× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রতিবন্ধিত্বের পথে মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ সেই সুরাইয়া

এক্সক্লুসিভ

মাগুরা প্রতিনিধি
২৪ জুলাই ২০১৯, বুধবার

মাগুরা শহরের দোয়ারপাড়ে সাবেক দুই ছাত্রলীগ নেতার সশস্ত্র ক্যাডারদের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হয়ে জন্ম নেয়া শিশু সুরাইয়া ৪ বছর পার করে ৫ বছরে পা দিয়েছে ২৩শে জুলাই। তবে প্রতিটি জন্মদিন যেন তার জীবনে নতুন করে শঙ্কার জন্ম দিচ্ছে। চিকিৎসকের মতে, যত দিন যাচ্ছে প্রতিবন্ধিত্বের দিকে এগুচ্ছে সুরাইয়া। অন্যদিকে  বিচার কাজের ধীর গতির পাশাপাশি মামলার সব আসামি গত ক’বছরে জামিন পেয়ে প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে। অপরদিকে, অর্থের অভাবে একরকম থমকে আছে সুরাইয়ার চিকিৎসা। সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভূঁইয়া এখনো একজন চা বিক্রেতা। অসচ্ছল এই পিতার পক্ষে ঘটা করে জন্মদিন পালন করা হয় না। তবে গত বছর জন্মদিনে সুরাইয়ার ভাই বোনসহ এলাকার শিশুরা নিজেদের মতো করে দোকান থেকে কেক কিনে জন্মদিন পালন করেছিল।
এবার সুরাইয়ার শরীর জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় সেটা হবে না এমনই জানালেন তার বাবা। এ বিষয়ে কথা প্রসঙ্গে সুরাইয়ার মা নাজমা বেগম প্রথমে সৃষ্টি কর্তার প্রতি শুকরিয়া জানিয়ে বলেন, ‘সবার সহযোগিতায় আমার মেয়ে আজ পৃথিবীর আলো দেখেছে। তবে সে ভালো করে দাঁড়াতে-হাঁটতে পারে না। ইতিমধ্যে গুলিবিদ্ধ ডান চোখটি নষ্ট হয়ে গেছে।

পাশাপাশি ডান হাত কাজ করে না’। নাজমা বলেন, ‘আমার স্বামীর চা দোকানের সামান্য আয়ে সংসার ভালোভাবে চলে না। যে কারণে উন্নত চিকিৎসা দিতে পারছি না। অথচ মাগুরার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন সুরাইয়ার উন্নত চিকিৎসা দিতে পারলে সে অনেকটা স্বাভাবিক হতে পারতো’। সুরাইয়ার পিতা বাচ্চু ভূঁইয়া বলেন, ‘৪ বছরে এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা বিভিন্ন সময় মিটিং করছে মামলার যাতে আমরা সঠিক ভাবে সাক্ষ্য দিতে না পারি।’এদিকে মামলার বাদী ঘটনার দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত মোমিন ভূঁইয়ার ছেলে রুবেল ভূঁইয়া বলেন, ‘মামলায় চার্জ গঠন হয়েছে ১ বছর। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। মামলার ধার্য তারিখে আদালতে গেলে পিপি জানান বিচারক নেই। এভাবে চললে আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবো’। তিনি মামলাটি দ্রুত সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে শেষ করতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন। রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন জানান, এ ঘটনায় নিহত মোমিন ভূঁইয়ার ছেলে রুবেল ঘটনার পর ২০১৫ সালের ২৬শে জুলাই মাগুরা সদর থানায় ১৬ জনের নামে মামলা করেন। পুলিশি তদন্তে তোতা, আয়নাল ও মুন্না নামে ৩ জনের নাম নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হয়।

২০১৫ সালের ৩০শে নভেম্বর মোট ১৭ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। পরে মামলাটি মাগুরার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে ২০১৮ সালের ২৮শে মার্চ চার্জ গঠনের মাধ্যমে ৮ই মে সাক্ষির দিন ঠিক হয়। কিন্তু অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক না থাকায় এখন পর্যন্ত তা গ্রহণ হয়নি। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৩শে জুলাই মাগুরায় ঘটে মাতৃগর্ভে শিশু গুলিবিদ্ধের এ ঘটনা। যা জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়। পৃথিবীতে গুলিবিদ্ধ কোনো মা ও তার নবজাতকের এরকমভাবে বেঁচে যাওয়ার নজির এটাই প্রথম। ঘটনার দিন স্থানীয় আধিপত্য ও চাঁদাবাজির বিরোধ নিয়ে শহরের দোয়ারপাড়ের বাসিন্দা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ভূঁইয়ার সঙ্গে  সাবেক পৌর ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান আজিবরের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিতে কামরুল ভূঁইয়ার বড় ভাই বাচ্চু ভূঁইয়ার ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নাজমা বেগম, চাচা আব্দুল মোমিন প্রতিপক্ষের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন। ওই দিন রাতেই মাগুরা সদর হাসপাতালের ডাক্তাররা গুলিবিদ্ধ সংকটাপন্ন নাজমা বেগমকে সিজারের মাধ্যমে গর্ভে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ মেয়ে শিশুটিকে জন্ম দেন। যার নাম দেয়া হয় সুরাইয়া। মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় গুলিটি শিশুর পিট দিয়ে ঢুকে বুকের ডান পাশ দিয়ে বের হয়ে ডান চোখে আঘাত করে। গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়ার আঘাত ছিল মারাত্মক সে কারণে ২৫শে  জুলাই শনিবার রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকারি সহযোগিতায় দীর্ঘ ২৫ দিনের চিকিৎসা শেষে ঢাকা থেকে সে বছর ২০শে আগস্ট মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়াকে নিয়ে তার মা-বাবা বাড়িতে ফিরে আসেন। অন্যদিকে পরের দিন বিকালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ বৃদ্ধ আব্দুল মোমিন ভূঁইয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তার শরীরে পুনরায় অস্ত্রোপচার করা হয় এবং তিনি রাত ১টায় মারা যান। এ ঘটনায় নিহত মোমিনের পুত্র রুবেল ভূঁইয়া জেলা ছাত্রলীগের সেই সময়ের সহসভাপতি সেন সুমনকে প্রধান আসামি করে সরকারি দলের ১৬ জনের নামে মাগুরা সদর থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দব্য আইনে মামলা করেন। এ মামলার অন্যতম আসামি পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য মেহেদী হাসান আজিবর ওরফে আজিবর শেখ সোমবার ১৭ই আগস্ট দিবাগত রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর