দুধ নিয়ে গবেষণা করে সরকারের একজন সচিব কর্তৃক হুমকি পাওয়ার প্রায় অর্ধমাস পর গবেষক অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুকের পাশে দাঁড়ালো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গত ২৫শে জুন পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধসহ বেশ কয়েকটি ভোগ্য পণ্যের ওপর গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর থেকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। শুধু তাই নয়, নিজ বিভাগ ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদভুক্ত চারটি বিভাগই বিষয়টি নিয়ে অধ্যাপক ফারুকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এ নিয়ে সারা দেশে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজ অধ্যাপক ফারুকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিবৃতি, মানববন্ধন করে। কিন্তু চুপ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। অবশেষে বিলম্বে হলেও সংগঠনটি অধ্যাপক ফারুকের পাশে দাঁড়িয়েছে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এহেন আচরণের নিন্দা জানানো হয়। যদিও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি শুরু থেকেই এ সংক্রান্ত সকল তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
গত ১৮ই জুলাই শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের এক সভায় অধ্যাপক আ ব ম ফারুককে হেনস্তা করার এ ধরনের অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা করা হয়। এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসহ সচেতন মহল বিবৃতি, মানববন্ধন, পত্রপত্রিকায় লেখনী, টক শোর মাধ্যমে অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের গবেষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং তার পাশে দাঁড়ানোয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আ ব ম ফারুক কর্তৃক পাস্তুরিত তরল দুধে এন্টিবায়োটিকসহ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানসমূহের উপস্থিতি বিষয়ক একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব গবেষণা-বিশ্লেষণকে ভুল এবং অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ৭১ টেলিভিশনের একটি টক শোতে অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের সঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব যে রূঢ় ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন, তা অনাকাঙ্ক্ষিত ও শিষ্টাচার বহির্ভূত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এহেন আচরণের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছে। এতে বলা হয়, কোনো গবেষণার ফলাফল ভুল অথবা শুদ্ধ, তা পাল্টা গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করতে হয়। মন্ত্রণালয় এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে গবেষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার যে হুমকি দিয়েছে, তা যেকোনো গবেষকের গবেষণার স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। এ ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন গবেষকদের গবেষণায় নিরুৎসাহিত করবে এবং তাতে জাতির প্রভূত ক্ষতি হবে বলে শিক্ষক সমিতি মনে করে। আমাদের বিশ্বাস, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/ব্যক্তিবর্গ এরই মধ্যে তাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ জনস্বার্থ সম্পর্কিত যেকোনো বিষয়ে নিয়মিত গবেষণা পর্যালোচনা করবে- এটাই স্বাভাবিক। জ্ঞান অন্বেষণ ও বিশ্লেষণের ফলাফল জনস্বার্থে প্রকাশ করা যেকোনো গবেষকের দায়িত্বের অংশ এবং মৌলিক অধিকার। অধ্যাপক আ ব ম ফারুক জনস্বার্থে তার গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেছেন। সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে দুধসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর উপাদানসমূহ দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহকে আহ্বান জানাই। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ ও মানবকল্যাণে শিক্ষকরা সর্বদা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে এসেছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।