অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দিয়ে শেষ হয়েছে আইসিসি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব। সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও স্বাগতিক ইংল্যান্ড। গ্রুপ পর্ব শেষেই পাঁচ ব্যাটসম্যান করেছেন পাঁচশর বেশি রান। রোহিত শর্মা, ডেভিড ওয়ার্নার ও সাকিবের রান ছয়শ’র উপর। নকআউট পর্ব শেষে সংখ্যাটা বাড়তে পারে আরো। অথচ এর আগে বিশ্বকাপের ইতিহাসে মাত্র দুইজন ব্যাটসম্যান এক আসরে ছয়শ’র বেশি রান করতে পেরেছিলেন। এবার বোলাররাও করেছেন দারুণ। ২০ উইকেট কিংবা তার বেশি পেয়েছেন দুইজন। অপেক্ষায় আছেন আরো বেশ কয়েকজন। এক আসরে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেয়ার নতুন রেকর্ডের পথে আছেন মিচেল স্টার্ক।
বিশ্বকাপের শুরু থেকে দারুণ ছন্দে আছেন ভারতের রোহিত শর্মা। চলতি আসরে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৮ ম্যাচ। তাতে জীবন পেয়েছেন মোট ৮ বার। তবে এ সব ছাপিয়ে অবিশ্বাস্য পারফর্ম করে যাচ্ছেন এ ব্যাটসম্যান। এর মধ্যেই ৯২.৪২ গড়ে করেছেন ৬৪৭ রান। করেছেন ৫টি সেঞ্চুরি। তার পরেই আছেন অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এ বিশ্বকাপ দিয়েই জাতীয় দলে ফিরেছেন ওয়ার্নার। অস্ট্রেলিয়ার জন্য যে কতটা মূল্যবান এ খেলোয়াড় তা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। শুরু থেকেই দারুণ পারফর্ম করে ৬৩৮ রান তুলেছেন এ ওপেনার। ৮৬.৫৭ গড়ে সমান ৩টি করে সেঞ্চুরি ও হাফসেঞ্চুরিও করেছেন। অনেক বছর ধরেই বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আর কেন তিনি সেরা তা বুঝিয়ে দিতে বিশ্বকাপকে বেছে নিয়েছেন এ অলরাউন্ডার। অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতায় করেছেন ৬০৬ রান। গড় ৮৬.৫৭। তার সবচেয়ে কম রানের ইনিংসটাও ৪১ রানের। কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের এক আসরে করা ৭টি হাফসেঞ্চিুর রেকর্ড স্পর্শ করেছেন সাকিব। বল টেম্পারিং কাণ্ডে স্টিভ স্মিথ নিষেধাজ্ঞায় পড়ার পর হঠাৎ দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব পান ফিঞ্চ। আর নেতৃত্বই যেন বদলে দেয় তাকে। শুরুর দিকে কিছুটা মলিন থাকলেও পরে দারুণ ছন্দে চলে আসেন তিনি। ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন বিশ্বকাপেও। অস্ট্রেলিয়াকে প্রায় প্রতি ম্যাচেই উড়ন্ত সূচনা এনে দিচ্ছেন। এর মধ্যে ৫৬.৩৩ গড়ে করেছেন ৫০৭ রান। করেছেন ২টি সেঞ্চুরি ও ৩টি হাফসেঞ্চুরি। চার ছক্কার ফুলঝুরি না ছুটিয়েও যে ধারাবাহিকভাবে বড় স্কোর করা যায় তা অনেক আগ থেকেই দেখিয়ে এসেছেন জো রুট। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের টপ অর্ডারে নিয়মিত ভালো খেলে ৯ ইনিংসে করেছেন ৫০০ রান। গড় ৬২.৫০। স্ট্রাইক রেট ৯১.৭৪।
বোলিংয়ে আলো কেড়েছেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্ক। গ্রুপ পর্বের নয় ম্যাচেই কিংবদন্তি গ্লেন ম্যাকগ্রাকে ধরে ফেলেছেন তিনি। স্বদেশী ম্যাকগ্রা যে কীর্তি গড়তে ম্যাচ খেলেছেন ১১, সেখানে ৯ ম্যাচেই ২৬ উইকেট ঝুলিতে ভরেছেন স্টার্ক। দুইবার করে চার ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন তিনি। শুরুর দিকে ততটা বিধ্বংসী ছিলেন না। টুর্নামেন্ট যত গড়িয়েছে ততো বোলিংয়ে ধার বেড়েছে মোস্তাফিজুর রহমানের। শেষ দুই ম্যাচে পেয়েছেন পাঁচ উইকেট করে। এর আগ ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন অস্ট্রেলীয় পেসার গ্যারি গিলমোর। সবমিলিয়ে ২০টি উইকেট নিয়েছেন কাটার মাস্টার। তবে কিছুটা খরুচে ছিলেন তিনি। ওভার প্রতি রান দিয়েছেন ৬.৭০ করে। শুরু থেকেই দারুণ ধারাবাহিকভাবে বোলিং করে গেছেন লোকি ফার্গুসন। নিউজিল্যান্ডের বোলিং নেতৃত্বই দিয়েছেন এ তরুণ। ৭ ম্যাচ খেলে ১৮.৫৮ গড়ে পেয়েছেন ১৭ উইকেট। ওভার প্রতি রানও দিয়েছেন পাঁচের কম। অনেক দিন থেকেই ওয়ানডেতে বিশ্বের সেরা বোলার জসপ্রিত বুমরাহ। বিশ্বকাপেও সে ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন তিনি। ফার্গুসনের সমান ১৭টি উইকেট পেয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপ দলে শুরুতে ছিলেন না মোহাম্মদ আমির। নানা নাটকীয়তার পর হুট করেই দলে জায়গা পান পাকিস্তানের এই পেসার। দুর্দান্ত বোলিং করে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের পথেই রেখেছিলেন দলকে। দল সেমিফাইনালে খেলতে না পারলেও ২১.০৫ গড়ে ১৭টি উইকেট নিয়ে নিজের জাত আবারো চিনিয়েছেন তিনি। ১৭টি উইকেট নিয়েছেন ইংল্যান্ডের জোফরা আর্চারও। তিনিও শুরুতে বিশ্বকাপ দলে ছিলেন না। তবে সবাইকে ছাপিয়ে নজর কেড়েছেন পাকিস্তানের তরুণ পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। মাত্র পাঁচ ম্যাচেই পেয়েছেন ১৬ উইকেট। গড়েও সবার সেরা। ১৪.৬২ গড়ে এ উইকেট নিয়েছেন এ ১৯ বছর বয়সী তরুণ।
বিশ্বকাপের সেরা পাঁচ ইনিংস
ব্যাটসম্যান রান বল ৪/৬ প্রতিপক্ষ
ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া) ১৬৬ ১৪৭ ১৪/৫ বাংলাদেশ
জেসন রয় (ইংল্যান্ড) ১৫৩ ১২১ ১৪/৫ বাংলাদেশ
অ্যারন ফিঞ্চ (অস্ট্রেলিয়া) ১৫৩ ১৩২ ১৫/৫ শ্রীলঙ্কা
এউইন মরগান (ইংল্যান্ড) ১৪৮ ৭১ ৪/১৭ আফগানিস্তান
কেন উইলিয়ামসন (নিউজিল্যান্ড) ১৪৮ ১৫১ ১৪/১ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
সেরা ৫ বোলিং ফিগার
বোলার ওভার রান উইকেট প্রতিপক্ষ
শাহিন আফ্রিদি (পাকিস্তান) ৯.১ ৩৬ ৬ বাংলাদেশ
মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া) ৯.৪ ২৬ ৫ নিউজিল্যান্ড
সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ) ১০ ২৯ ৫ আফগানিস্তান
মোহাম্মদ আমির (পাকিস্তান) ১০ ৩০ ৫ অস্ট্রেলিয়া
জেমস নিশাম (নিউজিল্যান্ড) ১০ ৩১ ৫ আফগানিস্তান
সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যান
ব্যাটসম্যান ম্যাচ রান সর্বোচ্চ ১০০/৫০ গড়
রোহিত শর্মা (ভারত) ৮ ৬৪৭ ১৪০ ৫/১ ৯২.৪২
ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া) ৯ ৬৩৮ ১৬৬ ৩/৩ ৭৯.৭৫
সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ) ৮ ৬০৬ ১২৪* ২/৫ ৮৬.৫৭
অ্যারন ফিঞ্চ(অস্ট্রেলিয়া) ৯ ৫০৭ ১৫৩ ২/৩ ৫৬.৩৩
জো রুট(ইংল্যান্ড) ৯ ৫০০ ১০৭ ২/৩ ৬২.৫০
সেরা পাঁচ বোলার
বোলার ম্যাচ উইকেট সেরা ইকো.
মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া) ৯ ২৬ ৫/২৬ ৫.১৮
মোস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ) ৮ ২০ ৫/৫৯ ৬.৭০
লকি ফার্গুসন (নিউজিল্যান্ড) ৭ ১৭ ৪/৩৭ ৪.৯৬
জসপ্রিত বুমরাহ (ভারত) ৮ ১৭ ৪/৫৫ ৪.৪৮
মোহাম্মদ আমির (পাকিস্তান) ৮ ১৭ ৫/৩০ ৪.৯০