বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর শেষ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। বুধবার সকালে তিনি তার পরবর্তী গন্তব্য কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যান। ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর বৈঠকের ছবি সম্বলিত একটি টুইটবার্তা প্রচার করেন তিনি। বিদায়ী টুইটে জয়শঙ্কর লিখেন- পররাষ্ট্র মন্ত্রীর (ড. একে আবদুল মোমেন) সঙ্গে কার্যকর বা ফলপ্রসূ আলোচনা শেষে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ আমাকে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়ার জন্য। দেখে ভালো লাগছে যে আমাদের (ঢাকা-দিল্লি) সম্পর্ক এমন ইতিবাচক পথেই রয়েছে।’ দিল্লির বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর সোমবার রাতে ঢাকা এসেছিলেন। মঙ্গলবার দিনভর ব্যস্ত কর্মসূচিতে কাটিয়েছেন।
দিনের শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তার স্মৃতিবিজরিত ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়ি (জাদুঘর) পরিদর্শন শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন।
বৈঠকটি তার সম্মানে হোস্ট মন্ত্রী মোমেন আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। সেখানে তারা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে একান্তে এবং পরে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি সইয়ের বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অঙ্গীকার পূনর্ব্যক্ত করা ছাড়াও মোটা দাগে যেসব বিষয়ে কথাবার্তা হয়েছে তা তুলে ধরেন। জয়শঙ্কর বলেন, অভিন্ন ৫৪ নদীর পানিবণ্টনে উভয়ে লাভবান হয় এমন একটি উপায় খুঁজতে বাংলাদেশ-ভারত সম্মত হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ে ভারতের একটি অবস্থান এবং অঙ্গীকার রয়েছে। তাতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আসামে চলমান এনআরসিতে অনুপ্রবেশকারী হিসাবে অভিযুক্ত করে ৪০ লাখ ভারতীয় নাগরিককে বাদ দেয়া এবং তাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ফেরত পাঠানোর যে হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে শাসক দলের তরফে সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এটা একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করেন। এনআরসি নিয়ে মন্ত্রী আর কথা বাড়াননি। বাংলাদেশের তরফে বলা হয়, এ নিয়ে বৈঠকে একটি শব্দও আলোচনা হয়নি। বিষয়টি এজেণ্ডায়ও ছিল না।
জয়শঙ্কর আরও বলেন, অংশীদার হিসেবে এক সঙ্গে কাজ করলে প্রতিবেশীরা কী করতে পারে তার উদাহরণ হয়ে আছে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অংশীদারিত্ব। এ অংশীদারিত্ব যে দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশ্বের জন্য সত্যিকারের রোল মডেল তা নিশ্চিত করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে উল্লেখ করেন তিনি। ভারতীয় মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মসূচিগুলো, যা ভারতের স্বার্থেও অন্তর্ভুক্ত তা বাস্তবায়নে তারা সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাবেন। রোহিঙ্গা শব্দ না বললেও তিনি মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং দ্রুত প্রত্যাবাসন যে ভারতের স্বার্থেই হওয়া উচিত সেটা বর্নণা করেন। ওই বৈঠক শেষে বিকালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিল্লি সফরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাঠানো আমন্ত্রণপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন। আগামী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী দিল্লি যাচ্ছেন।
হাই প্রোফাইল ওই সফরে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা এবং বিভিন্ন ইস্যুতে পরস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে অন্তত ডজন খানেক চুক্তি সই হওয়ার প্রস্তুতি চলছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ভারতীয় হাই কমিশনের তথ্য মতে, বুধবার সকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাস হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে দিল্লি বিদেশমন্ত্রীকে আন্তরিক বিদায় জানান। উল্লেখ্য, যৌথ প্রেস ব্রিফিং, টুইট বার্তা প্রচার হলেও দিল্লির বিদেশমন্ত্রীর ঢাকা সফরে কোন জয়েন্ট স্টেটমেন্ট বা লিখিত বিবৃতি সই হয়নি।