× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

শেষের পাতা

বাংলারজমিন ডেস্ক
১৮ জুলাই ২০১৯, বৃহস্পতিবার

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বন্যার পানিতে গাইবান্ধায় ট্রেনলাইন ডুবে যাওয়ায় গতকাল দুপুর থেকে সারা দেশের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর ও নওগাঁর মান্দায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা , জামালপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জবাসী। এই পাঁচটি জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে বন্যাদুর্গতরা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও পৌঁছেনি সরকারের ত্রাণ।
তাই গবাদিপশু নিয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-

সিদ্দিক আলম দয়াল, গাইবান্ধা থেকে জানান, গাইবান্ধার চার উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১৮৯ সেন্টিমিটার, ঘাঘটের পানি বিপদসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সদরের গোদার হাটে সোনাইল বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে বাড়িঘরে। ডিসি’র বাংলো, জজের বাড়ি, পুলিশলাইনসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা প্লাবিত হয়েছে।
রেল সূত্র জানায়, গতকাল পানি বৃদ্ধির কারণে গাইবান্ধার বাদিয়াখালীতে রেললাইনে পানি উঠে গেছে। ফলে, দুপুর ১২টা থেকে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগায়োগ বন্ধ হয়ে গেছে। অপরদিকে সড়কে পানি ওঠায় গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়ক, গাইবান্ধা-বালাসী ও কালিরজাজার সড়ক, গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। শহরে পানি ওঠায় অধিকাংশ এলাকা এখন পানির নিচে।

এদিকে চরাঞ্চল ডুবে যাওয়ায় চরের লোকজন তাদের বাড়িঘর সরিয়ে আশ্রয়ের খোঁজ করছেন। অনেকেই কোনো রকমে ঠাঁই নিয়েছেন বিভিন্ন শহররক্ষা বাঁধ ও নদী তীরবর্তী রাস্তাগুলোতে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী ইতিমধ্যে গাইবান্ধা সদর, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও ফুলছড়ি উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার পরিবার। এসব এলাকায় সমস্যা দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের। এদিকে ডুবে যাওয়ায় ১১৫টি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও পানির তোড়ে ধসে গেছে ৪ কিলোমিটার বাঁধ। কালভার্ট ধসে গেছে ৬টি। ১১৪টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যার্ত মানুষ গবাদি পশু নিয়ে গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানান বন্যার্তরা।

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চিলমারীর বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি এখন বিপদ সীমার ১৩২ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বুধবার বিকাল ৩টা)। বন্যার পানিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পানির নিছে তলিয়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছেন। শুধু তাই নয়, বাসাবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ঘর ছাড়া হয়েছে প্রায় ২০ হাজার পরিবার। তাদের বসবাস এখন আশ্রয়কেন্দ্র, ওয়াবদা বাঁধ ও কেচি সড়কের ওপর খোলা আকাশের নিচে।

প্রায় সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি থাকায় দুর্ভোগ চরমে উঠেছে বানভাসী মানুষজনের। দুর্গত এলাকায় ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ বানভাসী মানুষের মাঝে জোটেনি একমুঠো ত্রাণের চাল। নৌকার শব্দ শুনলেই ত্রাণের জন্য ছোটা ছুটি শুরু করেন তারা শুধু তাই নয় যে কেউ গেলেই ছুটে এসে বলছেন নাম লিখতে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে অনেক পরিবারের। এসব ঘর ছাড়া মানুষের হাতে প্রায় ১০/১৫ দিন থেকে কাজ না থাকায় খেয়ে না খেয়ে কেউ মাচা পেতে, আশ্রয়কেন্দ্রে, কেউ রাস্তার ওপর খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। ঘরে খাবার না থাকায় বিশেষ করে বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষজন। পাশাপাশি গো-খাদ্যের সংকট এবং বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়ায় গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছে মানুষজন। গবাদি পশুর পাশাপাশি মানুষের মাঝেও দেখা দিয়েছে রোগ-ব্যাধি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় জীবন-যাপন করছেন।

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টির কারণে জেলার সাতটি উপজেলায় মোট ৫২টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ী, হাজরাবাড়ী ও মেলান্দহ পৌরসভা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ সকল অঞ্চলের ৭৯ হাজার একশ’ ৪০টি পরিবারের প্রায় চার লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। বন্যার পানি প্রবেশ করায় সাত উপজেলায় মোট ৪শ’ ৫৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একশ’ ৬টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৫১টি মাদ্রাসা এবং ২৩টি কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০ দিকে কাজিপুর উপজেলা সদরের ৩টি গ্রামের মানুষ আধো ঘুমে থাকাবস্থায়ই ভেঙে যায় জেলা পরিষদের অর্থায়নে স্থানীয়ভাবে নির্মিত রিংবাঁধটির অন্তত ৬০ মিটার এলাকা। আর এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে তিন গ্রামের অন্তত ৩ শতাধিক পরিবার। অধিকাংশ মানুষই নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ঘর থেকে বের হতে পারেননি। জীবন বাঁচাতে কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছিল ঘরের চালে। কেউবা আশ্রয় নিয়েছিল উঁচু সড়কে আর বাঁধে। এছাড়া সিরাজগঞ্জের কাজিপুর-ধুনট আঞ্চলিক সড়কে উপরে পানি উঠে পড়ায় এ সড়ক দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর মান্দায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে আত্রাই নদীর ডান তীরে উপজেলার কশব ইউনিয়নের চকবালু নামকস্থানে বাঁধটি ভেঙে যায়। এতে অন্তত অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে খেতের ফসল। বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় ঘরের আসবাবপত্র ও মালামাল নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে দুর্গত এলাকার মানুষ। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে পূর্বমান্দার এবং আত্রাইয়ের সব ধরণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গত কয়েকদিনের একটানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আত্রাই নদীর পানি জোতবাজার পয়েন্টে বিপদ সীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে আত্রাই ও ফকির্ণী নদীর উভয় তীরে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৩০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার থেকে জানান, কমছে নদীর পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ। গেল দু’দিন থেকে উজানের ঢল ও বৃষ্টি না হওয়াতে জেলার নদী ও হাওরের পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। কুশিয়ারা নদী ছাড়া জেলার মনু, ধলাই নদীর পানি এখন বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বাড়ছে বন্যাকবলিত মানুষের চরম দুর্ভোগ। কুশিয়ারা নদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার নদী ও হাওর তীরের বাসিন্দারা হঠাৎ বন্যাকবলিত হয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। তবে সেখানেও পড়েছেন জলাবদ্ধতার নতুন দুর্ভোগে।
স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, পদ্মায় তীব্র  স্রোতের কারণে  গতকাল মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে ১৫ টি ফেরির মধ্যে মাত্র দু’টি ফেরি চলাচল করছে। এতে শিমুলিয়া ঘাটে সহস্রাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি’র শিমুলিয়া ঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক চৌধুরী মো. নাসির জানান, গতকাল সকাল থেকেই পদ্মায় তীব্র স্রোত দেখা দেয়। আর তীব্র স্র্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলাচল করতে পারছে না ফেরিগুলো। এ অবস্থায় ১৫ টি ফেরির মধ্যে মাত্র দু’টি ফেরি চলছে। তিনি আরো জানান, ফেরিগুলো দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সামনের দিকে এগুতে পারছে না।
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, টানা ১২ দিনের প্রবল বর্ষণে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন স্থান প্লাবিত হওয়ায় জেলার সাথে দীর্ঘ ৮দিন ধরে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। কিন্তু সড়ক থেকে পানি নেমে যাওয়ার কারণে বুধবার সকাল থেকে সড়ক যোগাযোগ পুনরায় চালু হয়েছে। সকাল থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম-ঢাকা-কক্সবাজারের বাস ছেড়ে গেছে এবং যথারীতি বাস বান্দরবানে প্রবেশ করেছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর