× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

তানোরে দাদন ট্যাবলেটে নিঃস্ব মানুষ

বাংলারজমিন

সোহানুল হক পারভেজ, তানোর (রাজশাহী) থেকে
১৯ জুলাই ২০১৯, শুক্রবার

রাজশাহীর তানোরে সাধারণ মানুষকে নিঃস্ব করার ট্যাবলেট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে দাদন (সুদ) ব্যবসা। সামাজিক সমপ্রীতি নষ্ট, পারিবারিক কলহ-বিবাদ সৃষ্টিসহ শান্তিপ্রিয় মানুষের সকল অশান্তির মূল কারণ হয়ে উঠেছে দাদন ব্যবসা। উপজেলা জুড়ে চলছে রমরমা সুদের ব্যবসা। মানুষকে নিঃস্ব করে পথে বসানোর অন্যতম উপায় সুদের ব্যবসা। আর এখন সুদ মানুষকে নিঃস্ব করার ট্যাবলেট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে এ ব্যবসা জমজমাটভাবে চলছে উপজেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত পল্লী এলাকায়। ফলে সুদ ব্যবসায়ীদের রোষানলে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে সমাজের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। অথচ এসব দেখার কেউ নেই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তানোর উপজেলার সদরসহ ইউনিয়ন পর্যায়ের বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে একচেটিয়া ব্যবসা করছে কিছু সুদ ব্যবসায়ী নামক রক্তচোষা মানুষ। এদের বাহির থেকে যতই সুন্দর দেখা যাক না কেন, ভেতরটা এতটাই কুৎসিত যা বলে শেষ করা যাবে না। এই সুদের ব্যবসা ইসলাম ধর্মে হারাম (নিষিদ্ধ) অথচ সুদের ব্যবসা এমন এক পর্যায়ে গিয়েছে যে, হজ করে এসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েও সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সবার আড়ালে এমনকি মসজিদে নামাজ পড়তে গেলেও এই সুদখোর লোকজনকে নামাজের প্রথম কাতারে বসে নামাজ পড়তে দেখা যায়। আর এই সুদ শুধু ব্যক্তিগতভাবে নয়, বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় অবৈধ সঞ্চয় সমিতির নামে চলছে একচেটিয়া সুদের ব্যবসা। এখানে লাভবান হচ্ছে কিছু অসাধু লোকজন, যারা এই সঞ্চয় সমিতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। শারীরিক অসুস্থতা, মেয়ের বিয়ে ইত্যাদি আর্থিক প্রয়োজনে বেকায়দায় পড়ে ওইসব সুদ ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ছে মধ্যবিত্ত পরিবার, কৃষক, বর্গা চাষি, স্বল্প আয়ের মানুষসহ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা আর্থিক প্রয়োজন মিটাতে গিয়ে বিপদে পড়ে বাধ্য হয়ে এসব সুদ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিতে ৩০০ টাকা ননজুডিশিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ব্যাংকের ফাঁকা চেক স্বাক্ষর বা টিপ দিয়ে তাদের কাছে জমা দিচ্ছে। আর এই ফাঁকা চেক-স্ট্যাম্পে সাক্ষী নেয়া হয় সুদ ব্যবসায়ীদের পছন্দের ব্যক্তিদের।
এদিকে সুদের টাকা দিতে একটু এদিক-সেদিক হলেই সুদ ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো ফাঁকা চেক-স্ট্যাম্প পূরণ করে আদালতে মামলা ঠুকে দেয়।
 দৈনিক, সাপ্তাহিক এমনকি মাসিক ভিত্তিতে নগদ ঋণ দিয়ে দেড় থেকে দুইগুণ মুনাফা আদায় করে সুদ ব্যবসায়ীরা। সুদ ব্যবসায়ীদের অত্যাচার ও লাঞ্চনার নজিরও রয়েছে অনেক। স্থানীয়রা জানায়, সমপ্রতি উপজেলার চাপড়া এলাকায় ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে সুদ ব্যবসায়ীদের অত্যাচার-লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে জনৈক বিজয় নামের এক স্কুল শিক্ষক আত্মহত্যা করেছে। তানোর পৌরসভা দাখিল মাদ্রাসার এক কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তানোর পৌর সদরের মাছ ব্যবসায়ী জনৈক আকতার হোসেন নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে এ রকম অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। অথচ এই অবৈধ কারবারের মাধ্যমে একদিকে যেমন সুদ ব্যবসায়ীরা সম্পদের পাহাড় গড়ছে, অন্যদিকে সাধারণ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ দিনদিন গরিব ও ভূমিহীনে পরিণত হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সুদ ব্যবসায়ীদের এমন কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও নেই কোনো পদক্ষেপ, তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা না থাকার কারণে ঋণের নামে এসব শোষণ বেড়েই চলছে। সুদ ব্যবসায়ীদের সার্বিক এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। অন্যথায় আত্মহত্যাসহ মারামারি, হানাহানি, দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদসহ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর