ভারত দল সেমিফানালে উঠতেই সেকি উল্লাস ইংল্যান্ডের পথে পথে। খেলা শেষ হওয়ার ৫ ঘণ্টা পরও রাস্তা দখল করে রাখেন ভারতীয় সমর্থকরা। পাকিস্তান দল আফগানিস্তানকে হারানোর পরও ছিল উল্লাস। এদেশে প্রবাসী পাকিস্তানিরা গাড়ি নিয়ে করে পতাকা মিছিল। এমনকি অনুমতি নিয়ে প্রায় প্রতিটি জয়ের ম্যাচে নির্দিষ্ট এলাকাতে করেছে আতশবাজি। বাংলাদেশ কম কিসে? গোটা ইংল্যান্ডকে মাতিয়ে রেখেছিল টাইগার ভক্তরা। বাসে, ট্রেনে, ট্রামে সব জায়গাতে লাল সবুজের উচ্ছ্বাস চলেছে। কিন্তু নিজেদের মাটিতে অনেকটা নীরবেই সেমিফাইনাল এমনকি ফাইনালও নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড।
২৭ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে দল। ভাবেন তো বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তন হলে কি হতো? রঙের মিছিল শুরু হতো নিশ্চয়। শহরে চলতো উৎসব। এখানে কিন্তু একেবারেই বিপরীত। হ্যাঁ, আনন্দ ঠিকই আছে। যেমন ম্যাচ শুরুর আগে ইংলিশ দর্শকরা গান গাইতে গাইতে মাঠে প্রবেশ করেন। ঠিক শেষ হতেও তারা একই ভাবে গান গাইতে গাইতে মাঠ ছাড়েন। তবে বাসে-ট্রেনে এ নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। মৃদু স্বরে হয়তো কাউকে বলতে শোনা গেলো- ‘গ্রেট, উই আর ইন ফাইনাল।’ ব্যাস এতেই শেষ তাদের উচ্ছ্বাস। সত্যি কথা বলতে কি এই দেশে ক্রিকেটের জন্ম হলেও ফুটবলের জায়গা দখল করতে পারেনি।
এশিয়ার কোনো দল বিশেষ করে ফাইনালে ভারত নেই বলে আবার অনেকেই বেশ হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। খোদ ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ বলেই বসলেন, ‘ইস! বড় বাঁচা বেঁচে গেছে ইংল্যান্ড। ভারত ফাইনালে যায়নি মন খারাপ কিন্তু কী যে অবস্থা হতো সেই কথা চিন্তা করছি। কত যে কেলেঙ্কারি ঘটিয়ে ফেলতো দর্শকরা।’ ভারত বাদ পড়ায় চাপা উচ্ছ্বাস আছে ইউরোপিয়ান নাগরিকদের মধ্যে। হয়তো তারা মুখে না বললেও মনে মনে ভীষণ খুশিই হয়েছেন। বিশেষ করে টিকিট পাওয়া হয়ে যেত মুশকিল। ইংল্যান্ডের ফাইনালে আসার পথটা অবশ্য মসৃন ছিল না। গ্রুপ পর্বে ৯ ম্যাচের মধ্যে জয় মাত্র ৬টিতে। তবে সেমিফাইনালে উঠে তারা উড়িয়ে দিয়েছে শিরোপাধারী অস্ট্রেলিয়াকে। সামনে প্রতিপক্ষ এখন নিউজিল্যান্ড।
ভাবা যায় ইংল্যান্ড কোন ক্ষণের অপেক্ষায় আছে? ১৯৭৫ থেকে টানা তিন বার বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে তারা। পরে আয়োজক হয় তারা ১৯৯৯ আসরেরও। এরপর টেমসে কত জল গড়িয়েছে তার হিসেবে নেই। প্রাপ্তি শুধু তিনবারের ফাইনাল তাও শেষ ফাইনাল খেলা হয়েছে ২৭ বছর আগে। ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখা হয়নি একবারও। ইংল্যান্ডে জাদুঘরের অভাব নেই। সেখানে কত কী! কত সাফল্যের গল্প। কিন্তু নেই শুধু একটি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ‘ট্রফি’। এবার সেটি মিললে হয়তো যদি কিছুটা উচ্ছ্বাস চোখে পড়ে! না, বাংলাদেশের এক ক্রিকেট ভক্ত বলেই বসলেন, ‘উচ্ছ্বাস ইংলিশরা করবে কিনা জানিনা, ইংল্যান্ড জিতলে মিছিল করার দায়িত্বটা আমাদেরই নিতে হবে। কারণ এখনতো আমরা এই দেশেরই নাগরিক। ওরা ফুটবল ছাড়া অন্য কিছুতে এত মন দেয় না। হ্যা, ক্রিকেটকে ভালবাসে, ক্রিকেটের জন্য অনেক কিছু করে। কিন্তু আমাদের মতো নয়। ভালো হলে হাত তালি দিয়ে শেষ, আর খারাপ করলে সমালোচনা তাও নীরবে। সেগুলোও দেখবেন পত্রিকার কিছু পাতায় বা টিভি টকশোতে। রাস্তায় নয়, ট্রেন কিংবা বাসে নয়। তবে হ্যা, রোববার কিছুটা উল্লাস দেখতে চাইলে পাওয়া যাবে সেটি পাব গুলোতে।’