ডেঙ্গুতে রাজধানীর বাসিন্দারা আছেন উচ্চ ঝুঁকিতে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভাষ্য মতে, আইইডিসিআর-এ ডেঙ্গুতে ৭০ জনের সম্ভাব্য মৃত্যুর তথ্য এসেছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৫৩ হাজার ছাড়িয়েছে।
ঈদের ছুটিতে অফিস আদালত বন্ধ ছিল। বাসা-বাড়ি থেকে লোকজন গ্রামে যায়। এ সময়ে বিভিন্ন জায়গায় জমা থাকা পানিতে এডিস মশার প্রজনন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া বর্ষা মৗসুমে নগরীতে বাড়ি নির্মাণ এবং অবকাঠামোর কাজে গর্তে পানি জমেও বিশেষ করে মেট্রো রেলের গর্তে পানি জমে লার্ভা তৈরি হতে পারে। এ কারণে এখনও উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানী।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা মানবজমিনকে বলেন, ডেঙ্গু আর বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। এখন আশা করছি ডেঙ্গুর প্রকোপ আস্তে আস্তে কমে আসবে। মানুষ ঈদের ছুটিতে বাড়ি থেকে ফিরে এসে নিজে বাসা-বাড়ি পরিষ্কার-পরিছন্ন করার আহবান করেন তিনি। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, ডেঙ্গু এখন কমে আসবে বলে মনি করি। তবে ডেঙ্গু সারা বছরই থাকে। পরবর্তী বছরের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। নাহলে আগামী বছরেও একই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
এবছর রাজধানীসহ সারা দেশের সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ৫৩ হাজার ১৮২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। অর্ধ লাখের মধ্যে ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৫ হাজার ৯৭৪ জন। অর্থাৎ আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের ৮৬ শতাংশ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তির রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ১৬৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ৫৩ হাজার ১৮২ হলেও বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি।
এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে এক হাজার ৭০৬ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। মোট ভর্তি রোগীর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৭৩৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৯৭২ জন ভর্তি হন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকার বাইরেই বেশিসংখ্যক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। চলতি আগস্ট মাসের ১৮ দিনে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৪ হাজার ৭২১ জন। এই সংখ্যা গত জুলাই মাসে ছিল ১৬ হাজার ২৫৩ জন। জুনে ছিল এক হাজার ৮৮৪ জন, মে মাসে ১৯৩ জন, এপ্রিলে ৫৮ জন, মার্চে ১৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৮ জন এবং জানুয়ারিতে ৩৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভাষ্যমতে, আইইডিসিআর-এ ডেঙ্গুতে ৭০ জনের মৃত্যুর তথ্য এসেছে। তবে তারা বলেছেন, পর্যালোচনা করে ৪০ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছে। এখনও পর্যালোচনা অব্যাহত রয়েছে। সব পর্যালোচনার পর সঠিক সংখ্যা জানানো হবে।
এদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে গত ১৭ই আগস্ট সরকারের পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং আরও চারটি সংস্থার সমন্বয়ে ই-ক্যাবের সহায়তায় ‘স্টপ ডেঙ্গু’ নামের একটি বিশেষায়িত মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে যে কেউ সারা দেশের যেকোনো স্থানে মশার প্রজনন স্থান শনাক্ত করতে পারবে, যা মশার প্রজনন স্থানের ম্যাপিং তৈরিতে সাহায্য করবে।