রাজকীয় ফাইনাল। কে যাবে? ভারত নাকি নিউজিল্যান্ড? রিজার্ভ ডেতে ফয়সালা হলো। ভারত পারলো না। কিউইদের ছুঁড়ে দেয়া ২৪০ রানের লক্ষ্য টপকাতে গিয়ে কোহলিরা থেমে গেলেন ২২১ রানে।
টানটান উত্তেজনার ম্যাচে হেনরি, বোল্ট আর স্যান্টারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পাওয়া ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডার ভেঙে চুরমার। রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলিদের মতো বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানরা যেন ভুলেই গিয়েছিলেন ব্যাট চালানো। ইনিংস শুরু করার আগেই শেষ। তিন ব্যাটসম্যানের নামের পাশেই যোগ হলো মাত্র একরান।
পুরো বিশ্বকাপে রানের বন্যায় ভাসানো টিম ইন্ডিয়াকে যেন আজ চেনাই যাচ্ছিলো না। টপ অর্ডারের তিনজনের বিদায়ের পরও কেউ হাল ধরতে পারেননি। বিপদের সময় দলের কান্ডারির ভূমিকায় থাকা দিনেশ কার্তিকও মাত্র ৬ রানে ফিরেছেন সাজঘরে। তবে হেনরি, বোল্টদের উত্তাপ ছড়ানো বোলিং কিছুটা পোষ মানিয়েছেন ঋশব পান্ত ও হার্দিক পান্ডিয়া। দুজন কিছুটা পথ এগুলেও আবার স্যান্টারের স্পিনর জাদুতে ধরা পড়েন তারা। ভারত শিবিরে যে স্বস্তিটা ফিরে এসেছিলো পর পর দুই উইকেট পতনে ফের বিপর্যয়ে পড়ে।
অবশ্য এখান থেকেই আবার দলের হাল ধরেন ক্যাপ্টেন কুল খ্যাত মহেন্দ্র সিং ধোনি। তার সঙ্গী রবীন্দ্র জাদেজা। দুজন মিলে জুটি গড়েন শতরানের। এতেই আশায় বুকবাঁধেন ভারতীয় সমর্থকরা। ২০১১ সালের পর আবার ফাইনালে যাবে টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু হঠাৎ জাদেজার বিদায়। ট্রেন্ট বোল্টের বলে নিউজিল্যান্ড কাপ্তান উইলিয়ামসনকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। যাওয়ার আগে দলের জন্য লড়াকু সংগ্রহ। জাদেজা করেন ৫৯ বলে ৭৭ রান।
তবে এখানেই আশা শেষ হয়ে যায়নি। ৪৭ ম্যাচে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্রিজে টিকে থেকে ধোনি ভারতকে ৪৫ ম্যাচে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেছেন। তবে আজ হয়তো দিনটি কোহলিদের ছিল না। গাপটিলের এক অসাধারণ থ্রোতে ৫০ রান করা ক্যাপ্টেন কুল ধোনি সাজঘরে ফিরে যান। এখানেই ভারতে সব আশা-ভরসা শেষ। বিশ্বকাপ মঞ্চে বাজে ভারতের বিদায়ের ঘন্টা। পুরো বিশ্বকাপ কাঁপানো ভারতকে হারতে হলো ১৮ রানে। আর টানা দ্বিতীয়বারের মতো স্বপ্নের ফাইনালের দেখা পেল নিউজিল্যান্ড। দলের পক্ষে ম্যাট হেনরি সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান। এছাড়া স্যান্টার ও ট্রেন্ট বোল্ট পেয়েছেন ২টি করে উইকেট। অন্যদিকে একটি করে উইকেটের দেখা পান ফার্গুসন ও জিমি নিশাম।
এর আগে গতকাল ৪৬ ওভার ১ বল খেলা হবার পর শুরু হয় বৃষ্টি। তখন নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ছিলো ৫ উইকেট হারিয়ে ২১১। এরপর আজ বাকি ইনিংসে ব্যাট করে ২৪০ রানের টার্গেট দাঁড় করায় তারা।
ম্যাচের শুরুতে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় নিউজিল্যান্ড। ১ রানেই নেই এক উইকেট। বুমরাহ, ভুবেনশ্বরের টাইট বোলিং। কিছুতেই স্বস্তি পাননি ওল্ড ট্রাফোর্ডে সেমি ফাইনাল খেলতে নামা নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। গাপটিলের বিদায়ে যেন স্থবির হয়ে যায় ব্ল্যাকক্যাপসদের ব্যাটিং অর্ডার। রানখরা পিছুই ছাড়েনি। এক, দুই রান করে দলীয় সংগ্রহ বাড়ান কাপ্তান উইলিয়ামসন। তবে সেটা খুবই ধীরগতিতে। অর্ধশতক পূর্ণ করে তিনিও সাজঘরে ফেরেন। এতে আরো চাপ বেড়ে যায়। ভারতীয় বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে কিউইরা ১৫০ রান পূর্ণ করেন ৪০ ওভারে। শেষ পর্যন্ত রস টেইলরের ৭৪ ও কেন উইলিয়ামসনের ৬৭ রানে ভর করে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৩৯ রান করে তারা। ভুবেনশ্বর কুমার ৩৬ টি ও ১টি করে উইকেট পান বুমরাহ, হার্দিক পান্ডিয়া, যুজবেন্দ্র চাহাল, রবীন্দ্র জাদেজা।
বিশ্বকাপে ভারত এর আগে ফাইনাল খেলেছে ৩ বার। ৩ বারের ফাইনালে কাপ জয় করেছে ২ বার। ১৯৮৩ ও ২০১১ সালে চ্যাম্পিয়ন হবার পাশাপাশি রানার্সআপ হয় ২০০৩ বিশ্বকাপে। তাদের সামনে ছিল চতুর্থ ফাইনাল খেলার হাতছানি।
আর নিউজিল্যান্ড ফাইনাল খেলেছে মাত্র ১ বার। ২০১৫ বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে তারা হয়েছিল রানার্সআপ। এবার দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালের টিকিট কাটলো নিউজিল্যান্ড।
র্যাঙ্কিংয়ে দু’দলআইসিসি’র সবশেষ র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের অবস্থান ২ নম্বরে। আর এক ধাপ পরেই কিউইরা। ভারতের রেটিং পয়েন্ট ১২৩। নিউজিল্যান্ডের ১১২।