× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

স র জ মি ন শিশু হাসপাতাল /প্রতিদিনই বাড়ছে রোগী

প্রথম পাতা

মোহাম্মদ ওমর ফারুক
১৯ জুলাই ২০১৯, শুক্রবার

সকাল এগারোটা। ডেঙ্গু আক্রান্ত সাত মাসের সন্তানকে নিয়ে এসেছেন আকলিমা আক্তার। রাতেই টের পেয়েছেন সন্তানের গায়ে জ্বর। এ অবস্থায় পরদিন সকালেই হাজির শিশু হাসপাতালে। আকলিমা আক্তার বলেন, কখনোই ভাবিনি ডেঙ্গু হবে। এখানে আসার পর চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলেছেন ডেঙ্গুর প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন। ডাক্তার বলেছেন ভর্তি হওয়া লাগবে না।
এদিকে হাসপাতালে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। বর্হিবিভাগে প্রতিদিন ত্রিশ থেকে চল্লিশজন করে ডেঙ্গু রোগী আসছেন। এর মধ্যে যেসব রোগীর অবস্থা খারাপ তাদের তাৎক্ষনিকভাবে এখানে ভর্তি করানো হচ্ছে। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন গড়ে আট থেকে দশ জন শিশুকে ভর্তি কারানো হচ্ছে। প্রতিদিনই এই সংখ্যাটা বাড়ছে। গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ৫০ জনের মতো। জুন মাসের শুরু থেকে গত দেড় মাসে ১৭০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে এই হাসপাতাল থেকে। এর মধ্যে মারা গেছে ২ শিশু। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সাঈদ সাফি আহাম্মেদ বলেন, যে দু’টি শিশু মারা গেছে তাদের অন্য হাসপাতাল থেকে এখানে রেফার করা হয়েছিল। একেবারে শেষ সময়ে। ওই সময়ে আমাদের কিছুই করার ছিলো না। আমরা সবসময়ই চেষ্টা করি শিশুদের সর্বোচ্চটা দেয়ার। তাছাড়া আমাদের এখানে ডেঙ্গু রোগীর জন্য আলাদা সেল রয়েছে। যেখানে আমরা ডেঙ্গু রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি।

তারপরও যদি মনে হয় রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক তখন আমরা তাকে ওয়ার্ডে ভর্তি দেই। ৬৮০ জন ধারনক্ষমতার এই হাসপাতালটির বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ওয়ার্ডেই দুই থেকে চারজন করে ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ২নম্বর ওয়ার্ডে দেখা যায় পাঁচ বছরের শিশু সামিয়াকে চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। সে গত দশদিন ধরে ভর্তি হাসপাতালে। অবস্থা খারাপ হওয়ায় নেয়া হয়েছিল আইসিইউতে। এখন অবস্থা কিছুটা ভালো। কথা হয় তার অভিভাবক মাহবুব আলমের সাথে। তিনি বলেন, প্রথমে আমরা বুঝতে পারিনি তার ডেঙ্গু হয়েছে। পরে হঠাৎ করে একদিন জ্বর এক’শ চারে চলে গেছে। তারপর দ্রুত মুগদা হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্ত সেখানে দুইদিন রাখার পর কোনো ধরনের পরিবর্তন আসেনি। তাই আমরা এখানে নিয়ে এসেছি। খুবই খারাপ অবস্থা ছিলো। তিন দিন আইসিইউতে ছিলো। এখন একটু ভালো।

একই ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছে দুই বছরের আবিদ। গতকাল ভর্তি হয়েছে এখানে। আবিদের মা সামিয়া সুলতানা বলেন, এখানে ভর্তির একদিন আগেই বুঝতে পারি বাবুর ডেঙ্গু হয়েছে। কারণ ডেঙ্গুর লক্ষণ তার মধ্যে ছিলো। তাই সকালেই এখানে চলে আসি। এখানকার ডাক্তারও  খুব সহযোগিতা করছে।

১নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আড়াই বছরের শিশু শয়ন। পাঁচ দিন ধরে ভর্তি এই ওয়ার্ডে। শিশুটির মা কেয়া আক্তার বলেন, কোনো আগাম লক্ষণ দেখা যায়নি শয়নের। এক রাতে হঠাৎ খিচুনি দিয়ে সংজ্ঞা হারায়। পরে দুই ঘণ্টা ধরে মাথায় পানি দিয়ে রাতেই নিয়ে আসি এখানে। এখন একটু ভালো আছে। এই ওয়ার্ডে দায়িত্বে থাকা ডাক্তার সুষময় প্রামানিক  বলেন, এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মধ্যে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেশি। জ্বরের মাত্রা কম, দৃশ্যমান র‌্যাশ বা দাগ না হওয়া, এমনকি শরীরে পর্যাপ্ত ব্যথা না হওয়ায় অনেকেই বুঝতে পারছেন না যে তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কি না।

এদিকে হাসপাতালের আইসিইউতে  ৩রা জুন থেকে প্রায় ১৮জন চিকিৎসা নিয়েছেন। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য তিনটি বেড বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। আইসিইউ’র দায়িত্বে থাকা সহযোগী অধ্যাপক ডা. সফিউল হক বলেন, সবচেয়ে ক্রিটিক্যাল রোগীদের এখানে আনা হয়। এই পর্যন্ত প্রায় ১৮জন রোগীকে আমারা সুস্থ করে তুলেছি। এই সংখ্যাটা আরো বাড়ছে। এখন প্রতিদিন গড়ে তিনজন রোগীকে আমরা পর্যবেক্ষণে রাখছি। তিনি রোগীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যত বেশিবার ডেঙ্গু হবে, তত বেশি জটিল আকার নিয়ে হাজির হবে।  ডেঙ্গু হয়েছে সন্দেহ হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রচুর পানি, তরল খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, তাজা ফলের রস খেতে হবে। জ্বর ও ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামলের বাইরে অন্য কোনো ব্যথার ওষুধ অথবা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মোহাম্মদপুর, মুগদা, মিরপুর থেকে আসা রোগীর সংখ্যাই এখানে বেশী।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর