শেষের পাতা
টার্গেট কাজীরবাজারগামী পশুবাহী ট্রাক বেকায়দায় ব্যাপারীরা
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২০১৯-০৮-০৯
সিলেট নগরীর প্রবেশমুখে দু’টি অবৈধ পশুর হাট বসানো হয়েছে। গত দু’দিন থেকে বাঁশ দিয়ে এসব হাট প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু এ দু’টি হাটে যেতে চাচ্ছেন না পশু ব্যবসায়ীরা। একে তো হাটের বৈধতা নেই, তার উপর তাদের ব্যবসায়িক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু হাটের নিয়ন্ত্রকরা চান পশু। এ কারণে তাদের টার্গেট সিলেটের প্রধান পশুরহাট কাজীরবাজারগামী পশুবোঝাই ট্রাক। লাঠিয়াল বাহিনী রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে। পশুর ট্রাক দেখলেই তারা দৌড়ে যায়। পশু নিজেদের হাটে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর জবরদস্তি চালায়। শুধু এ দু’টি হাটেই নয়, সিলেটের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা অস্থায়ী পশুরহাটে পশু নিয়ে যেতে চলছে টানাটানি। পুলিশ সক্রিয়। খবর পেলেই ছুটে যাচ্ছে। ব্যাপারীর মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে পশুবাহী ট্রাক গন্তব্যে পৌঁছতে সহযোগিতা করছে। নগরীর টিলাগড় ও লালদিঘীর পাড় এলাকায় বসেছে আরো দু’টি অস্থায়ী পশুরহাট। সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত এই দু’টি হাটে পশু তুলতেও চলছে জবরদখল। কাজীরবাজার পশুরহাটের ব্যাপারীরা জানিয়েছেন- গত কয়েক দিনে সিলেটে এসে ঢুকেছে শতাধিক পশুরবাহী ট্রাক। এসব ট্রাক নিয়ে যেতে সিলেটে শেরপুর, গোলাবাজারের ব্রাহ্মণগ্রাম, লালাবাজার সহ কয়েকটি স্থানে লাঠিসোঁটা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো ক্যাডাররা। তারা পশু নিতে না পারলে চাঁদাবাজি করতো। বুধ ও বৃহস্পতিবার তাদের উৎপাত কিছুটা কম ছিলো। এ কারণে এখনো রাস্তায় কয়েকশ’ ট্রাক পশু নিয়ে আসছে। তারা বলেন- অবৈধ হাটে পশু নামালে সব খোয়ানোর আশঙ্কা থাকে। পুলিশও তাড়িয়ে দেয়। কোনো নিরাপত্তা থাকে না। এ কারণে তারা বৈধ হাটেই পশু বিক্রি করে থাকেন। সিলেটে অবৈধ পশুরহাট নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো হার্ডলাইনে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উচ্ছেদ হচ্ছে না। এগুলোতেও পশু সংগ্রহ করতে টানাটানি চলছে। সিলেটের প্রধান পশুরহাট কাজীরবাজারের ম্যানেজার শাহাদত হোসেন লোলন জানিয়েছেন- গত দুইদিন কোনো ঝামেলা ছাড়াই তাদের হাটে পশু উঠেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। কিন্তু যেভাবে চারদিকে পশুরহাট গড়ে তোলা হচ্ছে তাতে করে আশঙ্কা থেকেই যায়। কারণ- শেষ সময়ে এসে তারা পশু হাটে নিতে রীতিমতো জবরদস্তি চালাবেন। এবার দক্ষিণ অংশে এমন ঘটনার খবর এসেছে বলে জানান তিনি। এদিকে- সিলেট নগর ও জেলার ১৩ টি উপজেলায় ২৯টি স্থায়ী এবং ২৮টি অস্থায়ী গবাদিগশুর হাট বসছে। এসব হাটে এখনো আশানুরূপ পশু ওঠেনি। আজকের মধ্যে পশু উঠে যাবে বলে ধারণা করছেন হাটের মালিকরা। তারা জানিয়েছেন- এবার বাজারে দেশি পশু বেশি। বিশেষ করে খামারিরা চাহিদামতো পশু নিয়ে আসছেন। ওদিকে- সিলেটের টিলাগড়ে এবার সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে হাট ইজারা দেয়া হয়েছে। এ কারণে এবার শাহ্পরাণ এলাকায় দেয়া হয়নি কোনো পশুরহাটের ইজারা। এ কারণে স্থানীয়দের একটি পক্ষ হাট দেয়ার দাবি জানিয়েছে। গতকাল বিকালে বিআইডিসি এলাকায় সিলেট-তামাবিল সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় এলাকায়। আটকা পড়ে শ’শ’ যানবাহন। খবর পেয়ে সেখানে যান উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ। তিনি গিয়ে অনুরোধ করলে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। পরে সাংবাদিকদের কাছে আশফাক আহমদ জানান-খাদিম এলাকাবাসী পশুরহাট বসানোর দাবিতে সড়ক অবরোধ করে রেখেছিল। এ খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধ তুলে নিতে আহ্বান জানাই। স্থানীয়রা আমার ডাকে সাড়া দিয়ে অবরোধ তুলে নেয়। খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আফছর আহমদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- স্থানীয় কিছু লোক সিলেট-তামাবিল সড়কের পাশে গরুরহাট বসাতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন অনুমতি না দেয়ায় তারা সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। সিলেটের বৈধ হাটগুলোতে জরুরি ভেটেরিনারি সেবা প্রদানের জন্য জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তত্ত্বাবধানে এসব হাটে ২৭টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করছে। পশুরহাটে জরুরি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের কার্যক্রম সম্পর্কে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. আতিয়ার রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- মানুষ যাতে নিরাপদ ও সুস্থ পশু কিনতে পারে, অসুস্থ ও অনিরাপদ পশু কেউ যাতে বিক্রি করতে না পারে সেদিকে টিম নজর রাখবে। এবার সিলেটে প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। গত ৩১শে জুলাইয়ের তথ্য অনুযায়ী সিলেটে ৭০ হাজার গরু, ৩ হাজার মহিষ ও ৩৪ হাজার ছাগল-ভেড়া কোরবানির জন্য প্রসু্তত করা হয়েছে। এছাড়া অন্য জেলা হতে বেশ কিছু পশু সিলেটে আসছে, পাশাপাশি অন্য জেলাতেও সিলেট জেলা হতে কোরবানির পশু নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে গতকাল সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মাসিক কল্যাণ ও অপরাধ সভায় পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া পশুবাহী গাড়িতে যাতে কেউ চাঁদাবাজি করতে না পারে এবং কোরবানির পশু কিনতে আসা লোকজন যাতে ছিনতাইয়ের শিকার না হন সেটা নিশ্চিত করার জন্য সকল অফিসারকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে কঠোর হওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।