শেষের পাতা

সিলেটে পুলিশের অভিযান

ক্ষুব্ধ জুয়াড়িরা হামলা চালায় সাংবাদিক পরিবারের ওপর

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২০১৯-০৭-০৮

অবশেষে সত্য স্বীকার করলেন আম্বরখানা ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আবদুল বাতেন। বললেন- ‘জুয়াড়ি তীর কামরুলের আস্তানায় অভিযান চালানোর কারণেই হামলা হয়েছে গোয়াইটুলার সাংবাদিক পরিবারের ওপর। ক্ষুব্ধ হয়ে জুয়াড়িরা এই হামলা চালায় বলে
জানান তিনি।’ অথচ চ্যানেল আইয়ের সিলেট প্রতিনিধি সাংবাদিক সাদিকুর রহমান সাকী কিংবা তার পরিবারের সদস্যরা জুয়া খেলা ও অভিযান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। বিষয়টি শুধু এসআই বাতেনই নয়, জানেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। এরপরও ঘটনার পর মামলা হলেও চার দিনে পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। গত ৪ঠা জুলাই সিলেট নগরীর ৫ নং ওয়ার্ডের গোয়াইটুলা মল্লিকা আবাসিক এলাকায় চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক সাদিকুর রহমান সাকী ও সবুজ সিলেটের সাংবাদিক সুবর্ণা হামিদের বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে। একই এলাকার জুয়াড়ি কামরুল, কামাল সহ কয়েকজন মিলে সাকীর বাসায় হামলা চালায়। এ সময় তারা সাংবাদিক সুবর্ণা হামিদ, তার শাশুড়ি ও আওয়ামী লীগ নেত্রী জাহানারা বেগম মিলনসহ পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। খবর পেয়ে এলাকায় পুলিশ গেলে জুয়াড়িরা পালিয়ে যায়। ঘটনার পর থেকে নানা ঘটনায় আবর্তিত হচ্ছে ৫ নং ওয়ার্ডের গোয়াইটুলা। খোদ পুলিশই এলাকার অপরাধীদের সম্পর্কে অবাক হয়েছে। গোয়াইটুলা নগরের এক পাশে অবস্থিত। পাশেই দলদলি চা বাগান। একেবারে পেছনের এলাকা হওয়ার কারণে প্রশাসনের চোখের আড়ালে ছিল। আর এই সুযোগে গোয়াইটুলায় ভারতীয় তীর খেলার জমজমাট আসর বসে।

দিন কিংবা রাত সব সময়ই গোয়াইটুলা তীর খেলায় জমজমাট থেকে। পুলিশি অভিযানের খবর টের পেলেই জুয়াড়িরা পালিয়ে যায়। ফলে অভিযান ব্যর্থ হয় পুলিশের। এই গোয়াইটুলার মল্লিকা আবাসিক এলাকার ৫ নম্বর বাসার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম। তার পিতা স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন। সিলেট নগরীতে তীর খেলার প্রসার ঘটার সময় থেকেই নিজের বাসায় তীরের বোর্ড বসায় কামরুল ইসলাম। আর বোর্ডে তার পিতা কামাল ও মামা মামুন তদারকি করতো। তীর খেলেই দুই বছরে তারা ফুলেফেঁপে উঠেছে। এখন দামি গাড়ি ও মোটরসাইকেল ব্যবহার করে তারা। তীরের পাশাপাশি কামরুলের মামা মামুন মিয়া সুদের ব্যবসাও করেন। আর এই সব অপকর্মের মূল আস্তানা হিসেবে গড়ে তোলা হয় কামরুলের বাসাকে। এই বাসার ঠিক উল্টো পাশেই সাংবাদিক সাকীর বাসা। এসব অপকর্ম চললেও সাকী দেখেও না দেখার ভান করতেন। এলাকা হওয়ার কারণে তিনি অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করেন। মাঝে মধ্যে ওই আস্তানায় এয়ারপোর্ট থানা ও আম্বরখানা ফাঁড়ির এএসআই ও কনস্টেবল পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা গিয়েও আড্ডা দেয়। তীরের বোর্ডের টাকা পয়সা নিয়ে প্রায় সময় দ্বন্দ্ব হয়। কামরুল তার বাসায় গড়ে তোলা টর্চার সেলে তীর খেলায় নিয়োজিত থাকা রিকশাচালক, ভ্যানচালক ও নিম্ন আয়ের মানুষকে মারধর করতো। এই বিষয়গুলো পুলিশ পর্যন্ত গড়াতো।

এ কারণে ফাঁড়ি ও থানা পুলিশের অন্যতম টাকার সোর্স ছিল তীর কামরুল ও তার পিতা কামাল আহমদ। সাম্প্রতিক সময়ে আম্বরখানা ফাঁড়ি পুলিশের সঙ্গে টাকার দেনদরবার নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় কামরুল ও কামালের। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে ১৫ দিন আগে আম্বরখানা ফাঁড়ির এসআই আব্দুল বাতেন অভিযান চালিয়েছেন কামরুলের আস্তানায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলো কামরুল সহ তার সহযোগীরা। তারা এলাকায় পুলিশের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিলও করে। ঝাড়ু মিছিলের পর থেকে পুলিশ আরো ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। গত ৪ঠা এপ্রিল দুপুরে এসআই বাতেন সহ পুলিশ কামরুলের আস্তানায় অভিযান চালায়। অভিযানকালে তীরের বোর্ডের নিয়ন্ত্রক কামরুলসহ তার পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যায়। পুলিশ চলে যাওয়ার পরপরই তারা সংঘবদ্ধ হয়ে সাংবাদিক সাকীর বাসায় হামলা চালায়। পুলিশকে জুয়ার বোর্ডের তথ্য দেয়ার কারণে এই হামলা। এসআই বাতেন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সাংবাদিক সাকীর ছেলেকে টার্গেট করে তারা হামলা চালিয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। এদিকে এ ঘটনায় সাংবাদিক সাকী বাদী হয়ে সিলেটের এয়ারপোর্ট থানায় ঘটনার দিনই মামলা করেছেন।

মামলায় কামরুল ছাড়াও আসামি করা হয়েছে তার পিতা কামাল হোসেন, মামা মামুন মিয়া, মা নাজমা বেগম, বোন হাসিনা বেগম ও কুঠিনা বেগমকে। সাংবাদিক সাদিকুর রহমান সাকী জানিয়েছেন, ‘আমি এলাকায় বাস করলেও সকালে বের হই, রাতে ফিরি। আমার স্ত্রী সুবর্ণাও তার অফিসে চলে যান। এলাকা সম্পর্কে আমরা অবগত থাকলেও সামাজিকতার খাতিরে নীরব থাকি। কিন্তু পুলিশের অভিযানের কারণেই আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো পুলিশ গতকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় তিনি ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীন রয়েছেন বলে জানান।’ এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর আসামিদের গ্রেপ্তার করতে নগরীর টিলাগড়ে তাদের এক আত্মীয়ের বাসায় অভিযান চালালেও তাদের পাওয়া যায়নি। এয়ারপোর্ট থানার ওসি শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে তারা অভিযানে রয়েছেন। আসামিদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status