× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘ঠেকে নয়, দেখেই শিখুক বাংলাদেশ’

খেলা

ইশতিয়াক পারভেজ, ইংল্যান্ড থেকে
১৬ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার

ওয়ানডে ক্রিকেটের শুরুটা ছিল সাদাকালো। ১৯৭৫-এর ৬০ ওভারের সেই প্রথম বিশ্বকাপের কথা ক্রিকেট ভক্তদের বেশ ভালোভাবেই জানা। কিন্তু কালের বিবর্তনে বদলে গেছে সব। টেস্ট আভিজাত্যের সীমালঙ্ঘন করে সীমিত ওভারের খেলা বিশ্ব ক্রিকেটে জায়গা করে নিয়েছে আপন আলোতে। ওয়ানডে মানেই এখন রঙিন ভুবন। চার বছর পর প্রতিটি বিশ্বকাপ আসে নতুন কোনো বার্তা, চমক আর পরিবর্তন নিয়ে। যেমন ধীরে ধীরে ইউরোপের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই চলে গেছে উপমহাদেশের হাতে। তবে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ফের পালাবদলের হাওয়া বইছে।
অনেকের ধারণা এই বিশ্বকাপ ফের এই অঞ্চলের ক্রিকেটের পুনর্জাগরণের বার্তা দিচ্ছে। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের প্রথম ট্রফি জয়ের রূপকথার গল্পটাই ফিরিয়ে আনবে ক্রিকেটে ভারসাম্য। এই বিশ্বকাপ থেকে কী বার্তা পেলো ক্রিকেট বিশ্ব! এ নিয়ে দৈনিক মানবজমিনের সঙ্গে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা দৈনিক কালের কণ্ঠ-এর উপ সম্পাদক ও ক্রীড়া বিশ্লেষক মোস্তফা মামুন। লর্ডসের গ্যালারিতে বসে খোলামেলা কথা বলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়েও। তার কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন: ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ থেকে কী বার্তা পেলো বিশ্ব?
মামুন: অনেক বার্তাই আছে। যেমন ইংল্যান্ডে ক্রিকেটের আধিপাত্য এক সময় থাকলেও এখন তা উমহাদেশের দিকে সরে গেছে। এখন ইংল্যান্ডের ফাইনালে ওঠা ও এইভাবে জয়টা আমি মনে করি এই অঞ্চলের ক্রিকেটকে আবার জাগিয়ে তুলবে। এখনকার নতুন প্রজন্মের মধ্যে ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ ফিরবে। তাতে করে আমাদের উপমহাদেশের যে একঘেয়েমি, মানে একদিকে যে হেলে পড়া সেটি আবার এদিকে ফিরে আসবে। ফলে ক্রিকেটে একটি ভারসাম্য তৈরি হবে বলেই মনে করি। এছাড়াও ফিরবে প্রতিযোগিতাও। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ক্রিকেটকে যদি আরো বড় করতে হয় তাহলে অবশ্যই এশিয়ার বাইরেও ছড়িয়ে দিতে হবে। ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহটা এখন বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান কেন্দ্রিক। এই জায়গা থেকে বের হতে না পারলে ক্রিকেট ছোট হয়ে যাবে।

প্রশ্ন: ক্রিকেটীয় দিক থেকে এই বিশ্বকাপের প্রাপ্তি কী?
মামুন: আসরের শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল এটি হবে ব্যাটসম্যানদের বিশ্বকাপ। শুধু এখানেই নয় ওয়ানডে ক্রিকেটটা দিনে দিনে হয়ে উঠছিল ব্যাটসম্যানদের খেলা। এখানে দর্শকরা রান দেখতেই আসেন। তবে নিউজিল্যান্ড কিন্ত সেই ধারণা বদলে দিয়েছে অনেকটাই। ২৬০/২৪০ করেও ম্যাচ জেতা যায় বোলিং শক্তি দিয়ে তা তারা দেখিয়েছে। তারা দেখিয়েছে বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের মূল্য আছে। তার মানে ক্রিকেটে বোলারদের যে গুরুত্ব সেটি এখনো কমেনি। সেই কারণে এখন প্রতিটি দেশই ভাববে দলে ভালো মানের কিছু পেস বোলার তৈরি করার কথা। এখন আর ভাবার সুযোগ নেই বেশি বেশি রান করলেই জিতবো । এখন ম্যাচ জিততে হলে ভালো বোলারও লাগবে। মহেন্দ্র সিং ধোনিকে মার্টিন গাপটিল যেভাবে রান আউট করেছেন সেটিও প্রমাণ করে যে ফিল্ডিংটাও দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন: ক্রিকেটে কেন ফুটবলের মতো বিশ্বায়ন হচ্ছে না?
মামুন: আমার মনে হয় খেলার দৈর্ঘ্য বা সময়। ক্রিকেট যখন শুরু হয় তখন কিন্তু ওয়ানডে ছিল না। তখন খেলা হত ৬ দিন এরপর কমে হলো ৫ দিনে। কিছু কিছু দেশে যেমন যুক্তরাষ্ট্রেতো ফুটবকেই লম্বা দৈর্ঘ্যের খেলা মনে করে। তাদের কাছে বাস্কেটবলকে বেশি গতিশীল মনে হয়। খেলাধুলা হল যে আপনি কাজ শেষে বিনোদনের জন্য খেলবেন। কিন্তু ক্রিকেটটা কি হয়েছে কাজ বাদ দিয়ে খেলতে হয় সারাদিন। এটি আসলে অনেকেই মেনে নিতে পারেনা। দেখেন ম্যানচেষ্টার ইউনাটেডের যাত্রা শুরু হয়েছিল নিউ হিথ ফুটবল ও ক্রিকেট ক্লাব নামে। এখন যে এসি মিলান। সেটিও ছিল মিলান ফুটবল ও ক্রিকেট ক্লাব নামে। ইংলিশরা যেখানে গেছে তারা কিন্তু ফুটবল ক্রিকেট দুটিকেই এগিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আমাদের উপমহাদেশ ছাড়া বাকি জায়গা গুলোতে ফুটবলটাই বেশি জনপ্রিয় হয়েছে এই সময়ের কারণে। যে কারণে ফুটবলের সঙ্গে ক্রিকেটকে মেলানো যাবেনা। আর জোর করে বিশ্বায়ন হবেনা। যেমন আইসিসি যেমন জোর করে ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি স্ট্যাটাস দিচ্ছে এতে করে কিন্তু ভারসাম্য হারাচ্ছে। ক্রিকেটকে আসলে বাজারের জিনিস বানানোর কিছু নেই। কারণ ক্রিকেটে অনেক ঐতিহ্য আছে, ভালবাসা, আবেগ আছে সেটি সে ভাবেই রাখা উচিত।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের ক্রিকেট এখনো কোথায় পিছিয়ে বলে মনে করেন?
মামুন: বাংলাদেশের ক্রিকেটটা চলে আবেগে। এখানে নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ড খেলছে কিন্তু যেই ভালো করছে সবাই উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানাচ্ছে। হাততালি দিচ্ছে। এখানে যারা ক্রিকেট দেখে তারা কিন্তু সত্যিকারের ভালবাসা নিয়ে মাঠে আসে। স্মিথের ঘটনার কারণে (বল টেম্পারিং) তাকে অপছন্দ করে। কিন্তু দেখেন সেদিন যখন তিনি রান করছেন তখন কিন্তু তাকেও হাততালি দিয়ে উৎসাহ দিয়েছে ইংলিশরা। কিন্তু আমাদের এখানে কিন্তু আবেগের কারণে সব কিছু এলোমেলো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে দর্শকরা। এরপর ধরেন এই যে লর্ডসে বিশ্বকাপ শেষ হলে কি হবে? তারা এই মাঠটাকে পরিচর্যা করবে সুন্দর ভাবে মাঠের যত্ন নিবে। এমন নয় যে খেলা শেষ সব শেষ। মাঠটি যেনো যে কোনো মুহূর্তে ব্যবহার করা যায় সেই কাজগুলো করবে। আমাদের এখানে স্টেডিয়াম গুলোর অবস্থা দেখেন। এখানে মূখ্য হলো খেলার উপযোগী মাঠ বানানো। আর আমাদের এখানে মাঠের যে গ্যালারি কেমন হবে তা নিয়ে বেশি চিন্তা থাকে। আমি মনে করি মাঠের প্রতি নজর দিতে হবে আমাদের। দেখেন এখানে যে কাউন্টি হয় সেখানে কিন্তু দর্শক নেই। কিন্তু ভালো উইকেট আছে, আম্পায়ারিং ভালো। এতে করে ওদের ক্রিকেটারও দারুণ ভাবে গড়ে উঠছে আমাদের নয়।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
মামুন: আসলে পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ ছাড়া আমার কাছে ভালোই মনে হয়েছে। তবে যে ভাবনাটা ভুল সেটা হলো তারা শুরু থেকে রানের উইকেটের কথা চিন্তা করেছে। ব্যাটিং নিয়ে ভাবলেও বোলিংটা গুরুত্ব দেয়নি। যার খেসারত দিতে হয়েছে। আসলে এ থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত।

প্রশ্ন: ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ থেকে কতটা শিক্ষা পেলাম আমরা?
মামুন: আসলে আমরা দেখে শিখিনা, ঠেকে শিখি। কারণ দেখেন এখানে বিসিবির কর্মকর্তারা কম আসেন না। দেখেন জানেন। কিন্তু তার কোনো প্রতিফলন নেই। আসলে আমরা যেটা পারি যখন ঠেকায় পড়ে তখন ঠিকই পারি যেমন বিশ্বকাপ আয়োজন বলেন এই সব সাংগঠনিক দিক। কিন্তু সেটিও সাময়িক। তাই বলবো ঠেকে না শিখে দেখে যদি শিক্ষা কাজে লাগাতো তাহলে ভালোই হত।

প্রশ্ন: ২০২৩ ভারতের বিশ্বকাপ কি পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করেন?
মামুন: একটা বড় পরিবর্তনতো থাকবেই যেমন এখানে বাংলাদেশ যে মাঠে খেলেছে তাদের মনে হয়নি দেশের বাইরে। কারণ এখানে অনেক বাংলাদেশি থাকে। সেই তুলনাতে ভারতে কতজন থাকে? তারাতো যাবে দেশ থেকে সেটিও কতজন যেতে পারবে তাও প্রশ্ন। আমি বলবো আমাদের জন্য এই পরিবর্তনটাও অনেক বড় হবে। সেখানে পরিবেশ, কালচারও ভিন্ন হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর