একটা সময়ে বিশ্বের সেরা সেরা পেসারদের মিলনমেলা ঘটিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জোয়েল গার্নার, কার্টলি এমব্রোস, কোর্টনি ওয়ালশদের মতো কিংবদন্তিরা খেলতেন ক্যারিবীয়দের হয়ে। বর্তমান ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে তাদের মানের কোনো বোলার নেই। তবে লম্বা বিরতির পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাস্ট বোলিংয়ের ‘বিপ্লব’ ঘটিয়েছে শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, কেমার রোচ, জেসন হোল্ডার, আলজেরি জোসেফদের হাত ধরে। উল্টো চিত্র বাংলাদেশ শিবিরে। গত ১৯ বছরে চোখে পড়ার মতো কোনো উন্নতি হয়নি বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ে।
পরিসংখ্যান বলছে ২০১১ সালের পর নিজেদের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসারদের গড় ছিল ২৫.৪৪, ২০১৭ সালে সেটি ২১.১১-এ নেমে এসেছে। ২০১৭ সালের পর ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে সবচেয়ে সফল তিন টেস্ট পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েল (গড় ১৯.২৫), জেসন হোল্ডার (১৪.৯১) ও কেমার রোচ (১৫.৮৫)।
আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ক্যারিবীয় পেস বোলারদের গড় ১৯.০৫ আর সফরকারী পেসারদের গড় ২৪.১৬।
এবা দেখে নেয়া যাক ২০১১ সালের পর কী উন্নতি করেছেন বাংলাদেশের পেসাররা। কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আট বছর আগে বাংলাদেশের পেসারদের গড় ছিল ৩৭.৯৩। বর্তমানে সেটি ৩২.৯৬। বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের উন্নতিতে এত ফারাক কেন? প্রথমেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কথা বলতে হবে। গতি ও সুইংয়ে ক্যারিবীয়দের তুলনায় অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশি পেসাররা। তবে বাংলাদেশ ঘরের মাঠে যে উইকেটে খেলে সেটিও পেসারদের সাফল্যের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের মাঠে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে যেমনই হোক টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলে সবুজ উইকেটে। আর বাংলাদেশ একেবারে স্পিনিং উইকেট বানায়। ২০১৬ সালের পর বাংলাদেশের উইকেটগুলো অতিমাত্রায় স্পিন সহায়ক। এতটাই যে কোনো ম্যাচে পেসার না খেলালে কিছু যায়-আসে না! এ ধরনের উইকেটে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তবে দেশের বাইরে যখন খেলতে যায় তারা, পেসারদের গুরুত্ব বোঝা যায়। একজন কোয়ালিটি পেসারের অভাব খুব বোধ করে বাংলাদেশ। বিগত ৮-১০ বছরে বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন কোচ পেসারদের বোলিং পাল্টে দেয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। সাফল্য পেয়েছেন অল্পই। সর্বশেষ বোলিং কোচের দায়িত্বে থাকা কোর্টলি ওয়ালশের আমলে বরং আরো খারাপ হয়েছে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ! এজন্য ওয়ালশকে সরাসরি দোষ দেয়া যায় না। খেলোয়াড়দেরও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ছিল।
ঘরোয়া লীগ থেকেই বাংলাদেশের সিস্টেমটা এমন যে স্পিনাররা আধিপত্য দেখাবেন। নতুন বোলিং কোচ শার্ল ল্যাঙ্গাভেল্টের জন্য তাই পেসারদের উন্নতি অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি অবশ্য আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘বিষয়টা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো। সেখানকার উইকেটের কারণে তিন পেসার খেলাবেন আপনি। আপনি নেটে উন্নতি করার চেষ্টা করতে পারেন। মৌলিক বিষয় হচ্ছে লাইন-লেংথ ঠিক রাখা। উপমহাদেশ বলেই সব বদলে ফেলতে হবে না।’ দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত মোস্তাফিজরা জেনুইন টেস্ট পেসার হয়ে উঠতে পারেন কিনা।