× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বালাগঞ্জবাসীর দুঃখ কুশিয়ারা

এক্সক্লুসিভ

মো. আবদুস শহিদ, বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে
১৭ আগস্ট ২০১৯, শনিবার

বালাগঞ্জে নদীপাড়ের মানুষের জীবনযাত্রা কেমন, চারদিকে যখন থইথই পানি, তখন নদীর তীরবর্তী মানুষ কোথায় থাকে, কীভাবে বেঁচে থাকে? এ প্রশ্ন অনেকের মনে উঁকি দেয়। প্রকৃতপক্ষে বর্ষায় পানির সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ করেই তাদের বাঁচতে হচ্ছে বলে নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানিয়েছেন। কুশিয়ারা নদীতে পানি বাড়লেই বালাগঞ্জ বাজার এলাকা এবং উপজেলা প্রশাসনের অফিসপাড়া পানিতে থইথই করে। পানি কমলেই ভাঙে নদীর পাড়। সব মিলিয়ে বর্ষায় বালাগঞ্জবাসীর জীবনে নেমে আসে মহাদুর্যোগ। উপজেলা সদরে নদীর পানি ঢুকলেই পানিতে সয়লাব হয়ে যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকা। বালাগঞ্জ সরকারি ডিএন মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, বালাগঞ্জ তয়রুণ নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বালাগঞ্জ আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা জলামগ্ন হয়ে যায়। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে ব্যাঘাতসহ পাঠদান ব্যাহত হয়।
নদীতে নামার সঙ্গে সঙ্গেই তীরবর্তী স্থানগুলোতে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। এতে বালাগঞ্জ বাজারের দোকানপাঠ ও বাজারের পার্শ্ববর্তী বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিগত কয়েক বছরে বালাগঞ্জ বাজারের একাধিক স্থাপনা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাক্ষসী কুশিয়ারা গিলে খেয়েছে। ভাঙনের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে মানুষের নানা কষ্ট ও ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ অবস্থায় বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সরজমিনে দেখা যায়, বালাগঞ্জ বাজার এবং উপজেলা প্রশাসনিক ভবন কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী স্থানে অবস্থিত রয়েছে। বালাগঞ্জ বাজার থেকে উপজেলা পরিষদে যাতায়াতের রাস্তাটি নদী ভাঙনের কবলে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বর্তমানে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মসজিদ, বালাগঞ্জ বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, পুরাতন থানা ভবনসহ বালাগঞ্জ বাজারের একাধিক স্থাপনা। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিতে থাকা বালাগঞ্জ বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের নিচের মাটি নদীতে ধসে পড়ায় মসজিদটি প্রায় শূন্যাকার অবস্থায় রয়েছে। বর্ষায় নদীর পানি বৃদ্ধি কিংবা বন্যার কারণে বালাগঞ্জ বাজার এলাকা ও উপজেলা সদরের রাস্তাগুলো বেহাল অবস্থায় পরিণত হওয়ায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুশিয়ারার তীরে টেকসই বাঁধ না থাকায় বালাগঞ্জ বাজারসহ উপজেলা সদর এলাকায় বন্যা না হলেও পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। বর্ষার শেষলগ্নে পানি নামলেই এসব এলাকাজুড়ে নদী ভাঙনের তাণ্ডব শুরু হয়। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্ষায় পানি এবং বর্ষা পরবর্তী ভাঙন এ দুই কারণে লোকজন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। সরকারের বড়বড় কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের পরিদর্শনের মধ্য দিয়েই তাদের দায়িত্বের সমাপ্তি ঘটে। এসব সমস্যা সমাধানে অতীতকাল থেকে জোর দাবি উত্থাপন করা হলেও শুধু আশার বাণী শুনানো হচ্ছে। নদীর তীরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে ভাঙন প্রতিরোধ ও বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি নিয়ন্ত্রণে বাঁধ নির্মাণ করা একান্ত প্রয়োজন। না হলে অচিরেই এই স্থানগুলো নদীতে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে কুশিয়ারায় পানি বাড়লেই বালাগঞ্জে নদীপারের অর্ধশতাধিক গ্রামের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকেন তারা। তখন নীরব কান্নায় ভেঙে পড়া অসহায় মানুষের আর্তনাদ কারো কানে পৌঁছায় না। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের এই মহা দুর্ভোগ দেখার পরও জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে বিগত কয়েক বছরে নদীপারের বিশ-পঁচিশটি গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার ভাঙনের শিকার হয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ভাঙনের কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে নাব্য হারাচ্ছে। বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মুনিম বলেন, বর্ষা মৌসুমে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বালাগঞ্জ বাজার এবং উপজেলা সদর এলাকা কারণে-অকারণে কুশিয়ারার পানিতে তলিয়ে যায়। পানি কমলে শুরু হয় ভাঙন। এছাড়া বালাগঞ্জের পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা নদী ভাঙনে আক্রান্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। এতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও বালাগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখা কর্মকর্তা মো. গোলাম বারী বলেন, কুশিয়ারার পানিতে এবং ভাঙনে বালাগঞ্জে প্রতি বছর মানুষের যে পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তা আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। ইতিমধ্যে ভাঙনের ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলো চিহ্নিত করে তালিকা প্রণয়ন এবং বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় এমপির ডিওসহ একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ এবং ভাঙন থেকে মানুষজন রক্ষা পাবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর