মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেত্রী প্রিয়া সাহার নালিশ নিয়ে নিন্দা আর প্রতিবাদের ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সচেতন মানুষ মাত্রেই এ ঘটনাকে প্রিয়া সাহার সাহার সাম্প্রদায়িক উষ্কানি, হটকারি মন্তব্য বলে তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অনেকেই তার বিরুদ্ধে তদন্ত ও রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় তাকে বিচারের মুখোমুখি করার কথাও বলেছেন। সাংবাদিক, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নানা শ্রেনী পেশার মানুষ এই নিন্দায় সামিল হয়েছেন। সেইসব মন্তব্য থেকে নির্বাচিত কজনের মন্তব্য তুলে ধরা হলোঃ
পীর হাবিবুর রহমান, নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রিয়া সাহার কলংকিত রাষ্ট্রদ্রোহী মিথ্যা অভিযোগের জবাব, অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দিতে হবে! সরকারকে তদন্তের মাধ্যমে বের করতে হবে এই রাষ্ট্রবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে কারা জড়িত, কি তাদের উদ্দেশ্য? এটা এসাইলামের জন্য নয়,এসাইলামের জন্য রাষ্ট্রের বিরুদ্বে এতো বড় অভিযোগ আনতে হয়না। প্রিয়া সাহার অভিযোগে সম্প্রীতির বাংলাদেশ ঘুরে দেখা মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলারও বিস্মিত। তিনি বলেছেন, এখানে এক ধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রাখেন। প্রিয়া সাহার অভিযোগ সত্য নয়।
যারা গভীর দেশপ্রেমে বিশ্বাসী তারা আর যাই হোক প্রিয়া সাহার বিকৃত জঘন্য মিথ্যাচারের পক্ষে সাফাই গাইতে পারেননা। রাষ্ট্রকে গভীর তদন্ত করতে হবে। আসল রহস্য উদঘাটন করতে হবে। বাংলাদেশ সকল ধর্মবর্ণের মানুষের দীর্ঘ সংগ্রাম ও রক্তদানের বীরত্বের মুক্তিযুদ্ধের ফসল। এখানে ধর্মীয় সম্প্রীতির বন্ধন হাজার বছরের। এখানে মানুষে মানুষে সম্পর্ক ধর্মের ওপর নয়,আত্মার ওপর।
মিতালী হোসেন, লেখকধন্যবাদ প্রিয়া সাহা। সামান্য ব্যক্তি স্বার্থের জন্য মাতৃভূমির সন্মানকে লুন্ঠিত করার যে অনন্য নজির আপনি সৃষ্টি করলেন, সেটা ইতিহাস হয়ে থাকবে।
মীরজাফর, ঘসেটি বেগম, জগৎ শেঠরা যুগে যুগে জন্মায়।
আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি শুধু দেশকে নয়, আপনি অপমান করলেন বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের। কারণ, আপনি জানেন আমরাও জানি
বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা আপনার মত করে ভাবে না।
আশিক হাসান, সরকারি কর্মকর্তা সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ওভাল অফিসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্যাতিত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সাথে মতবিনিময় কালে একজন সংখ্যালঘু মহিলা নিজেকে বাংলাদেশী পরিচিতি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জানায় বাংলাদেশে হিন্দু-বৌদ্ধ এবং খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের সর্বমোট ৩৭ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ৭০ লক্ষ ব্যক্তি মহিলার ভাষায় উরংধঢ়ঢ়বধৎ বা গুম হয়ে গেছে এবং সেই মহিলা আরও জানায় এখনও ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘুরা ভীতি নিয়ে বসবাস করছে। মহিলার নিজস্ব ঘরবাড়ি জমিজামা সব কিছু মুসলিম মৌলবাদী দল কেড়ে নিয়েছে এবং এই কাজে বর্তমান সরকার নাকি সেই মৌলবাদী দলকে পরোক্ষভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছে।
হতে পারে এই মহিলাটি কোন কারনে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্থ এবং কোন কারনে সে বিচার পায়নি। কিন্ত সে কিভাবে এই মনগড়া মিথ্যা তথ্য ৩৭ মিলিয়ন আর ১৮ মিলিয়নের হিসাব দেয় ? এধরনের একটি গুরুত্বপূর্ন অনুষ্ঠানে এধরনের তথ্য শুধুমাত্র কি তার নিজস্ব গ্রীনকার্ডের সুরক্ষা পাওয়ার জন্যই কি না? অথবা এর পেছনে আর কোন আন্তজার্তিক লবি কাজ করছে তা অতিস্বত্তর বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থাসমূকে একযোগে খুঁজে বের করার জন্য একযোগে কাজ করা উচিত। এবং এধরনের অসাধু উদ্দেশ্যে, বিকৃত তথ্যর বিরুদ্ধে সরকারিভাবে প্রতিবাদ জানানো উচিত বলে আমি মনে করি। আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডদের তালিকায় যারা সরকারের বিশেষ পর্যায়ে আছেন তাদের কাছে অনুরোধ করছি বিষয়টি উর্ধ্বতন মহলের গোচরে এনে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করুন। আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসি তাই এধরনের মিথ্যাচার কোন ক্রমেই আমাদের কাম্য নয়।
এবং এখানে একটি কথা বলে রাখা ভাল, আমাদের সকলের মনে রাখা দরকার এই সংখ্যালঘু মহিলার কথাকে সমগ্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনোভাব বলে এক কাতারে দাঁড় করাবেন না। আমাদের দেশ সকল সম্প্রদায়ের এবং সকলের।
শান্তা তৌহিদা, শিক্ষিকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রমাণ করতে আমরা যারা এক প্রিয়া সাহাকে ঘৃণাবর্ষণ করতে গিয়ে কেউ কেউ গোটা একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে বাক্যবাণে-শব্দবাণে ক্ষতবিক্ষত করেছি, তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাই আমার বন্ধু, সহপাঠী, সহকর্মী, প্রতিবেশীদের কাছে। সংখ্যালঘু শব্দকে আমি মনেপ্রাণে ঘৃণা করি। কিন্তু এ সত্য ভুলে গেলে চলবে না যে, সবার আগে দেশ...
এ দেশ তোমার আমার বাংলাদেশ। আর, মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান। আজকের সূর্য জানান দিক, আমরাই বাংলাদেশ...অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।
মাকসুদুল হাসান রনি, মিডিয়া কর্মী দেশের বাহিরে এসে দেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করা গর্হিত অন্যায়।
প্রিয়া সাহার অভিযোগ খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে! তার এ অভিযোগ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কোন উপকারে তো আসবেই না, বরং দেশে অস্থিরতা তৈরি করবে মনে হয়। সহজ সরল মনে প্রশ্ন হচ্ছে , সরকারের উর্ধ্বতন মহলে যার এতো ঘনিষ্টতা সে কেন এটা করতে গেল? রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবার পথ সুগম করার জন্য যদি এটা করে থাকেন তবে তার অভিযোগ দেশদ্রোহিতার শামিল বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।
অনিকেত রাজেশ, কবি ও লেখক বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যেকোনো নেতা চাইলেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দেখা করতে পারবেন না। এটা বোঝার জন্য খুব বেশি জ্ঞানী হবার দরকার নেই। প্রিয়া সাহা কোন লবি ব্যবহার করে এই সাক্ষাতের সুযোগ পেলেন তা খতিয়ে দেখা জরুরি। অথবা বিশেষ কারো প্রতিনিধি হিসেবে তাকে আমেরিকায় পাঠানো হয়েছে কিনা সেই প্রশ্নটিও গুরুত্বপূর্ণ। এর পেছনে গভীর কোন মতলব আছে বলেই ধরে নেয়া যায়।
এই মহিলাকে আজকের আগে পর্যন্ত আমি চিনতাম না। চেনার কোন কারণ বা প্রয়োজন ছিল না বলেই চিনতাম না। যেটুকু জানলাম, যে পরিম-লে তার বিচরণ ও কর্মকা-ের পরিধি বিস্তৃত, তাদের কাউকে কাউকে আমার কাছে দেশ ও রাষ্ট্রের স্বার্থে বিপজ্জনক মনে হয়। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে এই মহিলার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাই। একই সাথে তার পেছনের শক্তি চিহ্নিত হওয়া জরুরি।