× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

গণপিটুনি থামছেই না /মা হত্যার বিচার চেয়ে রাজপথে তুবা

প্রথম পাতা

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
২৪ জুলাই ২০১৯, বুধবার

ঢাকার উত্তর-পূর্ব বাড্ডা এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুরের তাসলিমা বেগম রেনুর চার বছরের কন্যা শিশু তুবার সঙ্গী এখন কান্না। মায়ের কথা মনে করে বারবার কান্না করছে সে। অথচ মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু আজ মা হত্যার বিচার চেয়ে অবুঝ শিশু তুবা এখন রাস্তায় মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছে।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে নিহত তাসলিমা বেগম রেনুর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে রায়পুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছে স্থানীয় এলাকাবাসী। লক্ষ্মীপুর-রায়পুর সড়কের প্রাইম ব্যাংকের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে সর্বস্তরের মানুষ। রায়পুর উপজেলা সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এ সময় সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে মা হত্যার বিচার চেয়ে অবুঝ শিশু তুবাও মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে শুধু কান্না করেছে।


এ সময় বক্তব্য রাখেন- রায়পুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মারুফ বীর জাকারিয়া, যুবলীগ নেতা তানভীর  কামাল, হোসেন সরদার ও জাকির হোসেন প্রমুখ। মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেয় নিহত রেনুর স্বজনসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশাসহ সর্বস্তরের মানুষ। এ সময় বক্তারা বলেন, ছেলে ধরা গুজবেই তাসলিমা বেগম রেনুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাসলিমা বেগম রেনু ছিল একজন ভালো মানুষ। কিন্তু তাকে আজ এভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হবে, এটা কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না। এ হত্যাকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান তারা। এ সময় পরিবারের লোকজন গুজব ছড়িয়ে মানুষ হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এদিকে, নিহত তাসলিমা বেগম রেনুর বড় ভাই আমেরিকা প্রবাসী আলী আজগর তার ফেসুবক আইডিতে ঘটনার পরেরদিন বোনকে নিয়ে এক আবেগময় স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসে তিনি বলেন- ‘আমার বোন আমার চেয়ে বয়সে ১০ বছরের ছোট হবে। রেনু ওর নাম। গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে ওর। ছোটবেলা হতে কিছুটা নার্ভাস প্রকৃতির রেনু ছিল খুব মেধাবী। স্কুলে কখনও দ্বিতীয় হয়নি। সব সময় ফার্স্ট গার্ল। বাবা রেনুকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সে ডাক্তার হবে নয়তো সরকারি বিসিএস কর্মকর্তা। কিন্তু সংসার জীবনটা রেনুর সুখের হয়নি। ছোট ছোট দুটি সন্তান নিয়ে সে একাই জীবন অতিবাহিত করছিল।

সংসার ভেঙে গেছে বেশ আগেই। বাবা ও মা মারা গেছেন। রেনু নিজের মতো করেই সন্তানদের ভালো স্টুডেন্ট হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিল। ছোট বাচ্চাটার মাত্র চার বছর বয়স। মৃত্যুর আগের রাতে কিছুটা অস্থির দেখাচ্ছিল রেনুকে। ছোট বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য সকালে স্কুলে যাবে।

সকাল হলে বাসার কাছে প্রাইমারি স্কুলটায় ভর্তির বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই অপরিচিত দুটি বখাটে ছেলে তাকে অহেতুক প্রশ্ন করতে শুরু করলে সে নার্ভাস হয়ে যায়। রেনুর বেশ মানসিক অস্বস্তি হয় এ ধরনের জেরায়। সে গুছিয়ে কথা বলতে পারে না। তার মতো সাধারণ মেয়ে সারাজীবনে চাকরি সংসার সমাজ ইত্যাকার বহির্মুখী অনুষঙ্গকে আত্মস্থ করতে পারেনি

তার অন্তর্মুখী স্বভাবের জন্য। যেমন পুলিশ, মাস্তান, ক্ষমতাবান, ডোমিনেটিং সোসাইটি, প্রভাব বিস্তারকারী মানুষজনের সামনে পড়লে সে ভাষা হারিয়ে ফেলতো। কিন্তু মনে মনে সে ভাবতো অন্যরা তো বেশ মানিয়ে নিয়ে চলছে ফিরছে, সে পারছে না কেন?

কেন এসব পরিস্থিতিতে পড়লে তার কথা বলার স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে সে। কেন সে পরিষ্কার করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে না, কেন সে মানুষের প্রশ্নের (অযাচিত) পরিষ্কার জবাব দিতে পারে না। কেন সে ছোটবেলায় দোষ না করেও মায়ের কড়া ধমকে চুপ করে ছিল, কেন সে স্বামীর অন্যায়েও নিঃশব্দ ছিল, কেন সে পুলিশের নাম শুনলেই অপরাধীর মতো ভয়ে নিজের মধ্যে সেঁধিয়ে পড়তো সে নিজেও জানে না।

সে ভয় পেতো চেনা পরিচিত ঢাকা শহরের এসব কিছুই ছিল সত্য। সেই সত্যটাই তার জীবন নিয়েছে। সেই প্রখর খরতাপের মধ্যে শত শত মানুষের কয়েকজন তাকে নৃশংসভাবে পেটালো। পিটিয়ে তার সারা শরীর থেঁতলে দিলো। শেষ নিঃশ্বাস বের হবার আগে তখনো সে তাকিয়েছিল মানুষগুলোর দিকে। রক্তমাখা মুখ, কপালের মধ্যে রক্তভেজা চুলগুলো ঘামে, রক্তে লেপ্টে আছে, সেই অবস্থায় তাকিয়েছিল মানুষের (মানুষ???!) দিকে। হয়তো শেষ মুহূর্তেও চেষ্টা করছিল গুছিয়ে কিছু বলতে... ভাইগো ও ভাই, আমি এখানে এসেছিলাম আমার বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করাতে।
আমি ছেলে ধরা না। আমার নাম তাসলিমা রেনু। দুটো বাচ্চা আছে আমার। আমি মরে গেলে ওদের কেউ থাকবে না। এখনো যদি আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান আমি মরবো না। আমি সুস্থ হয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে চাই। বাসায় বাচ্চাগুলো আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। কিন্তু বোবার মতো রেনু তাকিয়েই ছিল। ঘোরলাগা চোখে। বিবশ বিহ্বল হয়ে মাটিতে পড়ে যায় রেনু। দুটি হাত, চারটি হাত লাঠি হাতে ক্রমাগত পিটিয়ে পিটিয়ে শেষ করে দিলো্ত- শুধু রেনুর জীবনটা নয়, তার সব স্বপ্ন, তার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ। আমার বোন রেনুর হত্যার ভিডিওটি যারা করেছেন, যারা দেখেছেন, তাদের সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ। আপনারা সবাই অনেক গোছানো মানুষ। পরিপাটি, ফিটফাট, নিরাপদ। রেনু, বোনটা আমার যদি এর ছিঁটেফোঁটাও স্মার্ট হতো।’
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর