মূলধন ঘাটতি পূরণে বিশেষ প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংককে ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ৬ বছরের জন্য এ ছাড় দেয়া হয়েছে। এ কারণে বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি কমেছে। পাশাপাশি আগামী ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে মূলধন ঘাটতির খাতা থেকে বাদ পড়বে ব্যাংকটি। তবে শুধু বেসিক নয় অন্যান্য ব্যাংকের ছাড় নেয়ার আবেদনও এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেবল ছাড় দিয়ে বেসিক ব্যাংককে উদ্ধারের চেষ্টা করলে সমস্যার সমাধান হবে না। পাশাপাশি এই ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তবে বেসিক ব্যাংকে উদ্ধারের জন্য ছাড়ের বিকল্প ছিল না বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, এরকম বিশেষ সুবিধা দেয়ার কোনো নীতিমালা নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেসিক ব্যাংকের ঋণমান অনুযায়ী ৫ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করার কথা। কিন্তু ব্যাংক তা শতভাগ সংরক্ষণ করতে পারেনি। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে, যা মোট সংরক্ষণ চাহিদার ৪২ শতাংশ। যদিও এর সিংহভাগ ইতিমধ্যে সংরক্ষণ করেছে বেসিক ব্যাংক। তবে বাকি ৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা আগামী ৬ (২০১৯-২০২৪ সাল পর্যন্ত) বছর ধরে ধাপে ধাপে (প্রতি প্রান্তিকে নির্ধারিত অঙ্কের ৪ ভাগের এক ভাগ) সংরক্ষণের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ বেসিক ব্যাংককে ৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে বর্তমান বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি ২৩৬ কোটি টাকা, যা গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রাস্তিকে ছিল ৩ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। এতে মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি কমেছে ৩ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা।
বেসিক ব্যাংকের বিভিন্ন আর্থিক সূচক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া নিয়মে বেসিক ব্যাংকের ঋণ-আমানত রেশিও (এডিআর) হওয়ার কথা ছিল ৮৫ শতাংশ। কিন্তু গত মার্চে ব্যাংকটির এডিআর ছিল ১১৩.৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করে তা থেকে ৮৫ টাকা ঋণ বিতরণের কথা। কিন্তু বেসিক ব্যাংক ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ঋণ দিয়েছে ১১৩ টাকা ৩৯ পয়সা, যা আগ্রাসী ব্যাংকিং হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া ব্যাংকটিতে সীমাহীন দুর্নীতি ও ঋণ অনিয়মের ফলে বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫৮.২৪ শতাংশ। ব্যাংকটি গত মার্চ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে ১৫,১১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় অনিশ্চিত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮,৪৫০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ৫৬ শতাংশ।
বেসিক ব্যাংকের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা (সিএফও) নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪২ শতাংশ সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। বাকি ৫৮ শতাংশ সংরক্ষণ করতে হবে আগামী ছয় বছরে। প্রভিশনে বিশেষ ছাড় দেয়ায় মূলধন ঘাটতি কমে এসেছে।
উল্লেখ, ২০০৯ সালে শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে চেয়ারম্যান করে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছিল সরকার। ওই সময় এমডি হিসেবে নিয়োগ পান কাজী ফখরুল ইসলাম। পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ঋণের নামে ব্যাংকটির সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এরপর থেকেই খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি ও লোকসানে ধুঁকছে ব্যাংকটি। ২০১৪ সালে দুর্নীতির দায়ে শেখ আবদুল হাই বাচ্চু পদত্যাগ করেন এবং এমডিকে অপসারণ করা হয়।