কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীর প্রত্যন্ত গ্রাম সোনারীপাড়া। ব্রহ্মপুত্র নদীর কোল ঘেষা গ্রাম। গত কয়েকদিন ধরে এই এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত। তবে সড়কের পাশের উঁচু এলাকাগুলোতে গতকাল পর্যন্তও পানি ওঠেনি। যারা পানি ওঠার আশঙ্কায় ছিলেন তারা বাড়ি ছেড়ে রাতেই সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। আবার অনেকেই নিজ বাড়ি ছেড়ে যেতে চাননি। কিন্তু আজ ভোরেই ভেঙে যায় শহররক্ষা বাঁধের একাংশ। এতেই পানিবন্দী হয়ে পড়েন তারা।
স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সকাল থেকেই উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছেন। সকাল থেকে উদ্ধার করেছেন ৮ জনকে। এখনো ঘরের চালে অবস্থান নিয়ে আছেন ওই গ্রামের ২০ জন মানুষ।
কথা হয় ওই এলাকার সালেকা বেগম ও ইকবাল হোসেন দম্পতির সঙ্গে। তাদের বিয়ে হয়েছে গত ঈদের ২ দিন পর। বিয়ের আগেই তারা ঋণ নিয়ে কোন রকম মাথা গোঁজার একটি আশ্রয়স্থল গড়েছিলেন। নতুন আসবাবপত্রও তুলেছিলেন ঘরে। কিন্তু ঋণের টাকায় গড়া তাদের নতুন সংসার পানিতে ডুবে গেছে। শুন্য হাতে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সড়কের পাশে অবস্থান করছেন। ইকবালের শ্বশুর বাড়ি থেকে উপহার পেয়েছিলেন ১৭ ইঞ্চি কালার টিভি। সেটিও পানির নিচে এখন। হঠাৎ পানি ঢোকায় ২টা গরু আর কিছু কাপড় চোপড় ছাড়া কিছুই নিতে পারেননি তারা।
এই অবস্থায় বৃদ্ধা মাকে নিয়ে তাদের দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়। এখন পর্যন্ত মেলেনি কোন সহায়তা। সঙ্গে যে খাবার তা শেষ হয়ে যাবে ২ দিনের মাঝেই। ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা নেই। বিশেষ করে গ্রামের মহিলারা চরম বিপাকে পড়েছেন।
উলিপুর থেকে কুড়িগ্রাম যাওয়ার পাকা সড়কটি আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। হতদরিদ্র নাদীপাড়ের মানুষগুলোর প্রতি বছরের সমস্যা এই বন্যা। তবে সাধারণ মানুষ বলছে, ৮৮ কিংবা ১৭ সালের বন্যাতেও এত মানুষ হয় ঘরছাড়া হয়নি। সড়কের পাশ দিয়ে দেখা মিলছে, শুধুই বাড়ির ছাদ।