× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কুমিল্লার আদালতে বিচার চলাকালে ছুরি হাতে হামলা, বিচারকের খাস কামরায় গিয়েও ছুরিকাঘাত / আদালতে বিচারকের সামনেই খুন

প্রথম পাতা

জাহিদ হাসান, কুমিল্লা থেকে
১৬ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার
আদালতের ভেতরে ছুরিকাঘাতে নিহত ফারুক (বাঁয়ে) ও ঘাতক হাসান

এজলাসে বসা বিচারক। চলছিল একটি হত্যা মামলার শুনানি। আসামিরা কাঠগড়ায়। যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে ব্যস্ত আইনজীবীরা। এর মধ্যে হঠাৎ এক আসামি ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে অন্য আসামির ওপর। ওই আসামি প্রাণে বাঁচতে দৌড়ে আশ্রয় নেন বিচারকের খাস কামরায়। সেখানে গিয়েও তার ওপর হামলে পড়ে অস্ত্রধারী। উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে ওই আসামিকে।
হাসপাতালে নেয়ার পর ওই আসামির মৃত্যু হয়। বিচারক, আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীদের সামনে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল কুমিল্লার একটি আদালতে। এ সময় একজন পুলিশ সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘাতককে আটক করেন। এ ঘটনার পর আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একজন পুলিশ সদস্য ঝুঁকি নিয়ে ঘাতককে আটক করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক বেগম ফাতেমা ফেরদৌসের সামনেই এ ঘটনা ঘটে। এতে আদালত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিহত আসামি মো. ফারুক (২৮) কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামের অহিদ উল্লাহর ছেলে এবং ঘাতক হাসান (২৮) জেলার লাকসাম উপজেলার ভোচপুর গ্রামের শহীদ উল্লাহর ছেলে। নিহত ফারুক ও ঘাতক হাসান সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ।

আইনজীবী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতে জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামে ২০১৩ সালের ২৬শে আগস্ট হাজী আবদুল করিম হত্যা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য্য ছিল। ওই হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ডাকা হলে আসামি হাসান বিচারক ও আইনজীবীসহ বিচারপ্রার্থীদের উপস্থিতিতে হঠাৎ করে তার সহযোগী অপর আসামি ফারুককে ছুরিকাঘাত করতে উদ্যত হয়। এ সময় ফারুক প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে বিচারকের খাস কামরায় আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তার। এ সময় হাসান ধারালো ছোরা হাতে নিয়ে দৌড়ে ওই কামরায় গিয়ে ফারুককে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করলে ফারুক মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন।

এ সময় আদালতের পুলিশ, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা হাসানকে আটক করতে এগিয়ে না গেলেও অন্য একটি মাদক মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসা জেলার বাঙ্গরা বাজার থানার এএসআই ফিরোজ আহমেদ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোরাসহ ঘাতক হাসানকে জাপটে ধরে কোর্ট পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন। আদালতের পুলিশ পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি জানান, ঘাতক হাসানকে আটকসহ তার কাছ থেকে একটি ধারালো রক্ত মাখা ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। গুরুতর আহত ফারুককে প্রথমে কুমিল্লা সদর হাসপাতাল ও পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ফারুক ও ঘাতক হাসান মনোহরগঞ্জের হাজী আবদুল করিম হত্যা মামলার আসামি। এদের মধ্যে ফারুক ওই হত্যা মামলার ৪নং এজাহার নামীয় আসামি এবং হাসান ৬নং আসামি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অ্যাডভোকেট শাহনেয়াজ সুলতানাসহ অন্য আইনজীবীরা জানান, ঘটনার আকস্মিকতায় বিচারক, কর্মকর্তা ও আইনজীবীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। ঘাতককে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা না হলে হয়তো আরো কয়েকজনের প্রাণ যেত। ঘাতককে আটককারী বাঙ্গরা বাজার থানার এএসআই ফিরোজ আহমেদ জানান, আমি একটি মাদক মামলায় সাক্ষ্য দিতে ঘটনার সময় আদালত কক্ষে বসা ছিলাম। আবদুল করিম হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু হলে এক পর্যায়ে ঘাতক হাসান উন্মুক্ত ছোরা হাতে আসামি ফারুককে হত্যার চেষ্টা চালায়। কিন্তু আসামি ফারুক প্রাণ বাঁচাতে বিচারকের খাস খামরায় প্রবেশ করে বাঁচার চেষ্টা করে। কিন্তু সেখানে গিয়েও ঘাতক তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। এতে আদালতের সবাই হতবিহ্বল ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কেউ তাকে নিবৃত্ত করার সাহস পাচ্ছিল না। তখন আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘাতককে জাপটে ধরি। এ সময় আদালতের বিচারক এজলাসে ছিলেন। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, একটি মামলার হাজিরা দিতে আসা আসামি এ ঘটনা ঘটিয়েছে। বিকালে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহত ফারুকের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। এর আগে ঘটনার খবর পেয়ে আদালতে ছুটে যান কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এতটা নিরাপত্তার মাঝেও আসামি ছুরি নিয়ে কিভাবে আদালতের ভেতরে প্রবেশ করলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. সাখাওয়াত হোসেনকে প্রধান করে এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন ও ডিআই ওয়ান মো. মাহবুব মোর্শেদকে সদস্য করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর