× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ম্যানচেস্টারে নেই শুধু ‘বাংলাদেশ’

বাংলাদেশ কর্নার

ইশতিয়াক পারভেজ, ম্যানচেস্টার থেকে
৯ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার

ইংল্যান্ড সময় রাত ১২টার পর ম্যানচেষ্টারে পা রাখলাম। শনিবারের উৎসবের রাত তাই জেগে আছে গোটা শহর। রাস্তার দুই পাশে গলিতে গলিতে আর পাবে পাবে চলছে পার্টি, উত্তাল নাচ। সেখানে যোগ দিয়েছেন বিপুল সংখ্যক ভারতীয় ও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের ভক্ত। কারণ এখানেই দুই দল মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে এমন দৃশ্য দেখতে দেখতেই ট্যাক্সি চলে এলো। গাড়িতে উঠতেই প্রশ্ন- ‘বাংলাদেশ দলতো চলে গেছে আপনারা এখানে কেন!’ বিষণ্নভাবেই উত্তরটা দিতে হলো চালককে। তারও বেশ মন খারাপ।
বলেন, ‘ম্যানচেস্টারে সব পাবেন বাংলাদেশ ছাড়া। তারা ভালো খেলেছে তবে এই পর্যন্ত আসতে পারলো না।’ এক সময় বাংলাদেশে নাটক বানাতেন এখন পরিচালনার কাজটা ইংল্যান্ডেই করেন জিএম ফারুক। যাই হোক ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ভারত ও নিউজিল্যান্ড। হিসেব সব ঠিক থাকলে চতুর্থ দল হিসেবে এই মাঠেই সেমিফাইনাল খেলতে আসতো টাইগাররা। কিন্তু গোটা বাংলাদেশকে বিষণ্নতায় ডুবিয়ে দেশে ফিরে গেছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। তাই আজ এই শহরে বিশ্বকাপের সব আয়োজন থাকলেও নেই শুধু বাংলাদেশ।
ম্যানচেস্টার ইংল্যান্ডের তৃতীয় বৃহৎ শহর। এখানে ফুটবলটা বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও এই ম্যানেচেস্টারের ভক্তকূলের শেষ নেই। এখানে আছে ইংলিশদের সবচয়ে বড় ন্যাশনাল ফুটবল মিউজিয়াম। বলতে পারেন ফুটবলের শহরে ব্যতিক্রম গৌরভ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে  ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্রিকেট মাঠ। ১৮৫৭ সালে এ মাঠের উদ্বোধন হয়। তখন এটি ম্যানচেস্টার ক্রিকেট ক্লাবের অনুশীলন মাঠ হিসেবে থাকলেও ১৮৬৪ সাল থেকে ল্যাঙ্কাশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের নিজস্ব ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৮৮৪ সালে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় অ্যাশেজের প্রথম  টেস্ট। তাই এ মাঠ আলাদা একটি জায়গা করে নিয়েছে ইংলিশ ক্রিকেটে। এই ওল্ড ট্রাফোর্ডের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত হতে পারতো বাংলাদেশের নামও। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেটি হয়নি। ম্যানেচেস্টার শহরটাই যেন পাকিস্তানের নাগরিকদের দখলে। গাড়ি চালক থেকে শুরু করে খাবার দোকান এমনকি বাজার যেখানেই যাবেন সবাই পাকিস্তানি। রোববার এমন অনেক প্রবাসী পাকিস্তানির সঙ্গে দেখা। সেখানেও আলোচনায় বাংলাদেশ। এক বাক্যে প্রায় প্রত্যেক পাকিস্তানি নাগরিকের মুখে বাংলাদেশ দলের প্রসংশা। টাইগারদের বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার কষ্ট তাদের পোড়াচ্ছে। কিন্তু নিজদেশ নিয়ে বেশ উত্তেজিত। এই বাদ পড়াকে দেখছেন দলটির জন্য শিক্ষা হিসেবে।
বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য রচনা শুরু হয়েছে এই বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হার দিয়েই। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে তারা যে জয় পেয়েছিল। মেলেছিল স্বপ্নের ডানা। কিন্তু পরের ম্যাচেই নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে হেরে হঠাৎ ছন্দপতন। তারপরও দুটি জয় পেয়ে  বেঁচে ছিল আশা। ভারতকে হারাতে পারলে সেই স্বপ্নের অনেকটা কাছে যেতে পারতো টাইগাররা। কিন্তু বার্মিংহামে ভারতের বিপক্ষে ৩১৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে হেরে যায় মাত্র ২৮ রানে।  সেই দুই দলই এখন প্রথম সেমিফাইনাল খেলতে নামছে বাংলাদেশের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিয়ে। তবে নিউজিল্যান্ড ও ভারত দুটি ম্যাচেই হারের অন্যতম কারণ ফিল্ডিং ব্যর্থতা। গোটা ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জুড়েই এই ফিল্ডিং ব্যর্থতা বাংলাদেশ দলের অন্যতম দুর্বলতা ছিল। যা শেষ পর্যন্ত আসর থেকে ছিটকে পড়ার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও বোলিংটাও  ছিল যাচ্ছে তাই। বাংলাদেশ দলের অন্যতম কান্ডারি সাকিব আল হাসান ধারাবাহিক না হলে ব্যাটিংয়েও হতে পারতো বিপর্যয়। ব্যাট হাতে ৬০৬ রান আর ১১ উইকেট নিয়েছেন সাকিব একাই। এমন পারফরম্যান্সের পরও দল পৌঁছাতে পারেনি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে তাই তিনি ছিলেন দারুণ বিষন্ন।
দল দেশে ফিরে গেলেও সাকিব রয়েছেন ইংল্যান্ডে। এখান থেকে হয়তো পরিবার নিয়ে বেড়াতে যাবেন ইউরোপে। তার আগে দলের ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলেছে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ জয়, পরাজয় কিংবা লড়াই- সবকিছুই আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করি। দল যখন ভালো করে না ব্যক্তিগত অর্জনের মূল্য তখন কমে যায় অনেকটাই। বিশ্বকাপ জুড়ে দলের জন্য সর্বোচ্চটা দিতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। ভালোবাসা ও দারুণ সমর্থন দিয়ে যারাই আমার পাশে ছিলেন সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। কোটি হৃদয়ের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে না পারায় স্বভাবতই হতাশ আমরা। তবে মনে রাখবেন আপনাদের স্বপ্নটাই আমাদের স্বপ্ন। আমরা নিজেদের সেরাটা দিয়ে জাতিকে গর্বের উপলক্ষ এনে দেয়ার চেষ্টা করেছি। কথা দিচ্ছি, জয়ের জন্য ভবিষ্যতেও আমাদের চেষ্টা থাকবে অব্যাহত। আশা করছি দারুণ পারফরম্যান্সে স্বপ্ন সত্যি করে সেদিন ঠিকই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো আমরা।’
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর