ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ছিল নানা আয়োজন। তার মধ্যে অন্যতম ‘ইন্টার পার্লামেন্টারি ওয়ার্ল্ড কাপ’। ১০ দেশের সংসদ সদস্যরা এই বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ফাইনালে ছিল বাংলাদেশ দল। যদিও পাকিস্তানের কাছে হার দেখতে হয় ফাইনাল। অন্যদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সংসদ সদস্য ছিল বাংলাদেশেরই। ১৮ জন সংসদ সদস্য প্রায় ২ মাস প্রস্তুতি নিয়ে ইংল্যান্ডে এসেছিলেন খেলতে। তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন ছিল জয়-পরাজয় বড় কথা নয় এই বিশ্বকাপ থেকে কী পেলেন তারা! এতে দেশের কী উপকার হবে! বিশেষ করে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট স্টেডিয়ামগুলো যেন এক একটি সাজানো বাগান।
যা দেখে মুগ্ধ বাংলাদেশ থেকে খেলতে আসা এমপিরাও। বাংলাদেশে কেন স্টেডিয়ামগুলোর চেহারা এত হতশ্রী! এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে যেমন চোখ ছিল ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ছাড়াও বিসিবি সভাপতি ও এমপি নাজমুল হাসান পাপনের দিকে। তেমনি তরুণ এমপিদের কাছেও। কারণ তাদের চোখেও ছিল ইংলিশ ক্রিকেটের ঐতিহ্য দেখে দারুণ রোমাঞ্চ। তার মধ্যে অন্যতম ফরিদপুর-৪ আসরের সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী ও বাগেরহাট-২ আসনের শেখ সারহান নাসের তন্ময় জানালেন এখান থেকে তারা নতুনভাবে উৎসাহ পেয়েছেন। যা তারা কাজে লাগাবেন বাংলাদেশের খেলার উন্নয়নের জন্য। দৈনিক মানবজমিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তাদের সেই স্বপ্ন ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
‘ক্রিকেট স্টেডিয়ামই বড় অন্তরায়’- নাজমুল হাসান পাপনদেখেন একটি সত্যি কথা হলো যে ফুটবল যে কোনো জায়গাতে খেলা যায়। সাধারণ একটা মাঠ হলেও হয়। কিন্তু ক্রিকেট কিন্তু সব জায়গাতে খেলা যায় না। ক্রিকেট খেলতে হলে মাঠে উইকেট লাগে। নানা রকম উপকরণ লাগে। মাঠের যত্ন নিতে হয় নিয়মিত। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের দেশে এটি একটু কম ছিল। তবে এখন কিন্তু আস্তে আস্তে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় আশার বিষয় আমাদের সংসদ সদস্যরা এখানে এসে খেলে দারুণ উচ্ছ্বসিত। তারা এখন জাতীয় সংসদের একটি স্থায়ী ক্রিকেট দলই করতে চাইছে। তার মানে তারা ক্রিকেট নিয়ে ভাবছে। এখন তাদের আরো সচেতন হতে হবে। এবং নিজেদের এলাকাতে যদি একটু খেলার প্রতি, বিশেষ করে ক্রিকেটের প্রতি একটু নজর দেন তাহলে আমি মনে করি তাহলে অনেক ভালো হবে। অন্তত তৃনমূল থেকে ক্রিকেটার তুলে আনতে সুবিধা হবে।
‘এমনটা আমরা করতে চাই’- জাহিদ আহসান রাসেলআমরা এখানে খেলছি শুধু খেলার জন্য তা নয়। অনেক অভিজ্ঞতাও হলো। সত্যি কথা বলতে কি ইংল্যান্ডের যেমন মাঠগুলো আছে। তেমন আমরাও চাই। চেষ্টা করবো নতুন নতুন স্টেডিয়াম গুলোতে এমন ভাবেই কাজ করতে। অবশ্যই আমাদের চিন্তায় আছে শুধু ক্রিকেটেরই নয়, প্রায় সব খেলার যেন উন্নতি হয়। অবশ্যই এখানেও কিছু শেখার ছিল যা কাজে আসবে।’ দেখেন দেশে কিন্তু খেলা উন্নয়নে প্রচুর কাজ হচ্ছে। বিভিন্ন শহরে স্টেডিয়াম তৈরি হচ্ছে। শুধু যে ক্রিকেট তা নয় সব ধরণের খেলার উন্নতিতে কাজ করছে সরকার। হ্যা, এখান থেকেও কিছু জানা ও শেখার ছিল যেগুলো পরে অবশ্য কাজে লাগবে আমাদের।
খেলায় আগ্রহ ফেরাতে হবে- নিক্সন চৌধুরীআমি কখনো ভাবিনি ক্রিকেটার হবো বা খেলবো। রাজনীতিই আমার পছন্দ ছিল। কিন্তু এখানে খেলে মনে হচ্ছে কেন ক্রিকেটার হলাম না! আসলে আমরা যারা এখানে ক্রিকেট খেলতে এসেছি সবার এলাকাতে জনসাধরণ তা জানেন। যে কারণে অবশ্যই তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন আমাদের ফলো করছেন যে আমরা তাদের জন্য কি করবো। এটি সত্যি যদি আমরা আমাদের নিজ নিজ এলাকায় একটু মন দেই খেলার প্রতি তাহলে অবশ্য উন্নতি সম্ভব। বিশেষ করে তরুণদেরকে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে কাজ করতে হবে। নয়তো তারা মাদক বা অন্যান্য দিকে ধাবিত হয়। এছাড়াও আরো একটি বিষয় হলো প্রায় প্রতিটি উপজেলাতেই মিনি শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম তৈরির কাজ চলছে। এখানেও যার যার এলাকায় এমপিদের ভূমিকা রাখতে হবে।
স্বপ্ন দেখি, কাজও করতে হবে- শেখ তন্ময়এখানে খেলে খুব ভালো লাগলো। প্রায় প্রতিটি স্টেডিয়াম সাজানো বাগানের মতো। হ্যা, আমরাও স্বপ্ন দেখি এই ধরনের স্টেডিয়াম আমাদের দেশেও হোক। শুধু স্বপ্ন দেখলেতো হবে না কাজ করতে হবে। এখন আশা করছি আমাদের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এখানে আছেন। তিনি নিজেও দেখছেন যে আমাদের কি ঘাটতি এখনো আছে। তিনিও আমাদের জানিয়েছেন যে এই সব নিয়ে কাজ করবেন। হ্যা, বাংলাদেশ ক্রিকেটেও কিন্তু কাজ হচ্ছে। একেবারে হচ্ছে না বললে ভুল হবে। গেল ১৫ বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দেখেন কতটা এগিয়েছে। ফুটবল নিয়ে যথেষ্ট সময় দেয়া হয়। এখন আমাদের কাজ হবে অবশ্য নিজ নিজ এলাকাতেও এমন মাঠ করার চেষ্টা করা। আমাদের খুলনাতে স্টেডিয়াম আছে, সেটির উন্নতির জন্য কাজ হচ্ছে। তবে বড় কথা হচ্ছে শুধু মাঠ থাকলেতো হবেনা, এখানে যেমন যোগাযোগ ব্যাবস্থা, আবাসন বেশ উন্নত সেগুলোর দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে।