× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

লাল দুর্গের দেয়ালে দেয়ালে সেই দুঃখ গাথা

ইংল্যান্ড থেকে

ইশতিয়াক পারভেজ,ম্যানচেষ্টার থেকে
১১ জুলাই ২০১৯, বৃহস্পতিবার

ম্যানচেস্টার এসেছেন, সবার আগে কোথায় যাবেন! এখানে কাছে কোনো সমুদ্র নেই। নেই কোনো প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান! পর্যটনের জন্য যেমনটা থাকার কথা তা নেই বললেই চলে। কিন্তু তারপরও এখানে দেশি-বিদেশিদের ভিড় কেন প্রতিদিন? ইংল্যান্ডের তৃতীয় বৃহৎ শহর বলে! ব্যবসা কেন্দ্র বলে? হ্যা, সেটাও ঠিক। কিন্তু যে কারণেই আসুক পর্যটকদের বড় একটা অংশের ভিড় একটি ফুটবল ক্লাবকে ঘিরে। ওহ! একটি বললে ভুল হবে, ‘দুটি’। ইংলিশ ফুটবলের সবচেয়ে দামি ক্লাব, বেশি ভনিতা করলে হয়তো অনেকেই রাগ করবেন। জানেনই তো, ম্যানেস্টার ইউনাইটেড ও ম্যানচেস্টার সিটি। বিশেষ করে শহরের মধ্যমনি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লাল দূর্গের প্রতি আকর্ষণটা সবচেয়ে বেশি।
হ্যা, ক্রিকেট বিশ্বকাপ কভার করতে এসে সুযোগ এলো ম্যানচেস্টার শহর ভ্রমনের। আসরে বাংলাদেশ দল নেই, তাই একটু বাড়তি সময় আছে। দ্বিধা না করেই ছুটলাম ক্রিকেটকে একপাশে সরিয়ে রেখে ফুটবলের দিকে। এই স্টেডিয়াম ওল্ড ট্রাফোর্ড ফুটবল স্টেডিয়াম নামেও পরিচিত। তবে এখন যার অন্যতম পরিচয় ‘থিয়েটার অব ড্রিম’ বলেই। তবে সেই স্বপ্নের মঞ্চের দেয়ালে দেয়ালে আছে মিউনিখের সেই বিমান দুর্ঘটনার দুঃখ গাঁথাও।
ট্যাক্সি থেকে নামতেই দেখা মিললো লাল রংয়ের স্টেডিয়ামের মাথায় জ্বলজ্বল করছে ‘ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড’। প্রবল আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু তার চেয়ে বেশি হতাশাই মিললো। কারণ টিকিট কেটেই ভিতরে যেতে হবে। ফ্রি দেখার সুযোগ নেই। মিউজিয়াম থেকে স্টেডিয়ামের ভিতরে যাওয়া যাবে সেখানে বহু ফুটবল কিংবদন্তির পদচারণা। তবে টিকিট কাটতে লাগবে ২৭ পাউন্ড যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার টাকা।  গার্ড দেখিয়ে দিলেন কোথায় টিকিট পাবো। ছুটলাম সেই দিকে। কারণ ৩ ঘন্টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। সামনে থেকে পিছনে যেতেই আরো বিস্ময় ছিল। সেখানে ‘স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন স্ট্যান্ড।’ কিন্তু আসল হতাশার সংবাদ মিললো সেখানে ভিতরে প্রবেশ করার আগেই জানা গেলো টিকিট শেষ! তাও সকাল ১১ টার আগেই। সেখানে দাঁড়ানো গার্ড বলে দিলেন, ‘আজ আর হবেনা। কাল আস, টিকিট পেতেও পার। এখানে ভিড় হবে চেষ্টা কর অনলাইনে কিনতে। আজ এখানে প্রায় পাঁচ হাজার দর্শক এসেছে। এখানে প্রতি দিন ২ থেকে ৬ হাজার দর্শক আসে। তবে আপাতত বাইরে থেকে ঘুরে দেখতে পারো।’
মন খারাপ করে পিছনে ফিরে এলাম। তবে বেশি হতাশ হতে হল না কারণ আমাদের মতো  টিকিট না পাওয়া লোকের সংখ্যাও হাজার খানেক হবে। যারা বাইরে থেকে ছবি তুলেই মন ভরে নিচ্ছে। হাঁটতে শুরু করলাম, গোটা স্টেডিয়াম ঘুরেই যাবো ঠিক করেছি। তবে একটা জায়গাতে আসতেই আটকে গেলো চোখ। মিউজিয়াম ও স্টেডিয়ামে প্রবেশে টাকা লাগলেও ক্লাব ক্রিকেটের ধনী ক্লাবটি তার ফুটবলারদের দুঃখের স্মৃতি বিক্রি করেনি। দেয়ালে দেয়ালে সাজিয়ে রেখেছে মিউনিখের সেই বিমান দুর্ঘটনার দুঃখের গল্প। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্টেডিয়াম ওল্ড ট্রাফোর্ডের গ্যালারিতে থাকা একটি ঘড়িতে সবসময় সময় দেখায় বিকেল ৩টা ৪ বেজে ৪ মিনিট। না ঘড়ি নষ্ট হয়নি, বা থেমেও যায় না। তবে এই সময়ে ১৯৫৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেমে গিয়েছিল বেশ কয়েকজন ফুটবল তারকার জীবন।
কী হয়েছিল সেই দিন! সার্বিয়ার রেড স্টার বেলগ্রেডের সঙ্গে ৩-৩ গোলে ম্যাচ ড্র করে ইউরোপিয়ান কাপ সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছিল ইউনাইটেড। এরপর ফিরছিল ঘরে। মাঝ বিরতিতে মিউনিখ বিমানবন্দরে ফুয়েল নিয়ে আবার উড়তেই বিস্ফোরিত হয় ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমানটি। বিমানে থাকা ৪৪ জনের মধ্যে মারা যান ২৩ জন, যাদের মধ্যে ছিলেন ৮ খেলোয়াড় এবং ৮ সাংবাদিক। তাদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ দিন পর মারা যান ডানকান এডওয়ার্ডস, যিনি বেঁচে থাকলে নিঃসন্দেহে হতেন ইতিহাসের সেরা ব্রিটিশ ফুটবলার - এতোটাই ভালো খেলতেন বলা হয়! প্রখ্যাত কোচ ম্যাট বাসবির সেই দলটির গড় বয়স ছিল মাত্র ২৪। প্রায় সবাই ছিলেন একাডেমি থেকে উঠে আসা তরুণ যাদের নিয়ে টানা দুবার ইংলিশ শীর্ষ লীগ জিতেছিলেন তিনি। বয়সের কারণে দলটার ডাকনামই হয়ে গিয়েছিল বাসবি বেবস। ব্রিটিশ ক্রীড়া ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হাহাকার হয়ে আছে এই দুর্ঘটনা। হ্যা, এখানে এসে সুখের সেই স্মৃতির প্রতি নোয়াতে হবে মস্তকও। যদি আরেক দিন সুযোগ মেলে টিকিট কেটে যাব যাদুঘরে হয়তো সেখান থেকে জানানো যাবে  অনেকের প্রিয় ‘ম্যানইউর গল্প।’
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর