অদক্ষ নার্সদের টানাহেঁচড়াতে পৃথিবীর আলো দেখার আগেই মায়ের গর্ভে মৃত্যু হয় নবজাতকের। এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের নার্সদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনা নীরবে ঘটলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন তা ভাইরাল হয়ে গেছে। হাসপাতালের সেবার মানও নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ক্ষোভের কথা লিখেছেন। সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও জেলার সচেতন নাগরিকরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। জানা যায় কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ কুমরা-কাপন গ্রামের আউয়াল হাসান গত রোববার সকালে তার গর্ভবর্তী স্ত্রী সুমনা বেগমকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি করান। এ সময় দায়িত্বরত নার্সরা সুমনার অবস্থা দেখে প্রথমে নরমাল ডেলিভারির কথা বলেন। পরে সিজারের পরামর্শ দেন।
সিজারের জন্য ১ ব্যাগ রক্ত ও ওষুধ নিয়ে আসার কথাও বলেন। নার্সদের পছন্দের ফার্মেসি থেকে ওষুধ ও রক্ত কিনে আনার জন্য আউয়াল হাসানের সঙ্গে নাসর্রা তাদের মনোনীত একজন লোক দেন। কিন্তু আউয়াল নার্সদের দেয়া লোককে বিদায় করে তুলনামূলক কম দামে অন্য ফার্মেসি থেকে ওষুধ ও রক্ত নিয়ে এসে দেখেন, নার্সরা সুমনাকে তার শাশুড়ি আছিয়া বেগমের কাছ থেকে ডেলিভারি কক্ষে নিয়ে গেছেন। ২০ মিনিট পরে একজন নার্স এসে আউয়ালকে বলেন, আপনার বাচ্চা মারা গেছে। স্ত্রীকে বাঁচাতে হলে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যান। একথা বলে নার্সরা সবাই সটকে পড়েন। এ সময় আউয়াল স্ত্রী ও বাচ্চার (অর্ধেক ভেতরে ও বাইরে) অবস্থার অবনতি দেখে চিৎকার করলে সুয়েব নামের এক লোক আউয়ালকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন এবং বলেন, এটা চিৎকার করার জায়গা নয়, বাইরে গিয়ে চিৎকার কর। আউয়াল স্ত্রীকে বাঁচাতে প্রথমে শহরের নূরজাহান প্রাইভেট হাসপাতলে নিয়ে যান। নূরজাহান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সামলাতে না পারলে পুরাতন হাসপাতাল রোডস্থ আল-হামরা প্রাইভেট হাসপাতালে সুমনাকে ভর্তি করেন। বিকাল ৫টায় ডা. হাদী হোসেন অপারেশন করে মৃত (মেয়ে) বাচ্চা বের করেন। এ বিষয়ে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. পার্থ সারথি দত্ত কানুনগো বলেন, তিন জন গাইনি বিশেষজ্ঞ অনেক চেষ্টা করেও ডেলিভারি করতে পারেন নি। পরে ওই রোগীকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে রেফার করা হয়। টেনেহিঁচড়ে মারার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। জেলা রোগীকল্যাণ সমিতির সহসভাপতি প্রবীণ আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. ছাদিক আহমদ বলেন, এই ঘটনাটি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোক। এদের কারণেই এই ঐতিহ্যবাহী হাসপাতালের সুনাম দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। তারা বলেন, ডাক্তার ও নার্সরা রোগীদের প্রতি আরো মানবিক হওয়া প্রয়োজন। যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা নিন্দনীয় ও অমানবিক।