ইংল্যান্ড ক্রিকেটের জন্মভূমি। দ্বিমত থাকলেও তর্ক করার উপকরণ খুবই কম। এখনো তারা ক্রিকেটকে লালন-পালন করছেন অতি যতনে। টেস্ট আভিজাত্যের সীমা ভেঙ্গে এখানেই শুরু হয়েছিল রঙিন আলোয় মোড়া ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। সেই ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ টানা তিনবার তারাই ছিল এই আসরের আয়োজক। কিন্তু হায়! নিজ দেশে মাত্র একবারই ফাইনাল খেলেছে ইংলিশরা। শিরোপা তাদের ঘর থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে অন্য দেশ। এরপর সুযোগ হয়েছিল সেই ট্রফি ছিনিয়ে আনার।
১৯৮৭ কলকাতায় ও ১৯৯২ অস্ট্রেলিয়াতেও ফাইনাল খেলে তারা। কিন্তু শিরোপা তাদের কাছ থেকে দূরে পালিয়েছে। প্রাপ্তি বলতে তিন বার ‘রানার্সআপ’। এরপর ২৭ বছর কেটে গেছে। ফাইনালে উঠতে পারেনি একবারও। আবারো ইংল্যান্ড ও ওয়েলস আয়োজন করেছে বিশ্বকাপ আসর। এবার নিজ মাটিতে দল খেলছে সেমিফাইনালে। আজ বার্মিংহামে তাদের প্রতিপক্ষ রেকর্ড ৫ বারের চ্যাম্পিয়ান ও তিন বারের রানার্স আপ অস্ট্রেলিয়া। এজবাস্টনে আজ অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও ইংলিশদের প্রতিপক্ষ হতে পারে বৃষ্টি। যেমনটা হয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের ম্যাচে। স্থানীয় আবহাওয়া বার্তা বলছে এখানে ২০ ভাগ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে আজ। ম্যাচের আগের দিনও আকাশ বেশ মেঘলা ছিল। তবে দুই দলই অনুশীলনটা সেরে নিয়েছে ফাইনাল মঞ্চে নিজেদের সেরাটা দিতে।
সেই ১৯৭৫ বিশ্বকাপ থেকে ইংলিশরা অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছে ৮বার। এর মধ্যে প্রথম আসরে নিজেদের মাঠ লিডসে দেখে হারের মুখ। তবে পরের বিশ্বকাপে লর্ডসে জয় পেয়েছিল ইংলিশরা। অজিদের বিপক্ষে বিশ্বকাপের আসরে ইংলিশদের শেষ জয় সেই ১৯৯২-এ। এরপর ওয়ানডে ক্রিকেটের বড় মঞ্চে তাদের শুধুই মিলেছে হতাশা। তবে এবার ইংল্যান্ড নিজেদের সেরা দল নিয়ে মাঠে নেমেছে। কিন্ত তাতেও অজিদের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের প্রথম দেখাতে নিজেদের মাঠেই হারতে হয়েছে ৬৪ রানের বড় ব্যবধানে। তবে এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে এজবাস্টনে মুখোমুখি হয়নি ইংল্যান্ড। যেখানে তাদের খেলা ৩৯ ওয়ানডের মধ্যে ২৩টিতে জয়ের রেকর্ড আছে। চলতি আসরেই যখন খাদের কিনারে চলে গিয়েছিল এউইন মরগানের দল। বাদ পড়তেই বসেছিল। ঠিক তখন এই মাঠেই ভারতকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। তাই আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ে নিজেদের সেরাটা দিতেই প্রস্তুত ইংলিশ অধিনায়ক। হারলেও নিজের দেশের মাটিতে আরো একবার মাথা নিচু করেই দেখতে হবে অন্য কোন দেশের হাতে ট্রফি।
এই লড়াইয়ে মরগানের দলের অন্যতম অস্ত্র হতে পারেন জনি বেয়ারস্টো। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনালে তুলে আনেন তিনি। আর শেষ দুই ম্যাচ যখন ইংল্যান্ডের জন্য বাঁচা-মরার লড়াইয়ে তখন জনি করেন দুটি সেঞ্চুরি। ভারতের বিপক্ষে ১১১, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৬ রান। অন্যদিকে এর আগে এর আগে পাকিস্তানের সাথে ৩২, শ্রীলঙ্কার সাঙ্গে ০ এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৭ আউট হয়েছিলেন বেযারস্টো। এই তিন ম্যাচেই হারে ইংল্যান্ড। আবার বাংলাদেশের সাথে ৫১, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ৪৫ ও আফগানিস্তানের সাথে তার রান ৯০ করে। সেই তিন ম্যাচও জিতে তার দল। তাই আজও বেয়ারস্টোকে নিজের সেরটা দিতে হবে দেশের স্বপ্ন রক্ষা করতে।
অন্যদিকে টিম অস্ট্রেলিয়াতে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হতে পারেন অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিওয়ার্নার। প্রশ্ন ছিল এটা ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথ যখন ফিরে আসবেন তখন কীভাবে সামলাবেন ফিঞ্চ। দুই ওপেনার মিলে এক হাজারেরও বেশি রান তুলেছেন এই বিশ্বকাপে। ৯ ম্যাচের ৭টিতে এসেছে জয়। ১৪ পয়েন্ট নিয়ে নিশ্চিত করেছে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। এসব ক্ষেত্রেই মাঠে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ফিঞ্চ। ডেভিড ওয়ার্নার ৩টি সেঞ্চুরি করে ব্যাটসম্যানদের তালিকায় সেরা পাঁচে আছেন। তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন ফিঞ্চ। ১০২ স্ট্রাইক রেটে ৯ ম্যাচে ৫০৭ রান তুলেছেন তিনি। সেখানে তার ব্যাট থেকে সর্বোচ্চ এসেছে ইনিংসে ১৫৩ রান। ৬৩৮ রান করে তার উপরেই আছেন ওয়ার্নার। বলার অপেক্ষা রাখে না ইংল্যান্ডের জন্য এই দু’জন কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারেন। তবে অস্ট্রেলিয়া দলে দেখা দিয়েছে ইনজুরির হানা। শন মার্শ, উসমান খাজা ইনজুরি নিয়ে ছিটকে গেছেন আগেই। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে নিয়েও আছে শঙ্কা।