× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শ্রীমঙ্গলে ড্যান্ডির নেশায় ঝুঁকছে পথশিশুরা

বাংলারজমিন

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি
১৭ আগস্ট ২০১৯, শনিবার

পলেথিনের প্যাকেটে জুতার গাম (সু-জুতায় ব্যবহৃত আঠা)। পাতলা পলিথিন ফুলিয়ে তার মধ্যে গাম ঢেলে একটু ঝাঁকুনি দেয়। পলিথিনের ভেতর নাক-মুখ ঢুকিয়ে দিয়ে লম্বা দীর্ঘ শ্বাস নেয়া। এরপর দীর্ঘ সময় অনেক কিছু ভুলে নেশার ঘোরে সারা দিন আনন্দে সময় কাটানোর নাম ড্যান্ডি নেশা। আর এই নেশায় বুঁদ হয়ে শ্রীমঙ্গল শহরের পথশিশুরা ড্যান্ডি নামের মরণ নেশার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। শহরের বিভিন্ন কলোনিতে বাস করে এরা। দিন দিন এই মরণ নেশায় ঝুঁকে পড়ছে কিশোররা। প্রতিদিন এরা শহরের নতুনবাজার, শ্রীমঙ্গল স্টেশন রোড, ভানুগাছ রোড, হবিগঞ্জ রোডে, কলেজ রোডে ও রেলস্টেশন এলাকায় সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে অবাধে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়।

শহরের দোকানগুলোতে ৭০-৮০ টাকা দামে এক কৌটা হাতের নাগালেই পাচ্ছে তারা। ড্যান্ডি নামক জুতার গাম মিশানো পলেথিনের প্যাকেটে নিয়ে নেশা করা অবস্থায় আবি রহমান ও ইমন নামে দুই পথশিশুর দেখা মিললো বৃহস্পতিবার বিকালে শহরের কলেজ সড়কে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে। তারা জানায়, তাদের সহপাঠী শুক্কুর, বন্দর, আসর, কাসেম, তুরণ, বন্ধন, সাব্বির, জুনাইদ, আকিব, মণ্ডল, খোকন, মোজাম্মিল, শামিম, রিয়াজ, শ্রাবণ, আরও অনেক পিচ্চি আছে। তারা শহরের ভানুগাছ রোডে পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্টের সামনে ভাঙ্গারির দোকানের সামনে প্রতিদিন সকাল ১১টায় সবাই মিলে ড্যান্ডি খায়। তাদের সঙ্গে আরেকটি বড় গ্রুপ আছে, তারাও সেখানে একসঙ্গে বসে ড্যান্ডি খায়। ফলে শৈশবেই নিভে যাচ্ছে ওদের স্বপ্ন।
ইমন নামের শিশুটি প্রতিদিন ভিক্ষা করে। সে তার সহপাঠী আবি রহমানকে দেখিয়ে বলে, সে তাকে ড্যান্ডি খাইতে শিখিয়েছে। আরেক সহপাঠী কাসেমের ঘরে সে কইছে, ড্যান্ডি খা, মজা আছে। প্রথম খাইছি, যখন মাথায় ঝিমঝিম করে। মাথা ঘুরাইয়া পড়ি যাই। সকালে ঘুম থাইক্যা উইঠা দেখি আমি বাসায় নেই। আমার আম্মা আইছে সকালে টুকাইয়া। হের পর বাসাত নিছে। সে বলে, ‘এর পর থাইক্যা নেশায় ধরছে দেইখ্যা খাই। আজকে একবার খাইছি। শুক্কুর আমারে একটু দিছে। এসময় তার সঙ্গে থাকা আবি রহমান সে বাজারে মাছ টুকায়। সারা দিনের মাছ টুকিয়ে বিক্রি করে ড্যান্ডি কিনে। ইমনকে দেখিয়ে উল্টো দোষ দিয়ে বলে, হে আমারে শিখাইছে। হে তো ড্যান্ডির লাগি ট্রেনে ছাদ থেকে পড়ে রশিদপুর এলাকায় এক পা কাটা পড়ছে, হে এখন আমারে দোষে। ট্রেনের ছাদে তারা ড্যান্ডি নিয়া মারামারি লাগছে। সে জানায়, ড্যান্ডি এখন প্রচুর পোলাপাইনে খায়। সবের নাম চিনি না। খালি বন্দর, কাশেম আর আতিকের নাম চিনি। বড়তার নাম চিনি না।”
ইমন বলে, ‘চৌমুহনাত থাকে শুক্কুর হে এসব সবরে লইয়া প্রতিদিন পাঁচভাইর সামনে ভাঙ্গারি দোকানে ডেইলি খায়। খাইয়া সব মাল টুকানিত যায়। সবটির সঙ্গে পলিথিনে কিছার মধ্যে ড্যান্ডি ঢুকানো থাকে।”
তারা জানায়, শহরের হুসেন, হাসান, বাবু, আরিফ, সুমনের মতো প্রায় শিশুরা বস্তা কাঁধে ঝুলিয়ে সকাল থেকে রাত অব্দি শহরের বিভিন্ন জায়গায় কেউ ভিক্ষা করে, কেউবা মাছ টোকায়। যে বয়সে তারা নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল জীবনের এই মূল্যবান সময়টা পড়ালেখার পরিবর্তে তারা সারা দিন ঘুরে বেড়ায় শহরের অলি-গলিতে ড্যান্ডি নেশার টাকা যোগাড় করতে। টাকা যোগাড় করেই শহরের বিভিন্ন স্থানে তারা একত্রে বসে পড়ে ড্যান্ডি নেশা করতে। অল্প পয়সায় এই নেশা করা যায় বলে পথ শিশুরা ঝুঁকে পড়ছে এই নেশায়। এক জনের দেখা দেখিতে ছড়িয়ে যাচ্ছে অন্যসব শিশুকিশোরে কাছে। শ্রীমঙ্গল সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মহসিন বলেন, এটা এক ধরনের অ্যালকোহল ও অন্যান্য যৌগের সমষ্টি। এ নেশার ফলে এসব শিশু নানা রোগে আক্রান্তসহ দ্রুত কিডনি  বিকল হয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর