শেষের পাতা
বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীর আয়োজনে অংশীদার হতে চায় ভারত
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২০১৯-০৮-০৯
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ উদযাপনে অংশীদার হতে আবারো আগ্রহ ব্যক্ত করেছে ভারত। দিল্লি সফরকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এই আগ্রহ প্রকাশ করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে’ ওই সাক্ষাৎ-বৈঠক হয়। বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনে বাংলাদেশ সরকার গৃহীত কর্মসূচির অংশীদার হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এর আগে গত মে মাসে দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকেও একই ধরনের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই সময়ে মোদি বলেছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনে দুই দেশ যৌথ উদ্যোগ নিলে তা আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্ব পাবে। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্কে উন্নতির ক্ষেত্রেও তা ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন। আসছে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মের শত বছর পূর্ণ হবে। আর ঠিক পরের বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশ উদযাপন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। কালক্রমে তার হাত ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার ঠিক আগে আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর শুরু হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এই যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মিত্রবাহিনীর কাছে ১৬ই ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ওই যুদ্ধে কয়েক হাজার ভারতীয় সেনা শহীদ হন। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকারে ফেরার পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের সম্মাননা জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১১ সালে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীকে সম্মাননা জানানো হয়। পরবর্তীতে সম্মাননা পান ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি। ২০১৫ সালের ৭ই জুন বাংলাদেশ সফরে এসে বাজপেয়ীর পক্ষে সেই সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল। অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় শেখ হাসিনাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে অভিনন্দন জানান নরেন্দ্র মোদী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কামালের সঙ্গে আলাপে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ভূয়সী প্রশংসা করেন মোদী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীমান্তে মাদক পাচারসহ সব ধরনের চোরাচালান বন্ধে ভারত সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী চোরাচালান বন্ধ করাসহ একটি নিরাপদ ও কার্যকর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে ভারত সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকার ইতোমধ্যে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং ভারতও মনে করে- এ সমস্যার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। মোদি বাংলাদেশে ঠাঁই নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য আবারও মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন। বিমসটেক এই অঞ্চলের শান্তি ও উন্নয়ন কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে মোদি আশা প্রকাশ করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি রক্ষায় বাংলাদেশকে বিশ্বে রোল মডেল অভিহিত করে বিশেষজ্ঞদের সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি অবলোকন করার জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণের পরামর্শ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বৈঠকে ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান ও আইজিপি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সপ্তম বৈঠকে অংশ নিতে মঙ্গলবার দিল্লি যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল। বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ’র সঙ্গে তার তাৎপর্যপূর্ণ বৈঠক হয়।