পাকিস্তান ক্রিকেটের অগ্রগতিতে সিনিয়র ক্রিকেটাররা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান বলে মন্তব্য করেছেন দলের সাবেক কোচ ওয়াকার ইউনুস। তার দাবি, সিনিয়ররা অবসরে যাওয়ার বদলে তাদের ক্যারিয়ার দীর্ঘ করার চেষ্টা করেন। এতে তরুণ ও সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারদের সুযোগ পেতে অপেক্ষায় থাকতে হয়। পাকিস্তানের কিংবদন্তির পেসার ওয়াকার ইউনুস বলেন, ‘সিনিয়র ক্রিকেটাররা অবসরে যেতে চায় না। এমনকি তাদেরকে কেউ সম্মানের সহিত অবসর নেয়ার জন্য বলেও না।’
নির্দিষ্ট কারো নাম উচ্চারণ করেননি ওয়াকার। তবে ডানহাতি এই কিংবদন্তি পেসারের ইঙ্গিতটা শোয়েব মালিক ও মোহাম্মদ হাফিজের দিকেই গেছে। এবারের বিশ্বকাপে দু’জনের কারোরই পারফরমেন্স ভালো হয়নি। ৩৮ বছর বয়সী হাফিজ রাউন্ড রবিন লীগের ৮ ম্যাচে মাত্র একটি ফিফটি করেন।
আর ৩৭ বছর বয়সী শোয়েব মালিকের ব্যাট থেকে ৩ ম্যাচে আসে মোট ৮ রান। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে শূন্য মারার পর তাকে বসিয়ে হারিস সোহেলকে খেলায় পাকিস্তান। প্রথম ম্যাচেই ৮৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে দলের জয়ে অবদান রাখেন হারিস। ওয়াকার বলেন, ‘অনেক বছর ধরে আমরা এটাই দেখে আসছি। শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপ দলে সিনিয়রদের ডেকে আনে টিম ম্যানেজমেন্ট। কারণ তারা হেরে যাওয়াকে ভয় পায়।’
স্থানীয় পত্রিকা ডেইলি জ্যাং’কে দেয়া সাক্ষাতকারে পাকিস্তান ক্রিকেটের আরো কয়েকটি সমস্যা তুলে ধরেন ওয়াকার তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমাদের জয় পেতে যতটা কষ্ট করতে হয়েছে, তা হওয়ার কথা ছিল না। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমরা দল নির্বাচনের সময় ফিটনেস ইস্যু, সিনিয়রিটি- এসব বিষয়গুলোকে যথাযথ গুরুত্ব দেই না।’ বিশ্বকাপ চলাকালীন অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের মাঝপথে ‘হাই’ তুলে ব্যাপক সমালোচিত হন সরফরাজ।
বর্তমান কোচ মিকি আর্থার দায়িত্ব নেয়ার আগে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেন ওয়াকার। তার অধীনে ২০১১ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে পাকিস্তান। বোর্ডের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় পদত্যাগ করেছিলেন ওয়াকার। আর্থারের সঙ্গেও সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছে পাকিস্তানের। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিজয়ী কোচের বিরুদ্ধে ফিটনেসকে গুরুত্ব না দেয়ার কঠিন অভিযোগ আনা হয় হয়েছে। এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ইনজামাম-উল-হক। আর্থার-ইনজামামের মাঝে কোনো সমস্যা দেখছেন না ওয়াকার। তিনি বলেন, ‘প্রতিবার বিশ্বকাপ শেষে আমরা একই চিত্র দেখি। যেখানে শুধু চরিত্রগুলো বদলায়। অথচ সামনের দিকে যেতে হলে আমাদের আগে বের করতে হবে যে কোথায় ভুল হচ্ছে। প্রতি চার বছরে আমরা একই অজুহাত দেই। অধিনায়ক বদলাই, কোচ বিদায় করি, প্রধান নির্বাচককে সরিয়ে দেই, ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামোকে প্রশ্নবিদ্ধ করি- এগুলোই বারবার ঘুরে ফিরে আসে।’ পাকিস্তানের হয়ে ৮৭ টেস্ট ও ২৬২ ওয়ানডে খেলেছেন ওয়াকার। টেস্টে ৩৭৩ ও ওয়ানডেতে দেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বাধিক ৪১৬ উইকেট নেন এই সুইং মাস্টার। ২০০৩ বিশ্বকাপের পর অবসরে যান তিনি।