তীব্র গরমে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। রোদের তাপে হাঁসফাঁস মানুষের। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন বৃষ্টির। কিন্তু বৃষ্টি হলেও মুক্তি নেই। অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাজধানীর রাস্তাঘাট। তলিয়ে যায় অলিগলি। মাত্র ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই জলজটের সৃষ্টি হয় নগরজুড়ে। দীর্ঘ সময় সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তি বাসিন্দাদের।
রাজধানীর শুক্রাবাদ ও রাজাবাজার এলাকায় মানুষের তুলনায় নেই তাদের চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত রাস্তা। ছোট ছোট সড়ক ব্যবহার করেই নিয়মিত চলাচল করতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের। সামান্য বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় সড়কগুলো। অধিকাংশ এলাকা হাঁটু পানির নিচে তলিয়ে যায়। কোথাও কোথাও কোমর পর্যন্ত পানিতেও তলিয়ে যায়। পূর্ব রাজাবাজারের মুদি দোকানি মিজানুর রহমান বলেন, তার দোকান বেশ নিচুতে হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই পানি প্রবেশ করে দোকানের ভেতর। বাধ্য হয়ে বৃষ্টির সময় দোকান বন্ধ রাখতে হয়। এলাকার পানিতে অনেক দুর্গন্ধ হয়। একবার দোকানে পানি প্রবেশ করলে দুই তিনদিন লাগে গন্ধ যেতে। রাজাবাজার এলাকায় সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন বস্তিবাসী। অল্প বৃষ্টিতেই ঘরের ভেতর দুর্গন্ধযুক্ত ও ময়লা পানি প্রবেশ করে। বাধ্য হয়ে ইট বিছিয়ে রাখতে হয় ঘরের ভেতর। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে বিপদে পড়তে হয়। এলাকাবাসীর একমাত্র বাহন রিকশা। বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সুযোগে ভাড়া বাড়িয়ে তিন থেকে চারগুণ করে রিকশাওয়ালারা। বেসরকারি চাকরিজীবী ওবায়দুল ইসলাম বলেন, আমার অফিসে যেতে নির্দিষ্ট পোশাক ব্যবহার করে যেতে হয়। কিন্তু বৃষ্টির সময় সেই পোশাকের দফারফা হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে বাড়তি পোশাক নিয়ে অফিসে যাই। সাধারণ দিনে অফিসের উদ্দেশে সকাল ৮ টায় বের হলেও বৃষ্টির দিনে বের হতে হয় সকাল ৭ টায়। তার পরও সময়মতো অফিস যাওয়া দায় হয়ে পড়ে। এই দৃশ্য শুধু শুক্রবাদ ও রাজাবাজারের নয়। মিরপুরের জলজটের অবস্থা আরো ভয়াবহ। অল্প বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে সেখানে নৌকা চলাচল করতে দেখা যায়। মিরপুরের শেওড়া পাড়া, কাজীপাড়া, ডিওএইসএস, পুরাতন ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড, চকবাজার, বঙ্গবাজার, আনন্দবাজার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, নিউমার্কেট, আগারগাঁও, মহাখালী, বনানী, কাকলী, বিজয়নগর, রামপুরা, বনশ্রী হাজিপাড়া, যাত্রাবাড়ী, সচিবালয় এলাকা, গুলিস্তান, বংশাল, লালবাগ, আজিমপুর, পলাশী, বকশিবাজার, উর্দু রোড, সাহেব বাজার, আজিমপুর, পল্টনসহ প্রায় গোটা ঢাকারই একই চিত্র। এম এম লাভলী পরিবহনের চালক রমজান আলী বলেন, পানিতে রাস্তা তলিয়ে গেলে গতি কমিয়ে চলতে হয়। ফলে ভয়াবহ যানজট তৈরি হয়। আবার ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করলে তা বিকল হয়ে যায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তমা সাহা বলেন, সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট থৈ থৈ করে। এসময় যানবাহনও পাওয়া যায় না। প্রয়োজনে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হয়। অল্প বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেলে নিম্ন আয়ের মানুষ কাজে যেতে পারেনা। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে তাদের। মিরপুর কাজীপাড়ার এক বস্তির বাসিন্দা রোকন মিয়া বলেন, আমার বাড়ির চালে দুটি ছোট নৌকা রেখে দিয়েছি। শুকনার সময় ভ্যান চালালেও বৃষ্টির সময় নৌকা দিয়ে লোক পারাপার করি। বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে অল্প বৃষ্টিতেই নগরে বন্যা দেখা দেয়। নগরবাসী ময়লা আবর্জনা ফেলে ড্রেনগুলো ভরাট করে ফেলে। শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ ড্রেনই কার্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। রাজধানীর আশেপাশের নিম্নাঞ্চল ও জলাভূমি ভরাট হয়ে গেছে। ফলে শহরের পানি বের হওয়ার কোন জায়গা নেই। অন্যদিকে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেখানেও পানি টানতে পারে না। এছাড়া নদী খনন ও জলাশয় উদ্ধারে কর্তৃপক্ষের নেয়া পদক্ষেপ অত্যন্ত ধীরগতি ও সময় উপযোগী হয় না।