× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ডাবল টাইয়ের পর ইংল্যান্ড বিশ্বচ্যাম্পিয়ন /এ যেন রূপকথা

প্রথম পাতা

ইশতিয়াক পারভেজ, লর্ডস (লন্ডন) থেকে
১৫ জুলাই ২০১৯, সোমবার

অবিশ্বাস্য! অদ্ভুত না? ভিতরে থাকতে পারলাম না। সিঁড়িতে নেমে এসেছি। দেখো আমার পশম দাঁড়িয়ে আছে। এমন ফাইনাল হবে ভাবিনি।  কেউ এমন ফাইনাল দেখেনি।’ পাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট গ্রেট কুমার সাঙ্গাকারা। বলবেন না কেন! এমন ফাইনালতো সত্যিই দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব!

এ যেন রূপকথা। মূল লড়াই ‘টাই’। সুপার ওভারে ‘টাই’। শেষে কোন দল বেশি বাউন্ডারি মেরেছে তা দেখে নিষ্পত্তি হলো শিরোপার।
এতে জয় পেলো ইংল্যান্ড। তবে হারেনি নিউজিল্যান্ডও। প্রথমবারের মতো ক্রিকেট বিশ্বকাপ শিরোপার স্বাদ পেল ইংল্যান্ড। গতকাল লডর্সে এভাবেই শিরোপা ওঠে ইংলিশদের হাতে।

শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৫ রানের। ইংলিশ দর্শকরা হাল যেন ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেই ম্যাচই কিনা গড়ালো শুধু বিশ্বকাপেই নয়, ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম সুপার ওভারে! মূল ইনিংসে পরে ব্যাট করার কারণে সুপার ওভারে আগে ব্যাট করতে নামলো এইউন মরগানের দল। তাতেই যেন বদলে গেলো ভাগ্য। সেই স্বপ্ন জয়ের এক ওভারে বেন স্টোকস ও জস বাটলার তোলেন ১৫ রান।  কে জানতো নিউজিল্যান্ডের জন্য সেই একই পরিণতি অপেক্ষা করছে? লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নিউজিল্যান্ড ফের পৌঁছে গেল জয়ের কাছাকাছি। শেষ ১ বলে ২ রান, কিন্তু হলনা, টানা দ্বিতীয় ফাইনালে হেরে গেলেও কিউইরা বিশ্বকে উপহার দিল ক্রিকেটের জেগে উঠার রসদ। অন্যদিকে বিশ্বকাপের  ইতিহাসে প্রথমবার ট্রফি জিতলো খেলাটির জনক ইংল্যান্ড। তাদের নতুন প্রজন্মের হাত ধরেই লর্ডসের ব্যালকনিতে ইংলিশদের হাতে উঠেছে প্রথম শিরোপা। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ফাইনালকে রঙিন বানিয়ে দেয়া স্টোকস। অন্যদিকে টুর্নামেন্ট সেরা নিয়ে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়েছে। সাকিব আল হাসান বা রোহিত শর্মা নয়, দলকে ফাইনালে টেনে নেয়া কিউই অধিনায়ক হয়েছেন ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট।   

বিশ্বকাপের ফাইনালে লর্ডসে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা নিউজিল্যান্ডকে ৫০ ওভারে ২৪১ রানে আটকে রাখে ইংল্যান্ড। জবাব দিতে নেমে শঙ্কায় পড়ে যাওয়া ইংল্যান্ডকে জয়ের পথে রাখেন স্টোকস।  তবে শেষ ওভারে কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্টের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ঠিক ২৪১ রানেই অল আউট হয় স্বাগতিকরা। ম্যাচ গড়ায় তাই সুপার ওভারে। সুপার ওভারে ইংল্যান্ডের হয়ে নামেন ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়া দুই নায়ক জস বাটলার আর স্টোকস। বোল্টের ওভারে পতালেন তারা ১৫ রান। জফরা আর্চারের ওভারে মার্টিন গাপটিল আর জিমি নিশামও করেন ১৫ রান।  শেষে বেশি বাউন্ডারি মারায় চ্যাম্পিয়ন হয় স্বাগতিকরা।

আগের তিন ফাইনালে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জেতেনি ইংল্যান্ড। ১৯৭৯ ওয়েন্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লডর্সে ৬০ ওভারে ২৮৬’র লক্ষ্যে হেরেছে ৫১ রানে। এরপর ১৯৮৭তে  কলকাতার ইডেন গার্ডেনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৫৩ তাড়া করতে নেমে হারে ৭ রানে। ঠিক তার পরের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে পাকিস্তানের ২৪৯  ছুঁতে পারেনি ২২ রানের জন্য। প্রতিবার ফাইনাল থেকে বিদায়ে ভেঙেছে শুধু মনই। গতকাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৭ বছর পর ফাইনাল জয়ের লক্ষ্যটাও বড় ছিল না। বোলাররা কিউইদের আটকে দিয়েছিল মাত্র ২৪১ রানে। লডর্সে ইংলিশদের সামনে সুযোগ ছিল তাদের বিশ্বকাপ ক্ষত পূরণ করার। ক্রিকেটের জন্মভূমিতে ট্রফি ফিরিয়ে আনার।  কিন্তু ছোট লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বড় বিপদেই পড়ে দল। ২৮ রানের সময় প্রথম উইকেটর পতন। সেমিফাইনালে দলকে জয়ের পথ দেখানো জেসন রয় ফাইনালে ব্যর্থ। হেনরির বল উইকেটে পড়ে গুলির মত বের হয়ে যাচ্ছিল। রয় চেষ্টা করেছিলেন ব্যাট চালাতে। কিন্তু বল তার ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটের পেছনে যেতেই টম ল্যাথাম অসাধারণ ভাবে লাফিয়ে গ্লাভসবন্দি  করেন। মাঠে থাকা গুটি কয়েক নিউজিল্যান্ড ভক্তের কণ্ঠ তখন ইংল্যান্ডকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা। তাদের সেই জোর বাড়াতে সময় লাগেনি। কারণ বিপদে ইংল্যান্ডের আশার আলো জো রুটের ৩০ বল খেলেও ৭ রানে বিদায়। তাকে বিদায় করেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম।  আগের ক্যাচটির যেন ফটোকপি। ব্যাস তাতেই নিউজিল্যান্ড ভক্তদের গগন বিদারি চিৎকারের শুরু।

ইংলিশরা কঠিন ক্রিকেটপ্রেমিক। কিউইদের দারুণ বোলিংয়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছিলেন। সেই সঙ্গে ভরসা রাখছিলেন পরের ব্যাটমস্যানদের দিকে। কিন্তু ভরসা হতে পারেননি ভয়ঙ্কর জনি বেয়ারস্টোর বিদায় যে মাত্র ৩৪ রানে। লকি ফার্গুসনের বল বুঝে ওঠার আগেই গুটিয়ে যায় স্টাম্প। ইংল্যান্ডকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলে ফাইনালে আনা এই ওপেনারের বিদায়ে বড় শঙ্কাতেই পড়ে ইংলিশদের ট্রফির স্বপ্ন। থাক্কা সামলাতে এসেছিলেন অধিনায়ক এইউন মরগান। যার সামনে ইংল্যান্ড ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ট্রফি এনে দেয়ার সুযোগ। বলতে গেলে ঐতিহ্যের ধারক ইংল্যান্ডের মহনায়ক হতে পারতেন তিনি। কিন্তু তার উড়িয়ে মারা বল পয়েন্টে হাওয়াতে শরীর ভাসিয়ে লুফে নিয়ে নায়ক হয়ে যান ফার্গুসন। ইংলিশ দলপতির নামের পাশে যোগ হয় মাত্র ৯ রান। যদিও আম্পায়াররা টিভি রিপ্লেতে দেখে নিয়েছেন বলটি তালুবদ্ধ হওয়ার আগে মাটি ছুঁয়ে ছিল কিনা। ৮৬ রানে দলের ৪ উইকেটের পতন। যেন আরো একবার সংকেত দিচ্ছিল স্বপ্ন ভঙ্গের।

২৫ রানে নিউজিল্যান্ড ১ উইকেট হারানোর পর জুটি বেঁধেছিলেন হেনরি নিকোলস ও কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। প্লাংকেট তাদের ৭৪ রানের জুটি ভাঙেন অধিনায়ককে বিদায় করে। এরপর ৫৫ রান করা নিকোলসও সাজঘরে ফিরলে বেশি দূর যেতে পারেনি কিউইরা। তাই ধারণা করা হচ্ছিল ৪ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডও দাঁড়াতে পারবেনা। ঠিক তখন গোটা গ্যালারি যেন নড়েচড়ে বসে। হঠাৎ করেই নিজ দলের ক্রিকেটারদের  উৎসাহ দিতে শুরু করে সমর্থকরা। তারা যেন বুঝতে পারছিল, এবার না হলে ট্রফির জন্য অপেক্ষা তাদের হয়তো কোনদিনও শেষ হবে না। দেশের মানুষের এই আকুতি যেন অনুভব করেছিলেন বেন স্টোকস ও  জস বাটলার। গড়ে তোলেন দারুণ এক জুটি। দলকে একটু একটু করে বিপদ থেকে টেনে বের করে নিতে থাকেন স্বপ্নের পথে। দু’জনের জুটিতে  প্রথমে দেড়শ পার করে দল। তাদের ব্যাটে ভর করে ইংল্যান্ড তাদের স্বপ্নের ঠিকানা খুঁজতে শুরু করে। দল ২’শ ছোঁয়ার আগেই ফের ধাক্কা। ভেঙে যায় তাদের ১১০ রানের জুটি। দারুণ  ধৈর্য্য নিয়ে খেলতে থাকা জস বাটলার আউট হন ৫৯ রান করে। বদলে যায় ম্যাচের চিত্র। তখন ৩০ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ৪৬ রান। ধাক্কা সামলাতে এসে ফিরে যান ওকসও। দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে ফের বড় বিপদে পড়ে ইংল্যান্ড।  কিন্তু সেখান থেকেই ম্যাচ রূপ নেয় রূপকথার গল্পে।  

দুই সেমিফাইনালে দাপট দেখিয়েছিলেন বোলাররা। ফাইনালেও দেখা গেলো একই চিত্র। গতকাল বিশ্বকাপের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে আগে ব্যাটিং নিয়ে ২৪১ রানে আটকে যায় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। আসরের প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ২৩৯/৯-এ বেঁধে রাখেন ভারতীয় বোলাররা। পরে ভারতের ব্যাটিং গুঁড়িয়ে ১৮ রানে জয় দেখে বোল্ট-ফার্গুসন-হেনরিদের  নিউজিল্যান্ড। অপর সেমিফাইনালে ইংলিশদের গতি ও স্পিনে সমান কাবু অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ থামে ২২১ রানে। লেগস্পিনার আদিল রশিদ নিয়েছিলেন তিন উইকেট। গতকাল অবশ্য আদিল থাকেন উইকেট শূন্য। নিউজিল্যান্ডের পতন হওয়া আট উইকেটই ভাগাভাগি করেন ইংলিশ পেসাররা। তিনটি করে উইকেট পেসার লিয়াম প্লাঙ্কেট ও ক্রিস ওকস। ইংল্যান্ডের দুই ‘একপ্রেস’ বোলার জফরা আর্চার ও মার্ক উড নেন একটি করে উইকেট।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর