× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আট জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, নিহত ১২

বাংলারজমিন

বাংলারজমিন ডেস্ক
১৭ জুলাই ২০১৯, বুধবার

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে ৮ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ। কোথাও ত্রাণের নৌকা দেখলেই ছুটে যাচ্ছে বন্যার্তরা। এদিকে গতকাল বন্যার পানিতে ও নৌকা ডুবে অন্তত ১২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রামে ৯, জামালপুর, ভূয়াপুর ও কাজীপুরে ৩জন রয়েছে। আর যেসব জেলায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে সেগুলো হলো- কুড়িগ্রাম, রংপুর, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ।  বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-  স্টাফ রিপার্টার, কুড়িগ্রাম ও উলিপুর, রাজারহাট, চিলমারী ও রৌমারী প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পাওয়ায় ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি। ভাঙনের শিকার হয়েছে সহস্রাধিক পরিবার। রৌমারীতে বাঁধ ভেঙে নতুন করে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে রৌমারীর কর্ত্তিমারীতে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পানিতে পরে সাইফুল ইসলাম (২৫) নামে এক যুবক নিখোঁজ হয়। অপরদিকে উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নে রুনা বেগম (২৮), রুপা মনি (৮) ও হাসিবুল ইসলাম (৭) নৌকায় করে বন্যা দেখতে গিয়ে নৌকা ডুবিতে মারা যায়। এতে সুমন (৮) ও রুকুমনি (৮) নামে আরো দুই শিশু নিখোঁজ রয়েছে। পরে তাদের লাশও ভেসে উঠে। এদিকে চিলমারীতে বন্যার পানিতে ডুতে ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রানীগঞ্জ ইউনিয়নের সুনমুন পাড়ার বাদশার মেয়ে বীথি (১০) সোমবার, অষ্টমীর চর ইউনিয়নের খদ্দবাসপাতারি এলাকার ফরিদুল হকের শিশু ছেলে হাসানুর (৯ মাস) রোববার ও শুক্রবার চিলমারী ইউনিয়নের গাছবাড়ী এলাকার সাইফুল মিয়ার মেয়ে মনি দেড় বছর পানিতে পড়ে মৃত্যু হয়েছে।

জেলা কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার পর্যন্ত কুড়িগ্রামে প্রায় ৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ভাঙনে ৪ হাজার ৫৩৬ জন এবং পানিবন্দি ৩ লাখ ৯২ হাজার ২৭২ জন। বন্যার ফলে পানিবন্দি মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও আশ্রয়ের সংকটে ভুগছেন তারা। চরাঞ্চলে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সারা দিন পানিতে চলাফেরা করায় বানভাসীরা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বেড়ে গিয়ে ১২৫ সে.মি. নুনখাওয়া পয়েন্টে ৯৫ সে.মি. এবং ধরলা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে ১১৭ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি কমে গিয়ে ১০ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার উলিপুর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন সাহেবের আলগা’র মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিক হোসেন এই প্রতিবেদককে জানান। এই ইউনিয়নে মোট ৫ হাজার ৩৭০টি পরিবারের মধ্যে ৪ হাজার ৩শ’ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ১৪টি উঁচু জায়গায় অবস্থান নিয়েছে ১৮শ’ পরিবারের লোকজন। এ ছাড়াও নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে ৮শ’ পরিবার। রাজারহাটে তিস্তা ও ধরলার ভাঙন কবলিত ৪টি ইউপির ৩০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার, নবীগঞ্জ থেকে জানান, নবীগঞ্জে কুশিয়ারায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যা কবলিত শতাধিক গ্রামে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ও হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পানি উন্নয়বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসন যৌথভাবে দুর্ভোগ লাগবে কাজ করছে। পানি বৃদ্ধি ও লাগাতার বৃষ্টির ফলে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছেনা। আগামী ১৯শে জুলাই কুশিয়ারা ডাইক এলাকা পরিদর্শন করবেন পানি সম্পদ মন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি। মন্ত্রণালয়ে নির্দেশে কুশিয়ারা প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙন কবলিত এলাকার উন্নয়নে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহ নওয়াজ মিলাদগাজী এমপি একাধিবার ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেন। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহি অফিসার তৌহিদ বিন হাসানের নেতৃত্বে স্বল্প পরিসরে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। নদী তীরবর্তী রাধাপুর ও জামারগাঁও গ্রামের নিকটবর্তী ডাইক (নদী রক্ষা বাঁধ) ভেঙে গ্রামাঞ্চল প্লাবিত হয়। কুশিয়ারা ডাইক ভেঙে যাবার ফলে বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড ও বিদ্যুৎ প্লান্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ইতিমধ্যে উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে অসংখ্য মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টির কারণে জেলার সাতটি উপজেলায় মোট ৪৭টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৪০ সে.মি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৪০ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব অঞ্চলের প্রায় তিন লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। বন্যার পানি প্রবেশ করায় সাত উপজেলায় মোট ২৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬১টি উচ্চ বিদ্যালয়, ২৯টি মাদ্রাসা ও ৫টি কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য ইসলামপুরে ১৯ ও দেওয়ানগঞ্জে ৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ১৩শ’ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে, ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালের চর ইউনিয়নের মালমারা গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে আব্দুল্লাহ নামের চার বছরের এক শিশু মারা গেছে।  সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি আরো ৩৩ সে.মি বেড়ে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে এখন বিপদসীমার ৪৮ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিন জেলার সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালী, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে তলিয়ে যাচ্ছে বাজার, রাস্তা ঘাট, ফসলি জমি ও বসতভিটা। সেই সঙ্গে চলছে নদী ভাঙন।
সাজিদুর রহমান সাজু, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) থেকে জানান, কমলগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, শমসেরনগর, পতনউষার ইউনিয়নের প্রায় ২৭টি গ্রাম। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর পানি মঙ্গলবার দুপুরে বিপদসীমা দিয়ে প্রবাহিত হলেও বিকালে নদীর পানি আবার বেড়েছে। রোববার ও সোমবার নদীতে পানি বাড়ায় ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের পশ্চিম তীরে একাধিক ভাঙন দেখা দেয়। এর মধ্যে রোববার দিবাগত রাতে কমলগঞ্জ পৌর এলাকার রামপাশা গ্রামে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে নতুন করে আরো একটি ভাঙন দেখা দেয়।  মীরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান,  মীরসরাই পৌর সদর হয়ে বয়ে যাওয়া মীরসরাই টু মলিয়াইশ সড়কটি দিয়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে গর্ত আর ভাঙ্গাচোরা দশার জন্য জনদুর্ভোগ অব্যাহত চলছিল। তার উপর এবারের টানা বর্ষণের পর গত রোববার রাতে সড়কের বিশাল অংশ ধসে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে মীরসরাই মলিয়াইশ সড়ক যোগাযোগ। মঘাদিয়া ও  মিঠানালা ইউনিয়নের  অনেকগুলো গ্রাম ও  মীরসরাই পৌরসভার কয়েকটি গ্রামের লাখ প্রায় মানুষের চলাচলের বিকল্পহীন সড়ক মীরসরাই- মলিয়াইশ সড়ক। দীর্ঘদিন এই সড়কের খানাখন্দ, গর্ত আর ভাঙ্গাচোরা দশার দরুন জনদুর্ভোগের অন্তঃ নেই। এর মধ্যে এবারের বর্ষণে রোববার গভীর রাতে এই সড়কের কালামিয়ার দোকানের পশ্চিম পার্শ্বস্থ বাইন্যার টেক নামক স্থানের প্রায় ২০ থেকে ৩০ ফুট জুড়ে ধসে যাওয়ায় সিএনজি ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।

সোমবার দিনভর মলিয়াইশ, মিঠানালা, কচুয়া, মঘাদিয়া, সাধুরবাজার, তিনঘরিয়াটোলা, উপকূলাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার মানুষের বিকল্পহীন এই সড়ক দুর্ভোগে পতিত হয়ে দৈনন্দিন কাজ সেরেছেন। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, নারী পুরুষ সকলে হাঁটু থেকে কোমর পানি মাড়িয়ে ভাঙা অংশ পার হয়ে পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছে সড়ক। ভুক্তভোগী মীরসরাই পৌরবাজারের ডা. নজরুল ইসলাম জানায়, সকালে দেখছি সিএনজি যাচ্ছে না মীরসরাই। এরপর পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করে ২ কিলোমিটার পেরিয়ে এই ধসে যাওয়া অংশ লুঙ্গি পরে পার হয়ে বাজারে এসে আবার প্যান্ট পরি। তবে নারী ও শিশু, কিশোর,  কিশোরী, তরুণীদের ভোগান্তি অনেক বেড়ে গেছে।
উক্ত ধসে যাওয়া এলাকার জনপ্রতিনিধি মীরসরাই পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড এর কাউন্সিলর কোব্বাত মিয়া বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি রাস্তা জুড়ে এমন বিশাল ভাঙন। আবার বিকাল নাগাদ এই ভাঙা অংশ বড় হয়ে আরো ব্যাপক আকার লাভ করে। তিনি বলেন, দিনভর নারী পুরুষ  অনেকে খুব কষ্ট করে এই রাস্তা পাড়ি দিয়েছে। অনেকে প্রায় ১০ কিলোমিটারের ঘুরো পথে সদরে যাতায়াত করছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে অনেক গুন। এই বিষয়ে পৌরসভার পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সকালেই মেয়রকে জানিয়েছি। তিনিও ঘটনাস্থলে এসে পরিদর্শন করেছেন। এই বিষয়ে পৌরমেয়র গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখেছি  এই ধসে যাওয়া অংশে একটি পুরনো ছড়া ছিল।  মণ্ডলপাড়া থেকে এই ছড়া শেখের তালুক খালে গিয়ে পড়েছে। স্থানীয় কিছু মানুষ এই ছড়ার গতিপথ বন্ধ করে দেয়ায় এমন ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে তিনি আপাতত মানুষ চলাচলের জন্য সড়ক চালুর ব্যবস্থা শিগগিরই করবেন বলে জানান।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর