১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের প্রান্তে বল পেয়ে বিদ্যুৎ গতিতে ছুটতে শুরু করলেন দিয়াগো ম্যারাডোনা। ছুটতে ছুটতেই দেখালেন কিছু ড্রিবলিংয়ের ভেলকি। চার ইংলিশ ফুটবলারকে বোকা বানিয়ে, গোলরক্ষককেও ফাঁকি দিয়ে বল পাঠালেন জালে। তার অবিশ্বাস্য গোলই ছিল সেই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিদায় বাঁশি। এটি যা পরে শতাব্দী সেরা বিশ্বকাপ গোলের মর্যাদা পেয়েছে। ইংলিশরা অবশ্য ‘হ্যান্ড অফ গড’, অর্থাৎ হাত দিয়ে করা বিতর্কিত গোলটির কথাই বেশি মনে রাখতে চায়। হয়তো এই কারণেই তাদের ম্যারাডোনার সেই জার্সিটি ক্ষতের চিহ্ন হিসেবে রেখে দিয়েছে জাদুঘরে। হ্যাঁ, ‘ম্যানচেস্টারের ন্যাশনাল মিউজিয়াম’ যেখানে কাচের দেয়ালে বন্দি করে রাখা এটি।
প্রবেশের পর যখন ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম তখন এগিয়ে এলেন জাদুঘরের গাইড ক্যাটি জোস। মিস্টি হেসে বললেন, ‘তুমি কি আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিনিস দেখতে চাও! জানো এখানে কি আছে? এই দেখ এটি মেরাডোনার সেই জার্সি। বলতে পারবে কোনটি? যে গোল নিয়ে কত বিতর্ক হয়েছে, জানোতো ‘হ্যান্ড অফ গড’।’ ঘটনা জানি বলতেই যেন ভিষণ খুশি হলেন। এরপর একে একে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলেন ফুটবলের আরেক মহা তারকা পেলের জার্সি, পাসপোর্ট। শুধু কি তাই ইংল্যান্ডের প্রথম জার্সি যেটি দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের পাঞ্জাবির মত, চ্যাম্পিয়ান্স লীগ ও এফ এ কাপের প্রথম ট্রফি ছাড়াও ইংলিশ ফুটবলের আরো কতকি! মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখতে দেখতে কেটে গেল ২ ঘন্টা। সেই সঙ্গে মনে মনে প্রশ্ন নিয়ে বের হলাম- ‘বাংলাদেশ ফুটবলের প্রথম সব কোথায় দেখতে পাব! কোন দিন পাব কি?
ম্যারাডোনার সেই গোল নিয়ে ইংলিশদের মধ্যে এখনো কতটা ক্ষোভ তা স্পষ্ট করেই জানা গেল জাদুঘরের দুই কিউরেটরের উজ্জেতি কথা শুনে। কিন্তু একটা বারও ফুটবলের কিংবদন্তিকে নিয়ে অসম্মান দেখালেন না। কিভাবে এই জার্সি এখানে জানতে চাইলে হাসে জানালেন, ‘ম্যারাডোনাই দিয়ে গেছে, জার্সি বদলের সময়। সত্যি কথা জান? তার মত ফুটবলার এসেছে বলেই ফুটবল এতটা এগিয়েছে। তারা আছে বলেই ফুটবল এত রঙিন।’ কিছু দিন আগে ম্যারাডোনা ইংলিশ ফুটবলের দামি ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ হতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘যদি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচের দরকার হয়, আমিই হতে পারি সেই লোক।’ আবার শিরোপা নিয়ে খোঁচা দিতেও ছাড়েননি। বলেন, ‘জানি ওরা বিশ্বজুড়ে অনেক জার্সি-টার্সি বিক্রি করে, তবে ওদের শিরোপাও জেতা দরকার। আমি ওদের জন্য সেটা করে দিতে পারি।’ এখন অবশ্য তিনি ইউনাইটেড ছেড়ে সিটির সমর্থক বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। তার এই দাবি নিশ্চিত ভাবে খুশি করতে পারেনি ইংলিশ ফুবলের ভক্তদের।
‘পেলে এত ছোট!’
ম্যারাডোন পর্ব শেষ হতে ক্যাটি নিয়ে গেলেন হলুদ একটি জার্সির দিকে। বলতো এটি কার? বলেই নিজেই বলতে শুরু করলেন, ‘এটি পেলের জার্সি। ভাবছন এত ছোট কেন? ১৯৫০ সালে ফুটবল বিশ্বকাপে ফাইনালে ব্রাজিল যখন উরুগুয়ের সঙ্গে হেরে যায় পেলে তখন তার বাবাকে বলেছিল দেখ আমি একদিন ট্রফি এনে দেব। ১৭ বছর বয়সে ১৯৫৮’ বিশ্বকাপে ঠিক সুইডেনকে ৫-২ এ হারিয়ে পেলে তার কথা রাখে। মাত্র ১৭’ বছর বয়সে পেলের শারীরক গড়নটা এমনই ছিল, বাচ্চাদের মতো। এই জার্সি পরেই সেই বিশ্বকাপে দলকে জিতিয়েছিল ফুটবলের এই মহা তারকা।’ জার্সির নিচেই রাখা আছে পেলের একটি হাতে লেখা পাসপোর্ট।’
চ্যাম্পিয়ন্স লীগের প্রথম ট্রফি ‘লেডি’
ফুটবল জাদুঘরের ঠিক মধ্যমণি হয়ে আছে অনেকগুলো ট্রফি। সে দিকে দেখিয়ে ক্যাটি বললেন, ‘এই গুলো ইংলিশ ফুবলের সম্পদ।’ বলেই নিয়ে গেলে বড় একটি ট্রফির সামনে। জানালেন, ‘এটিই সেই ‘লেডি’ যার পিছনে ১৮৯১ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত ইংলিশ ক্লাবের ফুটবলাররা লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন যাকে পাওয়ার জন্য।’ হ্যা, ট্রফির মাথায় একটি নারী মূর্তি থাকার কারণেই এই ট্রফির নাম ছিল লেডি।’ অবশ্য ১৯৯২ এর পর এই লেডিকে আর কোন ফুটবলারই ছিনিয়ে নিতে পারেনি লিভারপুলের কাছ থেকে। যা এখন জাদুঘরের শোভা হয়ে আছে।’ এছাড়াও জাদুঘরে প্রবেশ পথেই রাখা হয়েছে এফএকাপের ট্রফিটি। যার মালিক এখন ম্যানচেস্টার সিটি। এছাড়াও আছে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত এফএকাপের প্রথম ট্রফিও।
ইংল্যান্ডের প্রথম জার্সি যেন পাঞ্জাবি
এবার তোমাকে দুটি মজার জার্সি দেখাবো, হেসো না কিন্তু বলেই ক্যাটি নিয়ে গেলেন একটি কাচের ঘেরা ঘরের সামনে। বলেন, একটি পাঞ্জাবির বা ফতুয়ার মত পোশাক দেখিয়ে বলেন, ‘বলতে পার এটি কি? এটি আসলে ইংল্যান্ডর প্রথম জার্সি। এতটা এশিয়ানদের পোশাকের মত দেখতে।’ এরপরই নিয়ে গেলেন আরেকটি জার্সির দিকে। বলেন, ‘বলতো এটি হল ম্যানচেস্টার ইউনাইডের জার্সি। ভাবছ লাল গেল কই? আসলে এটি ছিল একেবারেই প্রথম দিকের।’