× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাজি ধরে সুরমায় ঝাঁপ সামাদের

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১৪ জুলাই ২০১৯, রবিবার

দুই বন্ধু বাজি ধরেছিল বিরিয়ানি খাবে। ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিয়ে মাঝ নদীতে পড়বে। আর  তীরে সাঁতরে যে আগে উঠবে সে জয়ী হবে। এমন বাজি ধরে দুই বন্ধু একসঙ্গে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল। নদীর স্রোতের সঙ্গে লড়াই করে কোনো মতে তীরে এসে উঠলো মিলন। আর অপর বন্ধু সামাদ উত্তাল সুরমায় হারিয়ে গেল চিরতরে। ঘটনার দু’দিন পেরিয়ে গেছে। ডুবরিরা এসে তল্লাশি চালিয়েছেন।
স্বজনরা ট্রলার নিয়ে নদীর বুকে খুঁজে ফিরছেন। কিন্তু এখনো পাওয়া যায়নি সামাদকে। সিলেট নগরীর বাগবাড়ি এলাকার সামাদ, মিলন ও অভি তিন বন্ধু। শুক্রবার আসরের নামাজের পর তারা নিজ এলাকা বাগবাড়ির নুরানী মসজিদে মিলাদ পড়ে। এরপর বেড়াতে যায় টুকেরবাজারে সুরমার ব্রিজের উপরে। সঙ্গে থাকা বন্ধু অভি আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তারা ব্রিজের মধ্যখানে দাঁড়িয়ে ছিল। কথা বার্তা বলছিল। এমন সময় দু’জন বিরানী খাওয়ার বাজি ধরে।

আর বাজি হচ্ছে, ব্রিজের উপর থেকে লাফ দিয়ে পড়ে তীরে সাঁতরে ওঠা। যে আগে তীরে উঠবে সে জয়ী হবে। সন্ধ্যা হতে বাকি তখন এক ঘণ্টা। এরপর মোবাইল ফোন তার কাছে রেখে সামাদ ও মিলন দু’জন সুরমা নদীতে ঝাঁপ দেয়। অভি জানায়, সুরমায় প্রবল স্রোত ছিল। আমি বারবার তাদের এমন বাজি ধরতে বারণ করি। সুরমায় ঝাঁপ দিতে বারণ করি। কিন্তু সামাদ কিংবা মিলন কেউই আমার কথা শুনেনি। তারা সুরমায় ঝাঁপ দিবেই, এমন পণের পর দু’জনই ঝাঁপ দেয়। এর মধ্যে মিলন সাঁতরাতে পারলেও সামাদ নদীতে পড়ে স্রোতের কাছে অসহায় হয়ে যায়। এক পর্যায়ে সামাদ নদীতে হারিয়ে যায়। মিলনও কাহিল হয়ে পড়েছিল। তাকে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় চুড়ইগাঁও এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। শেখপাড়া গ্রামের রফিক মিয়া এ সময় ছিলেন সুরমার ব্রিজের উপর। ঝাঁপ দেয়ার দৃশ্য দেখে তিনিও এগিয়ে আসেন। বন্ধু অভিকে প্রশ্ন করেন কেন তারা নদীতে ঝাঁপ দিল। তিনি ব্রিজ থেকে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটি দেখছিলেন। জানালেন, ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দেয়ার পর সামাদ কিছুক্ষণ সাঁতরায়। কিন্তু এক সময় নদীর স্রোতের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে। স্রোত তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এক সময় আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যায়। রেখে যাওয়া স্মৃতি হিসেবে ব্রিজের উপর তাদের দু’জোড়া জুতা ছিল। এদিকে খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসে পুলিশ। তারা খবর দেয় ফায়ার সার্ভিসকে। রাতে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে গেলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার কাজ চালাতে পারেনি। এদিকে গতকাল সকালে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তল্লাশি চালালেও সামাদের খোঁজ পায়নি। স্থানীয়দের ধারণা- আর জীবিত নেই সামাদ।

নদীতেই তার সলিল সমাধি হয়েছে। সকাল থেকে সামাদের স্বজনরা ট্রলার নিয়ে নদীতে খোঁজ করছিল। বিকাল পর্যন্ত সামাদের খোঁজ পায়নি। সিলেটের জালালাবাদ থানার ওসি অকিল উদ্দিন জানিয়েছেন, আমরা খোঁজ করছি। পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে খবর দেয়া হয়েছে। এর বাইরে পরিবারের লোকজনও খুঁজছেন বলে জানান তিনি। এদিকে আহত অবস্থায় নদীতে ঝাঁপ দেয়া বন্ধু মিলনকে উদ্ধারের পর সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মিলন বাগবাড়ি ১২৩ নরসিংহ টিলার আবাসিক এলাকার রেজাউল করিমের ছেলে। সে পাঠানটুলা দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। বর্তমানে মেডিকেলের ৪র্থ তলার ১নং ওয়ার্ডে মিলনের চিকিৎসা চলছে। সামাদও স্কুলের ছাত্র। ঘটনার পর থেকে মাতম চলছে সামাদের বাসায়। সামাদের পিতা মারা গেছেন অনেক আগেই। সামাদ ছিল একমাত্র ছেলে। ঘরে তার আরো ৫টি বোন রয়েছে। এলাকার লোকজন জানান, ঘটনার পর থেকে পরিবারে কান্নার রোল পড়েছে। বাঁচার আশা আমরা ছেড়েই দিয়েছি। এখন লাশটা পেলে মাটি দেয়া যেত। এমন ঘটনায় গোটা এলাকাবাসী মর্মাহত। এদিকে কয়েক দিন আগে টুকেরবাজার ব্রিজের উপর  থেকে ৫ বছরের শিশুকন্যা মাহাকে নদীতে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল সৎমা সালমা বেগম। ঘটনার পরদিন মাহার লাশ লামাকাজি এলাকা থেকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর