টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় জন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক ও যত্রতত্র রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন হাটবাজার। এর ফলে বাড়ছে জনদুর্ভোগ ও যানজট। বিশেষ করে হাটের নিজস্ব জায়গা থাকা সত্ত্বেও উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের হাটবাজারগুলো সড়ক দখল করে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পরিচালিত হচ্ছে। সড়ক দখল করে বসানো হাটবাজারগুলো হলো পাহাড়িয়া এলাকার গারোবাজার, সাগরদীঘি, জোড়দীঘি, ধলাপাড়া, চাপড়ি, দেওপাড়া ও ছনখোলা। এ ছাড়া টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দখল করে বসানো হাটগুলোর অন্যতম হলো পাকুটিয়া, ব্রাহ্মণশাসন, কদমতলী ও হামিদপুর। জাতীয় মহাসড়কের উপর বসানো এই হাটগুলো হাটবার হলে মহাসড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। যানবাহন চলাতো দূরের কথা মানুষ হেঁটে পার হওয়াই মশকিল হয়ে পড়ে। ফলে প্রায়ই বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ দিতে হয় সাধারণ মানুষ ও পথচারীদের।
পাহাড়িয়া এলাকা অন্যতম প্রধান দু’টি হাট গারোবাজার ও সাগরদীঘি। ইজারার জায়গা ফাঁকা রেখে প্রতিদিন সেখানকার সড়কের উপর প্রতিদিন বাজার বসে, সাপ্তাহিক হাটও বসে সড়কের ওপর। এজন্য বাজার সংলগ্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যানজট চরম আকার ধারণ করে।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, মধুপুর ও ফুলবাড়িয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত গারোবাজার হাট। উপজেলা ও জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের পাঁচটি পাকা রাস্তার সংযোগ স্থলে এ বাজার অবস্থিত। সাত একর জায়গার ওপর বাজারটি প্রতিষ্ঠিত হলেও সরকারি পেরিফেরিভুক্ত জমি প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় পাকা সড়কের উপর বসছে আনারস, কাঁঠাল, কলা ও মৌসুমি সবজির বাজার। সড়ক দখল করে হাটবাজার বসানোর ফলে প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষকে।
সরজমিনে গারোবাজার হাটে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের মধ্যে চলছে হাটের বেচাকেনার কাজ। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। এ কারণে সড়কে সব ধরনের যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে থাকছে। এবারের ঈদে শহর থেকে যাহারা গ্রামে এসে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য গ্রামে এসে ছিলেন তারাও চরম এই ভোগান্তির ফলে ঈদের আনন্দ অনেকটাই মলিন হয়ে গেছে। চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। যানজটে আটকা পড়ে দুর্ভোগের শিকার যাত্রী আলাল মিয়া বলেন, আমাদের দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই। যারা হাটের ইজারা নিয়েছে তারাই সড়ক দখল করে বাজার বসাইছে। সেখান থেকে নিয়মিত টোল আদায় করছে। জনগণের দুর্ভোগ তাদের কিছু যায় আসে না। স্কুলশিক্ষক সাজ্জাদ রহমান বলেন, কিছুদিন আগে সাপে কাটা এক রোগীকে ময়মনসিংহের হাসপাতালে নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। ফলে হাসপাতালে নেয়ার আগেই রাস্তায় রোগীটি মারা যায়। মানুষ মরুক আর যাই হোক তাদের কিছু যায় আসে না। তিনি বলেন, এ যেন শহরের আদলে গ্রামের প্রতিচ্ছবি। গ্রামের রাস্তায় এমন যানজট অতীতে কখনো চোখে পড়েনি। গারোবাজার হাটের যানজটের বিষয়ে উপজেলার লক্ষ্মীন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একাব্বর হোসেন বলেন, ইজারাদারদের সঙ্গে নিয়ে আমরা সব সময় হাটের জায়গাতেই বাজার বসানোর চেষ্টা করি। কিন্তু কাঁঠাল, আনারস ব্যবসায়ীসহ ক্রেতা-বিক্রেতাদের অনীহার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে আমরা আগামী মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে আলোচনা করবো। আশা করি সহসাই এই দুর্ভোগ কেটে যাবে। এ ব্যাপারে ঘাটাইল উপজেলার নির্বাহী অফিসার কামরুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে মানবজমিনকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।’ আশাকরি দ্রুত এর সমাধান হবে।