শেষের পাতা
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস আজ
জন্ম নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে গতি নেই
স্টাফ রিপোর্টার
২০১৯-০৭-১১
জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে গতি নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, গত পাঁচ (২০১৩ থেকে ২০১৭) বছরে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার বাড়েনি। প্রায় একই রকম রয়েছে। স্থবির হয়ে আছে। ব্যবহারকারীর সংখ্যাও আর বাড়ছে না। দেশের জনসংখ্যার ওপর পড়ছে এর বিরূপ প্রভাব।
১লা জানুয়ারি ২০১৮ সালে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৩৬ লাখ। বিবিএস গত বছরের জুন মাসে ‘বাংলাদেশ স্যাম্পেল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০১৭’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি প্রাক্কলিত (ইস্টিমিটেড) জনসংখ্যা। এদিকে গতকাল সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেছেন, পরিবার পরিকল্পনার তথ্য ও সেবার অপূর্ণ চাহিদার হার ১২ শতাংশ। এটাকে শূন্যের কোটায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাতে অনেক অর্জন সত্ত্বেও কায়রোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আরো এগিয়ে যেতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদের কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনটি ‘বিষয়ে বা শূন্য’ করার উপর গুরুত্ব দেন সচিব। কোনো নারী সন্তান জন্মদানকালে মারা যাবে না অর্থাৎ প্রতিরোধযোগ্য মাতৃমৃত্যুর হার শূন্য করা হবে। অপরটি হলো-মেয়ে ও নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন হায়রানির প্রবণতা বন্ধ করা।
জাতিসংঘ ২০১৫ সালের জনসংখ্যা বিষয়ক প্রজেকশন বলেছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা আগামী ২০৫০ সালে ২০২ মিলিয়ন হবে। অর্থাৎ ২০ কোটি ২০ লাখে দাঁড়াবে। দেশে পরিবার পরিকল্পনার কর্মসূচির সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন বহু দম্পতি। কালে-ভদ্রে যেটুকও পান তা আবার এনজিও কর্মীদের কাছ থেকে। অনেকে আবার টাকার অভাবেও এনজিওদের পন্থায় পরিবার পরিকল্পনার কর্মসূচি নিতে পারেন না। ফলে থমকে যেতে বসছে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি, এমনই মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী দম্পতিদের কাছে পৌঁছায় না বলে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। অনেককে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সরকারি কোন ধরনের সুবিধা না পেয়ে তারা পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারছে না বলে অভিযোগ আসছে।
সরকারের এই কর্মসূচি এখন এটা অনেকটা গৌণ কি না তাও প্রশ্ন রাখছেন অনেকে। বিজ্ঞজনেরা বলেন, পরিবার পরিকল্পনার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দানের অভাব, উপকরণ বিতরণে অপ্রতুলতা ম্লান করে দিতে পারে বাংলাদেশের এক্ষেত্রের পূর্বের অর্জনকে। তাই এখনই সতর্ক হতে হবে। সরকারি হাসপাতালের আন্তরিকতা, মাঠকর্মী বৃদ্ধি ও নতুন নীতিমালারও প্রয়োজন রয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাড়তি জনসংখ্যা কর্মসংস্থান, ভূমি, কৃষি, আবাসন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। সূত্র জানায়, বর্তমানে জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ঢিলেঢালা চলছে। এদিকে মনোযোগ নেই। পরিবার পরিকল্পনার অধিদপ্তরে কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে সম্বনয়হীতার। অধিদপ্তরে প্রশাসন ক্যাডার, পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডার ও ডাক্তারদের মধ্যে কাজের সম্বনয়ে যথেষ্ট ঘাটতি আছে বলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। অবশ্য সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাধীনতার পর থেকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। প্রজনন হার কমেছে, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হারও বেড়েছে। সেই অগ্রগতি ধরে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সাফল্য দেখাতে পেরেছিল জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীর ব্যবহার (কন্ট্রাসেপটিভ প্রিভিলেন্স রেট-সিপিআর) বাড়ানোর মধ্য দিয়ে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৫ সালে সক্ষম দম্পতি প্রায় ৮ শতাংশ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতেন। প্রতি দশকে এর ব্যবহার বেড়েছে। ২০০০ সালে এই হার বেড়ে ৫৪ শতাংশে দাঁড়ায়। এরপরের ১০ বছরে গতি অনেকটা শ্লথ হয়ে পড়ে। ২০১১ সালে এর হার ছিল ৬১ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১২ সালে ছিল ৬২ দশমিক ২ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ছিল ৬২ দশমিক ৩। বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছ, গত পাঁচ বছরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার তেমন বাড়েনি। প্রায় একই রকম রয়েছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী শহর অঞ্চলের(৬৬ দশমিক ৩ শতাংশ) মহিলারা গ্রামাঞ্চলের (৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ) মহিলাদের চেয়ে বেশি হারে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের সঙ্গে মোট প্রজনন হারের ( টোটাল ফার্টিলিটি রেট-টিএফআর) সম্পর্ক সরাসরি। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারী যত সন্তানের জন্ম দেন, সেটাই টিএফআর। ১৯৭৫ সালে নারীরা মোট ছয়টির বেশি সন্তানের জন্ম দিতেন (টিএফআর ছিল ৬ দশমিক ৩)। ২০০১ সালের দিকে এই সংখ্যা ছিল ৩। বর্তমানে টিএফআর ২ দশমিক শূন্য ৫। অর্থাৎ গড়ে একজন নারী দুজন করে সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন। ২০১৬ সালের মোট প্রজনন হার ২০১১ সালের মোট প্রজনন হারের (২ দশমিক ১১) থেকে সামান্য কম। প্রজননের সবগুলো পরিমাপ তুলনা করলে দেখা গেছে, সমপ্রতি বছরগুলোতে বাংলাদেশের জন্মের হার ২ দশমিক ১ এর কাছাকাছি। অনেকটা স্থির অবস্থায় আছে।
দেশের জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পপুলেশন সারয়ন্সেস বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী বলেন, পরিবার পরিকল্পনায়ও ডিজিটাল কর্মসূচি নিতে হবে। এনালগ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে হবে না। অর্থাৎ পুরানো ধাচের কর্মসূচি দিয়ে পরিবার পরিকল্পনা চলবে না। ইনোভেটিব এপ্রোচ লাগবে পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে। এখন চিন্তা ও দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। এখনকার প্রজন্ম ফেইসবুক ব্যবহার করে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। আগে বিটিভি ও বেতরের মাধ্যমে এই বিষয়ে প্রচার হত। তিনি বলেন, সমস্যা সব জায়গায় আছে। সরকারের সম্পদ যথেষ্ট নয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাফল্যও আছে বলে এই বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেন। দেশে শিক্ষার হার, অর্থনৈতিক অবস্থা, নারীর ক্ষমতায় এসব ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি চলছে সনাতন পদ্ধতিতে। এই কর্মসূচি এখন আর মানুষকে আকর্ষণ করে না। অনুসন্ধানে দেখা যায়, অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার প্রবণতা বেশি। ফলে, নারী সন্তান ধারণে দীর্ঘ প্রজননকাল পাচ্ছে। বেশি সন্তান জন্মদানের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। আঠারো বছরের আগেই ৭৩ শতাংশ মেয়ের বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশে। যা পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে বেশি। সমাজের প্রচলিত প্রথা ও ধারণার কারণে অনেক মেয়ে শিশু বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে বলে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের গবেষণায় উঠে এসেছে।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ১১ই জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন করা হবে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে-‘জনসংখ্যা ও উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ২৫ বছর:প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন।’
১লা জানুয়ারি ২০১৮ সালে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৩৬ লাখ। বিবিএস গত বছরের জুন মাসে ‘বাংলাদেশ স্যাম্পেল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০১৭’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি প্রাক্কলিত (ইস্টিমিটেড) জনসংখ্যা। এদিকে গতকাল সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেছেন, পরিবার পরিকল্পনার তথ্য ও সেবার অপূর্ণ চাহিদার হার ১২ শতাংশ। এটাকে শূন্যের কোটায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাতে অনেক অর্জন সত্ত্বেও কায়রোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আরো এগিয়ে যেতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদের কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনটি ‘বিষয়ে বা শূন্য’ করার উপর গুরুত্ব দেন সচিব। কোনো নারী সন্তান জন্মদানকালে মারা যাবে না অর্থাৎ প্রতিরোধযোগ্য মাতৃমৃত্যুর হার শূন্য করা হবে। অপরটি হলো-মেয়ে ও নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন হায়রানির প্রবণতা বন্ধ করা।
জাতিসংঘ ২০১৫ সালের জনসংখ্যা বিষয়ক প্রজেকশন বলেছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা আগামী ২০৫০ সালে ২০২ মিলিয়ন হবে। অর্থাৎ ২০ কোটি ২০ লাখে দাঁড়াবে। দেশে পরিবার পরিকল্পনার কর্মসূচির সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন বহু দম্পতি। কালে-ভদ্রে যেটুকও পান তা আবার এনজিও কর্মীদের কাছ থেকে। অনেকে আবার টাকার অভাবেও এনজিওদের পন্থায় পরিবার পরিকল্পনার কর্মসূচি নিতে পারেন না। ফলে থমকে যেতে বসছে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি, এমনই মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী দম্পতিদের কাছে পৌঁছায় না বলে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। অনেককে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সরকারি কোন ধরনের সুবিধা না পেয়ে তারা পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারছে না বলে অভিযোগ আসছে।
সরকারের এই কর্মসূচি এখন এটা অনেকটা গৌণ কি না তাও প্রশ্ন রাখছেন অনেকে। বিজ্ঞজনেরা বলেন, পরিবার পরিকল্পনার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দানের অভাব, উপকরণ বিতরণে অপ্রতুলতা ম্লান করে দিতে পারে বাংলাদেশের এক্ষেত্রের পূর্বের অর্জনকে। তাই এখনই সতর্ক হতে হবে। সরকারি হাসপাতালের আন্তরিকতা, মাঠকর্মী বৃদ্ধি ও নতুন নীতিমালারও প্রয়োজন রয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাড়তি জনসংখ্যা কর্মসংস্থান, ভূমি, কৃষি, আবাসন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। সূত্র জানায়, বর্তমানে জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ঢিলেঢালা চলছে। এদিকে মনোযোগ নেই। পরিবার পরিকল্পনার অধিদপ্তরে কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে সম্বনয়হীতার। অধিদপ্তরে প্রশাসন ক্যাডার, পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডার ও ডাক্তারদের মধ্যে কাজের সম্বনয়ে যথেষ্ট ঘাটতি আছে বলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। অবশ্য সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাধীনতার পর থেকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। প্রজনন হার কমেছে, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হারও বেড়েছে। সেই অগ্রগতি ধরে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সাফল্য দেখাতে পেরেছিল জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীর ব্যবহার (কন্ট্রাসেপটিভ প্রিভিলেন্স রেট-সিপিআর) বাড়ানোর মধ্য দিয়ে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৫ সালে সক্ষম দম্পতি প্রায় ৮ শতাংশ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতেন। প্রতি দশকে এর ব্যবহার বেড়েছে। ২০০০ সালে এই হার বেড়ে ৫৪ শতাংশে দাঁড়ায়। এরপরের ১০ বছরে গতি অনেকটা শ্লথ হয়ে পড়ে। ২০১১ সালে এর হার ছিল ৬১ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১২ সালে ছিল ৬২ দশমিক ২ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ছিল ৬২ দশমিক ৩। বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছ, গত পাঁচ বছরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার তেমন বাড়েনি। প্রায় একই রকম রয়েছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী শহর অঞ্চলের(৬৬ দশমিক ৩ শতাংশ) মহিলারা গ্রামাঞ্চলের (৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ) মহিলাদের চেয়ে বেশি হারে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের সঙ্গে মোট প্রজনন হারের ( টোটাল ফার্টিলিটি রেট-টিএফআর) সম্পর্ক সরাসরি। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারী যত সন্তানের জন্ম দেন, সেটাই টিএফআর। ১৯৭৫ সালে নারীরা মোট ছয়টির বেশি সন্তানের জন্ম দিতেন (টিএফআর ছিল ৬ দশমিক ৩)। ২০০১ সালের দিকে এই সংখ্যা ছিল ৩। বর্তমানে টিএফআর ২ দশমিক শূন্য ৫। অর্থাৎ গড়ে একজন নারী দুজন করে সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন। ২০১৬ সালের মোট প্রজনন হার ২০১১ সালের মোট প্রজনন হারের (২ দশমিক ১১) থেকে সামান্য কম। প্রজননের সবগুলো পরিমাপ তুলনা করলে দেখা গেছে, সমপ্রতি বছরগুলোতে বাংলাদেশের জন্মের হার ২ দশমিক ১ এর কাছাকাছি। অনেকটা স্থির অবস্থায় আছে।
দেশের জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পপুলেশন সারয়ন্সেস বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী বলেন, পরিবার পরিকল্পনায়ও ডিজিটাল কর্মসূচি নিতে হবে। এনালগ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে হবে না। অর্থাৎ পুরানো ধাচের কর্মসূচি দিয়ে পরিবার পরিকল্পনা চলবে না। ইনোভেটিব এপ্রোচ লাগবে পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে। এখন চিন্তা ও দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। এখনকার প্রজন্ম ফেইসবুক ব্যবহার করে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। আগে বিটিভি ও বেতরের মাধ্যমে এই বিষয়ে প্রচার হত। তিনি বলেন, সমস্যা সব জায়গায় আছে। সরকারের সম্পদ যথেষ্ট নয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাফল্যও আছে বলে এই বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেন। দেশে শিক্ষার হার, অর্থনৈতিক অবস্থা, নারীর ক্ষমতায় এসব ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি চলছে সনাতন পদ্ধতিতে। এই কর্মসূচি এখন আর মানুষকে আকর্ষণ করে না। অনুসন্ধানে দেখা যায়, অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার প্রবণতা বেশি। ফলে, নারী সন্তান ধারণে দীর্ঘ প্রজননকাল পাচ্ছে। বেশি সন্তান জন্মদানের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। আঠারো বছরের আগেই ৭৩ শতাংশ মেয়ের বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশে। যা পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে বেশি। সমাজের প্রচলিত প্রথা ও ধারণার কারণে অনেক মেয়ে শিশু বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে বলে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের গবেষণায় উঠে এসেছে।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ১১ই জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন করা হবে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে-‘জনসংখ্যা ও উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ২৫ বছর:প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন।’