× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

পাখির শব্দে মুখর আলিদেওনা গ্রাম

বাংলারজমিন

এম সাখাওয়াত হোসেন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) থেকে
২০ আগস্ট ২০১৯, মঙ্গলবার

নওগাঁর মহাদেবপুরে বাঁশ ও গাছে গাছে হাজার হাজার পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে আলিদেওনা গ্রাম। জেলার সর্ববৃহত্তর পাখি কলনী আলিদেওনা গ্রামকে সরকারিভাবে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবিদরা। গ্রামের সাধারণ মানুষের উদ্যোগে সেখানে অনেক আগেই গড়ে তোলা হয়েছে পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল। এখানে আশ্রয় নেয়া হরেক রকম পাখির মধ্যে রয়েছে লাল বক, সাদা বক, সামখইল, রাতচোরা, সারস, মাছরাঙা, পানি কাউর, বিভিন্ন প্রজতির ঘুঘুসহ নাম না জানা নানান রঙের প্রায় লক্ষাধিক পাখি। গ্রামের আনাচে-কানাছে বেড়ে ওঠা বাঁশ ও গাছে গাছে সারাক্ষণ হাজার হাজার পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে গ্রামটি। এ কারণে আলিদেওনা গ্রামের নাম হয়েছে পাখিগ্রাম। ওই গ্রামের সীমানায় কোনো পাখি প্রবেশ করা মানে পাখিটি নিরাপদ। আর এ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন গ্রামের সকলেই।
পাখি শিকার রোধে গ্রামবাসী নিয়েছেন নানা উদ্যোগ। ফলে শীতকালসহ সারা বছরই সেখানে হাজার হাজার পাখির আগমন ঘটে। বিশেষ করে বাচ্চা উঠানোর মৌসুমে সামখইল ও বকের নয়নাভিরাম এ দৃশ্য দেখতে গ্রামটিতে প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক মানুষের আগমন ঘটে। গ্রামটিতে প্রবেশের সময় দেখা যায় সরু রাস্তার দুই ধারে থাকা গাছে গাছে লাগানো রয়েছে বিভিন্ন পাখির আদলে সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডগুলোতে পখি শিকার রোধে বিভিন্ন আইন ও সচেতনতামূলক উপদেশ বাণী লেখা রয়েছে। ‘পাখি শিকার করবেন না, পাখি মারবেন না, পাখিরাও আমাদের মতো বাঁচতে চায়, পাখি এ সমাজের পরম বন্ধু, তাদের আগলে রাখতে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে’ ইত্যাদি। পাখি প্রেমের এমন অনন্য নজির স্থাপন করেছেন গ্রামবাসী। আর এ কাজে গ্রামের মানুষদের এক কাতারে এনে প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করছে স্থানীয় আলিদেওনা পাখি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি নির্মল বর্মন। সেখানে পাখির খেলায় যেন মেলা বসে। পাখিদের মেলার কারণে গ্রামটিও যেন ফিরে পেয়েছে নতুন প্রাণ। নতুন প্রাণের স্পন্দনে জেগে ওঠা গ্রামবাসী পাখিদেরও আগলে রেখেছেন আপন সন্তানের মতোই। ইচ্ছাকৃতভাবে না হোক, কোনো শিকারি ভুলক্রমেও এ গ্রামে প্রবেশ করলেও তার কপাল মন্দ। মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে ১২ কি.মি. পশ্চিমে খাজুর ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত আমিদেওনা পাখিরগ্রাম। সেখানে গেলেই মুগ্ধ হয়ে উঠে মানুষ। স্থানীয়রা স্বউদ্যোগে গ্রামটিকে পাখি শিকারমুক্ত এলাকা ঘোষণা করেছে। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার পাখির বাস। ওই পাখিগ্রামের পাখিদের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় পাখিপ্রেমী, সমাজসেবী ও পরিবেশবিদরা সরকারিভাবে অভয়ারণ্য ঘোষণার পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি করছেন। এ বিষয়ে আলিদেওনা পাখি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত নির্মল বর্মন গ্রামটিকে সরকারিভাবে অভয়ারণ্য করার পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানান। নওগাঁ জেলার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করছেন বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশন (বিবিসিএফ) নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পাখি প্রেমিক এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, পাখিদের প্রতি আলিদেওনা গ্রামের মানুষের ভালোবাসার কারণেই এখানে পাখিদের আবাসভূমি গড়ে উঠেছে। তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বা অন্যকোনো কারণে বাসা থেকে পড়ে যাওয়া বাচ্চাগুলোকে গ্রামবাসী যতœসহকারে মা পাখিদের বাসায় পৌঁছে দেয়। তিনি পাখির প্রতি আন্তরিকতা জন্য বিবিসিএফ নওগাঁ জেলা কমিটির পক্ষ থেকে নির্মল বর্মনসহ গ্রামবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
এ বিষয়ে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুরর রহমান জানান, নওগাঁ জেলার আলিদেওনা গ্রামটি ঐতিহ্যবাহী পাখিগ্রাম হিসেবে সারা দেশের মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছে। পাখির অভয়ারণ্যসহ গ্রামটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছি।



অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর