কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বন্যার পানি নেমে গেলেও তছনছ করে রেখে গেছে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা। রেখে গেছে ঘরহারা, সাজানো সংসার হারা অসহায় মানুষের চোখের পানি। এখনো রয়েছেন অনেকে সড়কের ধারে আশ্রয় নিয়ে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট নষ্ট হওয়ায় অচল হয়ে আছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। রাস্তাঘাট জেগে উঠলেও তা পরিণত হয়েছে কঙ্কালে। বন্যার পূর্বের অবস্থা আর বন্যার পরের অবস্থা পুরোটাই যেন উপজেলাকে বদলে দিয়েছে। বদলে দিয়েছে যেন মানচিত্র। জানা গেছে, বন্যার পানির তোড়ে ভেঙে ডুবে যায় একে একে উপজেলার সব রাস্তাঘাট।
পুরো শহর ডুবে যায় পানির নিচে। অনেকে ছাড়ে শহর। প্রায় দুই সপ্তাহ পর বানের পানি নেমে যায়। শহর ছেড়ে যাওয়া মানুষজন ফিরে আসে শহরে কিন্তু রেখে যাওয়া চিলমারী জেগে উঠলেও কঙ্কাল শরীর নিয়ে ভেসে উঠে সড়ক ব্যবস্থা। শহর ও শহরের অশাপাশে সব সড়কের পরিণতি বেহাল। চলাচলের সড়কগুলো যেন পরিণত হয় কঙ্কালে। পানি নেমে যাওয়ায় প্রায় তিন সপ্তাহ কেটে গেলেও রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের অভাবে চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কগুলো। উপজেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের সব সড়কসহ অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের অধিকাংশ জায়গা থেকে ইট সুরকি উঠে অসংখ্য গর্ত, রাস্তার বিভিন্ন স্থানে বড়বড় গর্ত, খানাখন্দে পানি-কাদা জমে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাস্তাগুলোর বেশিরভাগ কার্পেটিং, খোয়া উঠে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় ভ্যান, রিকশা, সাইকেল, ভটভটিসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছে জনগণ। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরাও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলার ৩টি ব্রিজ, ৯টি কালভার্ট আংশিক, প্রায় ২০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ও ৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু সড়ক সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৩ কোটি টাকা।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. আজিজার রহমান বলেন, যেসব ব্রিজ, কালভার্ট ও রাস্তাঘাট আংশিক ক্ষতির মধ্যে ধরা হয়েছে সেগুলোরও পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, মানুষের দুর্ভোগ লাগবের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ-কালভার্ট ও রাস্তাঘাটের কাজ করার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মো. কহিনুর রহমান জানান, বন্যায় শতশত পরিবারের কয়েক হাজার কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় খানাখন্দের রাস্তা জেগে উঠায় ওই সব রাস্তায় চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি সমাধানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত যে মানুষগুলো এখনো ঘর তুলতে বা ফিরতে পারেনি তাদের সরকারিভাবে তাঁবুর ব্যবস্থাও করা হয়েছে।