতি, যিনি গান্ধী পরিবারের বাইরের মানুষ। এর আগে কংগ্রেসের সভাপতি পদে ছিলেন সীতারাম কেশরী ও নরসিংহ রাও। তবে কংগ্রেস সূত্রের খবর, সভাপতি নিয়ে শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন রাহুল, সোনিয়া ও প্রিয়াঙ্কা।