× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সিলেটে ধর্ষিতার স্বামীর ফরিয়াদ

শেষের পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২০ জুলাই ২০১৯, শনিবার

‘গরিব বলে কী বিচার পামু না’- কথাগুলো বলে অঝোরে কেঁদে ফেললেন মহসিন মিয়া। ঘরে ধর্ষিতা স্ত্রী। সবার কাছে ছুটছেন। সবাই পুলিশের হাওলা করলেন। কিন্তু পুলিশ শুরু থেকে করছে টালবাহানা। ঘটনার ৪ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনো মামলা রেকর্ড করেনি। কোম্পানীগঞ্জের ওসি তাজুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সাব-ইন্সপেক্টরকে পাঠিয়েছিলাম। তার বক্তব্য নেগেটিভ।
এরপরও বিষয়টি আমি দেখছি।’ পুলিশের এই নাটকীয়তায় আরো বেশি কাতর হয়ে পড়েছে ধর্ষিতা। এখন প্রভাবশালী ধর্ষকদের তোপের মুখে পড়ার আশঙ্কাও তাদের। ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে।

আলোচিত এ ধর্ষণের ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ামাত্র তোলপাড় চলছে এলাকায়। মহসিন মিয়া। পেশায় কারেন্টের মিস্ত্রি। মূল বাড়ি সিলেটের নবীগঞ্জ উপজেলার সাতাইয়ান এলাকায়। মহসিন প্রায় ৯ বছর ধরে বসবাস করেন কোম্পানীগঞ্জে। বর্তমানে তিনি ভোলাগঞ্জ বাজারের আবদুল জলিলের বাসার ভাড়াটিয়া। বিয়েও করেছেন পার্শ্ববর্তী ছনবাড়ি গ্রামে। বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকে তার কাজ-কর্ম কম। এ কারণে সংসারে অভাব-অনটন দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় স্থানীয় এক ঠিকাদার মঙ্গলবার রাতে ‘যোগালী’ কাজের জন্য নেয় তাকে। শরীফ নামের ওই ঠিকাদারের কাছ থেকে এডভান্স টাকা নিয়ে বাসায় খরচপাতি করে দিয়ে যান মহসিন। গোটা রাত তিনি ‘যোগালী’ কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ভোরে বাসায় এসে দেখেন দরজা খোলা। ঘরের ভেতর মেঝেতে বসে নির্বাক হয়ে আছে স্ত্রী। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে। আর বিছানার উপর কাঁদছে শিশু সন্তান। স্ত্রীকে বার বার ডাকলেও সাড়া পাচ্ছেন না। একপর্যায়ে অঝোরে কেঁদে ফেলেন স্ত্রী। স্বামীকে জানান ঘটনা। ঘটনা শুনে নির্বাক হয়ে যান তিনি। তখন বাইরে অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছিল। এই বৃষ্টির মধ্যে ধর্ষিতা স্ত্রী ও কোলের শিশুকে নিয়ে স্থানীয় কয়েকজন সমাজপতির দ্বারস্থ হন তিনি। সবাই তাকে থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শ মতো বুধবার ভোরে তিনি বৃষ্টিতে ভিজে কোম্পানীগঞ্জ থানায় যান। সেখানে গিয়ে প্রথমে ডিউটি অফিসারকে ঘটনাটি বলেন। মহসিন মিয়া জানান- ডিউটি অফিসার তার স্ত্রী ও তাকে আলাদা আলাদা ভাবে বেশ কয়েকবার এই ঘটনা জিজ্ঞেস করেন। এরপর তিনি থানায় বসিয়ে রাখেন।

বেলা ১টার দিকে থানায় আসেন ওসি। তিনি ঘটনাটি শুনে তাদের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। হাতে ধরিয়ে দেন একটি কাগজ। ওই কাগজ নিয়ে মহসিন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে এলে সেখানে তার স্ত্রীকে ভর্তি করা হয়। নির্যাতিত ওই মহিলা জানিয়েছেন- তিনি প্রায় ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার বড় মেয়ে দাদীর কাছে ও ছোটো মেয়ে তাদের কাছে থাকে। ছোটো মেয়েকে নিয়ে তিনি খাটের উপর ঘুমিয়ে ছিলেন। গভীর রাতে তার ঘরের দরোজার উপরের অংশের খিল ভেঙে প্রবেশ করে বাসার মালিক আবদুল জলিল। এরপর সে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার উপর। এ সময় নিজের সম্ভ্রভ রক্ষা করতে তিনি জলিলের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করেন। জলিল তাকে মারধোর করে। ধর্ষক জলিলের কাছ থেকে রক্ষা পেতে তিনি তাকে ‘ধর্মের পিতা’ বানান। আল্লাহ্‌-রসূলের দোহাই দেন। কিন্তু কোনো কথাই শুনেনি জলিল। একা ঘরে তাকে ধর্ষণ করে। এদিকে- যাওয়ার সময় জলিল ধর্ষিতার পেটে লাথি দেয়। বলে- ঘটনাটি কাউকে জানালে তাকে হত্যা করা হবে। জলিলের লাথির কারণে তার গর্ভের ৫ মাসের সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান ওই মহিলা। লাথির পর থেকে তলপেটে ব্যাথা শুরু হয়।

পরে রক্তপাত হয় বলে জানান ওই ধর্ষিতা। এদিকে- ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গতকাল শুক্রবার সকালে তাদের রিলিজ দেয়া হয়। ওসমানী থেকে ছাড়া পেয়েই মহসিন মিয়া স্ত্রীকে নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় যান। সেখানে তিনি ডাক্তারী পরীক্ষার কাগজপত্র জমা দিয়ে ভোলাগঞ্জ ফিরেছেন। ধর্ষিতা ও তার স্বামী দাবি করেছেন- কাগজপত্র নিয়ে থানায় গেলে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ধর্ষিতাকে নিয়ে কটাক্ষপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। এবং ধমক দেন। পুলিশের এই আচরণে তারা কাতর হয়েছেন বলে জানান। গতকাল বিকালে কোম্পানিগঞ্জ থানার ওসি তাজুল ইসলাম মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘ওসমানীর কাগজপত্র থানায় জমা দেয়া হয়েছে। সন্ধ্যায় ওই মহিলা ও তার স্বামীকে থানায় ডেকে নিয়ে আসবো।

ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে এ ব্যাপারে মামলা হবে এবং ধর্ষককে পুলিশ গ্রেপ্তার করবে বলে জানান তিনি।’ ধর্ষিতার স্বামী জানিয়েছেন- ধর্ষক প্রভাবশালী। সব ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে। আমাকেও ম্যানেজের চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি চাই বিচার। পুলিশের কাছে বার বার ছোটাছুটি করলেও পুলিশ তার মামলা রেকর্ড করছে না। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর তাকে হুমকি দেয়া হয়েছে। মহসিন মিয়া বলেন- অপরাধ দু’টো। একটি হচ্ছে আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আর অপরটি হচ্ছে আমার স্ত্রী গর্ভে থাকা ৫ মাসের সন্তানকে হত্যা করেছে। দু’টো অপরাধের বিচার আমি চাই। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- আবদুল জলিলের এই আচরণ নতুন না। ভোলাগঞ্জ বাজারে তার রয়েছে কয়েকটি কলোনি। এসব কলোনি হচ্ছে জলিলের অপরাধের মূল আস্তানা। এর আগেও নারী কেলেঙ্কারীর ঘটনায় দু’দফা পুলিশে আটক হয়েছিল আবদুল জলিল।

এলাকার মানুষ তাকে গিয়ে মুচলেকার মাধ্যমে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছেন। এবার তার এলাকার সম্পর্কের খালাকেও সে ধর্ষণ করলো। কিন্তু এবার তার পাশে কেউ নেই। জলিলের কলোনিতে নিয়মিতই বসে মাদক ও জুয়ার আসর। পাপ আস্তানা হিসেবে তার কলোনি পরিচিত। সেটি জানে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের কয়েকজন সাব-ইন্সপেক্টর। রহস্যজনক কারণে জলিলের আস্তানা সম্পর্কে পুলিশ নীরব। সম্পর্ক থাকার কারণেই ধর্ষণ ও ৫ মাসের গর্ভের সন্তান নষ্ট করার ঘটনায় পুলিশ মামলা নিতে টালবাহানা করছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর