× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

এজলাসে খুন /নিরাপত্তা জোরদার আইনের শাসন নিশ্চিতের তাগিদ

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
১৭ জুলাই ২০১৯, বুধবার

কুমিল্লার আদালতে বিচারকের সামনে খুনের ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে বিচারাঙ্গনে। আদালতের মতো নিরাপদ জায়গায় এ ঘটনায় বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আদালত এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি সব ক্ষেত্রে আইনের সমান প্রয়োগ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এ ধরনের ঘটনা রোধ সম্ভব। নজিরবিহীন এ ঘটনার পর সারা দেশের আদালত পাড়ার নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে সরকারের তরফে। তবে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, শুধু আদালত না। মানুষ সব জায়গায় প্রচণ্ড নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সারা দেশে যখন লাগাতার হত্যা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে তখন আদালতকে সুরক্ষা দিয়ে এর সমাধান হবে না। দুর্বৃত্তায়িত দুর্নীতির রাজনীতি ও প্রশাসনকে সংস্কার ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
মেটাল ডিটেক্টর ও পুলিশ পাহারা এর সমাধান নয়। সমাধান হবে আদর্শের রাজনীতি ও জনগণের সেবার প্রশাসন দ্বারা।  

সাবেক আইনমন্ত্রী ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। কোর্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অর্থাৎ পুলিশকে আরো সতর্ক হতে হবে। যারা আসামি  বা বহিরাগত আছে তাদের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে প্রবেশ করানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বিচারক, আসামি, আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থীরা যেন কোর্টে স্বস্তিবোধ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো বাড়াতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বিষয়টি খুবই আশ্চর্যের। আমার কাছে একটি বিষয় মনে হয়, সেটি হচ্ছে বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। হত্যাকারী, অপরাধদের বিচার কাজ বিলম্ব হলে অপরাধীরা বেপরায়া হয়ে ওঠে। যুক্তির খাতিরে অনেকে বলবে আদালতে আসামিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে যেন প্রবেশ করানো হয়। সেটা কিন্তু সম্ভব না, সারা দেশে হাজার হাজার আসামি কোর্টে যায় তাদের চেক করে প্রবেশ করানো খুব কঠিন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি চরমভাবে উদ্বেগজনক। এই ঘটনা প্রমাণ করে আদালতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা দুর্বল। আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার অবনতির ফলেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। যার ফলে অপরাধীদের অপরাধ প্রবণতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সচেতন এবং সতর্ক হতে হবে। সঙ্গে বিচারক, আইনজীবী, আসামিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, বিচার হয় না, বিচার হতে অনেক বিলম্ব হয় এসব কারণেই অপরাধের সংখ্যা বাড়ছেই। হত্যা মামলার আসামি খুব সহজে জামিন পেয়ে যায়। জামিন পেয়ে কেউ কেউ পালিয়ে যায়। আবার নিম্ন আদালতে সাজা পেলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়ে যায়। এমন ঘটনা অনেক ঘটছে। মানুষের মনে হয়তো একটা আত্মবিশ্বাস জন্মেছে কোনো না কোনো ভাবে অপরাধ করলেও ছাড়া পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, কুমিল্লায় যে ঘটনাটি ঘটেছে তারা দুইজনই খুনের মামলার আসামি। কিন্তু তারা জামিনে আছে। আমাদের দেশে ছোট ছোট রাজনৈতিক মামলাগুলোয় দিনের পর দিন জামিন দেয়া হয় না অথচ ভয়ঙ্কর এই খুনের মামলাটিতে জামিন দেয়া হয়েছে। এটা যে অনেক বড় একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল সেটা প্রমাণ হয়ে গেল।

তিনি বলেন, গভীরভাবে দেখলে মানুষের যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, জীবিকা নেই, আয় বৈষম্য বাড়ছে, মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য বাড়ছে, হতাশা বাড়ছে, সুশাসন নেই, ক্ষোভ প্রকাশ করার কোনো মাধ্যম নেই, প্রচণ্ড রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার কারণে এটা ব্যক্তি মানুষের ওপর প্রভাব পড়ছে।

মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সালমা আলী এ বিষয়ে বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে।  দেশে আইনের শাসন নেই। সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হচ্ছে আদালত, সেখানে যদি প্রকাশ্যে খুন করা হয় তবে এর দায়ভার কে নেবে? এটি গণতন্ত্রের জন্য লজ্জাজনক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না। তিনি বলেন, প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, তারপরও পুলিশের কাছে কোনো কৈফিয়ত চাওয়া হচ্ছে না। জনগণ আদালতে গিয়ে বিচার পাচ্ছে না। সালমা আলী বলেন, কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে বিনা বিচারে মানুষ মারা হচ্ছে। ক্রসফায়ার বা বিচার বহির্ভূত হত্যা কোনো সমাধান নয়। কোনো গণতান্ত্রিক দেশে ক্রসফায়ার নেই।

এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, দেশে যখন বিচার ব্যবস্থা অকার্যকর থাকে, তখন বিচার বহির্ভূত হত্যা বেড়ে যায়। এতে করে অপরাধীরা আরো সাহস পায়। দেখা যায় যে, প্রকৃত অপরাধীরা ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় পার পেয়ে যায়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর