পাকুন্দিয়ায় নানার বাড়িতে নবম শ্রেণির ছাত্রী স্মৃতি আক্তার রিমা (১৪) গণধর্ষণ-হত্যার ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে প্রেমের ফাঁদ পেতে গণধর্ষণে নেতৃত্ব দেয়া পিয়াস মিয়া (১৮)। কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাসলিমা আক্তারের খাসকামরায় সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দীর্ঘ তিন ঘণ্টা পিয়াসের এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে রাতেই পিয়াসকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাকুন্দিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম শফিকুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় পিয়াস মিয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পিয়াস ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে। নানার বাড়ির ঘর থেকে ডেকে নিয়ে রিমাকে প্রথমে সে নিজে ধর্ষণ করে বলেও জবানবন্দিতে জানিয়েছে পিয়াস। এর আগে গত শনিবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ পশ্চিম মাদার বাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে পিয়াসকে র্যাব-১৪, কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের সদস্যরা গ্রেপ্তার করেন। পরে রোববার বিকালে তাকে পাকুন্দিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়।
পিয়াস মিয়া পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী গ্রামের সৌদি প্রবাসী রুবেল মিয়ার ছেলে। সে পাকুন্দিয়া পাইলট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির কারিগরি শাখার ছাত্র। স্কুলছাত্রী রিমাকে অপহরণের পর গণধর্ষণ করে হত্যা মামলার সে ২নং আসামি।
পুলিশ ও র্যাব সূত্র জানিয়েছে, পিয়াস মিয়া এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। প্রেমের অভিনয়ে সে কিশোরীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে গত বুধবার (১৭ই জুলাই) রাতে সুকৌশলে স্কুল ছাত্রীকে নানার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে প্রথমে সে নিজে ধর্ষণ করে এবং পরে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদেরকে নিয়ে গণধর্ষণ করে। স্বীকারোক্তিতে পিয়াস জানিয়েছে, দুই মাস আগে রিমার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর সুবাদে রিমা নানাবাড়িতে আসলে পিয়াস তার সাথে দেখা করতো। ঘটনার রাতেও পিয়াসের ডাকে রিমা ঘর থেকে বের হয়। পরে বাড়ির পুকুরপাড়ে নিয়ে গিয়ে রিমাকে সে ধর্ষণ করে। এ সময় জাহিদ মিয়া পাহারায় ছিলো। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পিয়াস আদালতে দেয়া তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ধর্ষণের কথা স্বীকার করলেও রিমার মৃত্যু নিয়ে পরিষ্কার কোন তথ্য দেয়নি। ফলে রিমার মৃত্যু রহস্যের জট খুলেনি। মামলার প্রধান আসামি জাহিদকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলেই এই রহস্যের জট খুলবে বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহিদকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ ও র্যাবের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। জাহিদ মিয়া পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী গ্রামের খুরশিদ মিয়ার ছেলে। নিহত স্মৃতি আক্তার রিমা পার্শ্ববর্তী হোসেনপুর উপজেলার জামাইল গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের কন্যা ও হোসেনপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী। গত বৃহস্পতিবার (১৮ই জুলাই) সকাল ১১টার দিকে পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের গাংধোয়ারচর গ্রামে নানার বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ের একটি বরই গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় স্কুল ছাত্রী রিমার লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ওইদিনই বিকালে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে স্মৃতি আক্তার রিমার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্তে ধর্ষণের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন। এ ঘটনায় শুক্রবার (১৯ শে জুলাই) রাতে নিহত স্কুল ছাত্রীর মা আঙ্গুরা খাতুন বাদী হয়ে পাকুন্দিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৩)/৭ ধারায় দায়ের করা এই মামলায় জাহিদ মিয়া (২০), পিয়াস মিয়া, রুমান মিয়া (১৮) ও রাজু মিয়া (১৮) এই চার জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, বিয়েতে ব্যর্থ হয়ে রিমাকে অপহরণের পর জোরপূর্বক গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয়।