× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জাফলং টু সাদাপাথর / ‘ভয়ঙ্কর মৃত্যুফাঁদ’ যেভাবে নিরাপদ

এক্সক্লুসিভ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৯ আগস্ট ২০১৯, সোমবার

আগে থেকেই ভয়ঙ্কর ছিল জাফলং। পরে এই তালিকায় এসে যুক্ত হয় বিছনাকান্দি। সর্বশেষ সাদা পাথর। লোভাছড়াও আছে তালিকায়। এই চার স্থান সিলেটের নজরকাড়া পর্যটন স্পট। ঈদ এলেই এখানে উপচে পড়ে পর্যটকরা। ঘটে বিপত্তি। সাঁতার না জানার কারণে বাড়ে মৃত্যুর মিছিল।
এই চারটি স্পটে কত পর্যটকের মৃত্যু ঘটেছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে স্থানীয়দের মতে এই সংখ্যা শতাধিক। ভয়ঙ্কর মৃত্যুফাঁদ এই পর্যটন স্পটগুলো আতঙ্কের অপর নাম। কিন্তু এবার প্রশাসনের নজরদারি ও সচেনতায় এবার জিরোতে নেমে এসেছে সেই সংখ্যা।

এবার এখনো ঘটেনি মর্মান্তিক কোনো ঘটনা। এর কারণ কী। অনুসন্ধানে জানা গেছে নানা তথ্য। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কেবলমাত্র সচেতনতার অভাবেই মায়াময় পর্যটন স্পটে ঘুরতে এসে লাশ হতে হয়েছে অনেককেই। গত রমজানের ঈদের পর জাফলং ও সাদা পাথরে কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা নাড়া দেয় সবাইকে। এর মধ্যে যারা মারা গেছেন তারা বয়সে অনেকেই তরুণ। কেউ বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজের ছাত্র। পিতা-মাতার আদরের সন্তান। বন্ধু কিংবা পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভ্রমণে গিয়ে হারিয়ে গেছেন চিরতরে। গেল ঈদেও সাদা পাথরে বেড়াতে গিয়ে লাশ হয়েছেন সিলেট সরকারি কলেজের ছাত্র সাইফুল ইসলাম। সাঁতার না জানার কারণে ধলাইয়ে তলিয়ে যান তিনি। কিছুক্ষণ পর তার দেহ ভেসে উঠলে পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে আসে। গত ৭ই জুলাই সাদা পাথর এলাকায় পানিতে ডুবে মারা যান সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র হাসানুর রহমান আবির। তিন বোনের এক ভাই পিতা-মাতার আদরের সন্তান ছিল।

কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে গেল চিরতরে। দুই দিন পর তার লাশ পাওয়া গেল সাদা পাথরেই। শুধু তারাই নয়। জাফলং এবং সাদা পাথরে কাজ করে অনেক পাথর ও বালু শ্রমিক। সাঁতার জানা সত্ত্বেও তাদের হার মানতে হয়েছে উজানের স্বচ্ছ জলরাশির কাছে। গত মাসে সাদাপাথরে পাথর উত্তোলনের সময় মারা গেছে হেলাল মিয়া নামের শ্রমিক। সাদা পাথরের ঘটনায় টনক নড়ে কোম্পানীগঞ্জ প্রশাসনের। এ নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেন কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও বিজেন ব্যানার্জী। উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমদকে সঙ্গে নিয়ে সাদাপাথরে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ শুরু করেন। তাদের প্রচেষ্টায় এখন সাদা পাথরের সেই ভয়ঙ্কর স্থানে ঝুলছে লাল পতাকা। স্রোতপ্রবণ এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাল পতাকা উড়িয়ে যেতে পর্যটকদের বারণ করা হয়েছে। এর বাইরে স্থাপন করা হয়েছে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড। গত মাসে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি সেখানে প্রতিটি নৌকার মাঝিদের হাতে দেয়া হয়েছে লাইফ জ্যাকেট। সাম্প্রতিক সময়ে ইজারায় গেছে সাদা পাথর।

এখন পর্যটকদের অনেকটা দেখভাল করছেন ইজারাদাররা। তারাও নিজেদের ব্যবস্থাপনায় লাইফ জ্যাকেট রেখেছেন। পর্যটকরা চাইলে তাদের জ্যাকেট দেয়া হচ্ছে। আছে প্রশাসনের নজরদারিও। ঈদের দিন থেকে সাদা পাথর এলাকায় পর্যটকদের সুবিধার্থে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পর্যটকদের জন্য যেসব বার্তা দেয়া হয়েছে সেগুলো পালনের নির্দেশ দেয়া হয়। কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী শামীম আহমদ জানিয়েছেন, আমরা সাদাপাথর এলাকায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছি। এখানে পর্যটকরা যাতে দুর্ঘটনার শিকার না হন সে কারণে সতর্কবার্তা রয়েছে। বিজিবি রয়েছে ওই এলাকায়। সব মিলিয়ে সাদাপাথরে শৃঙ্খলা ফেরায় এবার দুর্ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, আমরা চাই না অসতর্কতার কারণে কারো জীবনহানি ঘটুক। প্রশাসন এ ব্যাপারে সক্রিয় রয়েছে। পর্যটকদের নিয়ম মেনে ভ্রমণ করার আহ্বান জানান চেয়ারম্যান। সিলেটের জাফলংয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকা আগে থেকেই মৃত্যুফাঁদ। বছর বছর এখানে মৃত্যুর মিছিল হয়। সাঁতার কাটতে গিয়ে অনেকেই তলিয়ে যান পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জলে। আবার কেউ কেউ চোরাবালিতেও আটকা পড়েন। গত রমজানের ঈদের পরেও এখানে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এবার জাফলং জিরো পয়েন্ট এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ছিল প্রশাসনের। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাফলং এলাকায় পর্যটকদের সতর্ক করে দিয়ে টানানো হয়েছে সাইনবোর্ড। এসব সাইনবোর্ডে লাইফ জ্যাকেট পরে পানিতে নামার পরামর্শ ও অনুরোধ জানানো হয়েছে।

পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। সেখানে হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিয়ে পর্যটকদের সচেতন করা হচ্ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাদা পোশাকে পুলিশের টিম টহলে থাকে। গোয়াইনঘাট থানার ওসি আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন এবার জাফলং, বিছনাকান্দি ও রাতারগুলে বিপুল সংখ্যক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। তাদের নিরাপত্তা দিতে ও দুর্ঘটনা এড়াতে পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করেছে। এর বাইরে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নানাভাবে সচেতন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। জাফলংয়ের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, জাফলংয়ে গত এক যুগে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। এবার ঈদে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। একই অবস্থা ছিল বিছনকান্দিতেও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটন স্পটে সতর্কতা বাড়ানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর