× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

টলছে এশিয়ার রপ্তানি বাজার ঝুঁকিতে বৈশ্বিক অর্থনীতি

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৪ বছর আগে) জুলাই ২২, ২০১৯, সোমবার, ৮:৪৮ পূর্বাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব পড়ছে এশিয়ার রপ্তানি বাজারে। টানা দু’মাস ধরে কমেছে সিঙ্গাপুরের রপ্তানি হার। গত বছরের তুলনায় এই বছরের জুন মাসে দেশটির রপ্তানি হার কমেছে প্রায় ১৭.৩ শতাংশ। গত সপ্তাহান্তে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, কমছে সিঙ্গাপুরের প্রবৃদ্ধির হারও। গত প্রান্তিকের তুলনায় এই প্রান্তিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমেছে ৩.৪ শতাংশ। সিঙ্গাপুরের রপ্তানি ও প্রবৃদ্ধির হারে এই হ্রাস বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পতন এশিয়ার বাজারের টলায়মান অবস্থার লক্ষণ। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বজুড়ে।
ঝুঁকির মুখে রয়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি।
সংকট আসন্ন?
বিশ্বের সবচেয়ে বাণিজ্যনির্ভর দেশগুলোর একটি সিঙ্গাপুর। বৈশ্বিক বাণিজ্যের আবহাওয়া পরিমাপের সূচক ধরা হয় তাদের বাণিজ্যের উত্থান-পতনের হারকে। বিশ্লেষকরা সিঙ্গাপুরের সামপ্রতিক বাণিজ্যের তথ্যকে আসন্ন সংকটের লক্ষণ হিসেবে দেখছেন। এশিয়ার বাণিজ্য পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অদূর ভবিষ্যতে এশিয়ার বাণিজ্য গুরুতর সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে। সিঙ্গাপুরের বাণিজ্যে পতন তার সতর্কতা মাত্র।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব
অনেক বিশ্লেষকই দাবি করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এশিয়ার বাজার। সিআইএমবি প্রাইভেট ব্যাংকের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল বিষয়ক অর্থনীতিবিদ সং সেং উন বলেন, পুরো অঞ্চলজুড়েই একই ঘটনা ঘটছে। প্রায় ১০ বছর ধরে স্থিতিশীল থাকার পর বিশ্বজুড়েই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমছে। আর এমন সময়ে বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে শুরু হয়েছে বাণিজ্যযুদ্ধ। এর প্রভাব হবে গুরুতর। এই মুহূর্তে যদি কোনো জাদুকরের জাদুকাঠির ছোঁয়ায় এই বাণিজ্যযুদ্ধ শেষও হয়ে যায়, তাতেও অবস্থা পুরোপুরি ঠিক হবে না। বড় ধরনের আঘাত পাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি।
ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্যিক তথ্য বিশ্লেষণ করলেও খারাপ পূর্বাভাসই পাওয়া যায়। এই তিন দেশের জন্য জুন মাসের বাজার ছিল তুলনামূলকভাবে মন্দ। গত নয় মাসের মধ্যে জুনে ভারতের রপ্তানির হার হ্রাস পেয়েছে ৯.৭ শতাংশ। এদিকে, চীনের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি হারও গত বছরের তুলনায় ৮.৯৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানি হারে। দেশটির রপ্তানি হার কমেছে ১৩.৫ শতাংশ। এই তিনটি দেশই পাম তেল থেকে শুরু করে রাসায়নিক পদার্থসহ নানা ধরনের পণ্য রপ্তানি করে থাকে চীনে। গত সপ্তাহে চীন জানিয়েছে, বিগত তিন দশকের মধ্যে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে তাদের প্রান্তিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল সর্বনিম্ন। কর্মকর্তাদের দাবি, এর পেছনে আংশিক দায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্যযুদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা অর্ধেকের বেশি চীনা পণ্যেই শুল্কারোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামপ। যার মানে হচ্ছে, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে হয়তো ক্রেতাদের কাছ থেকে শুল্কারোপের খরচ তুলে নিতে হচ্ছে বা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির হার কমিয়ে দিতে হচ্ছে। একইসঙ্গে চীনা কারখানাগুলোয় পণ্য সরবরাহকারী দেশগুলোও আক্রান্ত হচ্ছে ট্রামেপর শুল্কারোপে। আর বর্তমান অবস্থা দেখে এই সংকট অবসানের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
জাপানি গবেষণা সংস্থা নমুরার সামপ্রতিক এক প্রতিবেদন অনুসারে, আগামী মাসেও এশিয়ার রপ্তানি বাজারের এই দুরাবস্থা বজায় থাকবে। এর জন্য চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার অবস্থার উন্নতি না হওয়াকে দায়ী করেছে নমুরা। বলেছে, দুই দেশের মধ্যকার আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ার অনিশ্চয়তা বেড়েছে বিশ্বের কর্পোরেট জগতে। বিনিয়োগ সমপর্কিত সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না বহু প্রতিষ্ঠান। এতে বাণিজ্যিক সংরক্ষণবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে আর এশীয় অঞ্চলে এটা অস্ত্রের মতো আঘাত হানছে।
ভবিষ্যতে যা হতে পারে
আগামী দিনগুলোয় পরিস্থিতি কোনদিকে, কখন মোড় নেবে তা এখনো অনিশ্চিত। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার পরিস্থিতি মুক্ত বাণিজ্য নীতিমালা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার শুরু কিনা তাও নিশ্চিত নয়। তবে অনেক পুঁজিবাদী অর্থনীতিবিদ তেমনটাই বলছেন। ট্রামপ ইতিমধ্যে ভিয়েতনামের ওপর শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছেন। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধে অবশ্য লাভবান হচ্ছে ভিয়েতনাম। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, তাইওয়ানের ওপরও শুল্কারোপ করতে পারেন ট্রামপ।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ও ভোক্তার অঞ্চল হচ্ছে এশিয়া। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক জানিয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনীতির ৫২ শতাংশ থাকতে পারে এই অঞ্চলের দখলে। অর্থাৎ, বৈশ্বিক অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হয়ে ওঠবে এই অঞ্চলের বাণিজ্য। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বাণিজ্য নীতিমালা চলতে থাকলে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এশিয়ার অর্থনীতি। এতে দীর্ঘ মেয়াদে থেমে যেতে পারে এশিয়ার উন্নতি। আর চক্রের ঘূর্ণাবর্তে তার প্রভাব পড়বে পুরো বিশ্বে। (বিবিসি অবলম্বনে)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর