সিলেটের ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ফেসবুকে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। দায়েরকৃত মামলায় শুক্রবার ২ তরুণীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হচ্ছে- গোয়ালাবাজারের গদীয়ারচর রোডের জুনেদ ভিলার আনসার মিয়ার মেয়ে নাঈমা বেগম (১৮) ও জুনেদ ভিলার ভাড়াটিয়া একই ইউনিয়নের নিজ করনসী পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত সফর আলীর মেয়ে তামান্না বেগম (১৮)। পুলিশের হাতে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত তামান্না ও নাইমা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। শুক্রবার বিকালে ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিক বাদী হয়ে আটক তরুণী তামান্না ও নাইমাকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওসমানীনগর থানায় মামলা করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ই আগস্ট রাতে হধরসধ নবমড়স নামের ফেসবুক আইডি থেকে চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিকের বিরুদ্ধে মানহানিকর মন্তব্য করে একটি পোস্ট দেয়া হয়। পরে এই পোস্টটি আরো অন্য একটি আইডি থেকে শেয়ার করেন তামান্না বেগম।
তামান্না ঘটনাটি গুজব বলেও উল্লেখ করে শেয়ার করেন। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনায় ওসমানীনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলে পুলিশ তদন্তে নেমে এই দুই তরুণীকে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাদের আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শুক্রবার চেয়ারম্যান মানিকের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হলে সেই মামলায় নাঈমা ও তামান্নাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ই আগস্ট রাতে নাইমা বেগমের ফেসবুক আইডি হধরসধ নবমড়স থেকে নাইমার নিজের ও চেয়ারম্যান মানিকের কয়েকটি ছবি দিয়ে চেয়ারম্যান মানিকের বিরুদ্ধে মানহানিকর ও অশ্লীল মন্তব্য করে একটি পোস্ট দেয়া হয়। পরে এই পোস্টটি নুসরাত জাহান আয়শা ও মাহিয়া বেগম নামের আরো দুটি আইডি থেকে শেয়ার করা হয়। ফেসবুকের অশ্লীল পোস্টগুলো চেয়ারম্যান মানিকের নজরে পড়লে তিনি সেই ফেসবুক আইডির পোস্টগুলোর স্ক্রিন শর্ট নিয়ে ওসমানীনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সাধারণ ডায়েরির প্রেক্ষিতে ওসমানীনগর থানা পুলিশ ঘটনাটি তদন্তে শুরু করলে একপর্যায়ে নুসরাত জাহান আয়শা ওরফে তামান্না ও নাইমাকে শনাক্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে গোয়ালাবাজার গদীয়াচর জুনেদ ভিলা থেকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তামান্না ও নাইমা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। গোয়ালাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিক বলেন, আমার মানসম্মান নষ্ট ও আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য একটি কুচক্রী মহল ফেসবুকে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে ওই দুই তরুণী ছাড়া আর যারা জড়িত রয়েছে তাদের খুঁজে বের করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ করছি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসমানীনগর থানার ওসি (তদন্ত) এসএম মাইনুদ্দিন বলেন, চেয়ারম্যান মানিকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুই তরুণীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা প্রাথমিকভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। ওসমানীনগর থানার ওসি এসএম আল মামুন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় আটক দুই তরুণীর বিরুদ্ধে ওসমানীনগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। গতকাল তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিক তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনায় জড়িত অন্যদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। গতকাল বিকালে তার ইউনিয়ন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তিনি। চেয়ারম্যান মানিকের অভিযোগ, তিনি পরপর দু’বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে অজ্ঞাত অপপ্রচারকারীরা তার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত কুৎসা রটনাসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে আসছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আমাকে জড়িয়ে কুৎসা রটনা করে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে একটি কুচক্রি মহল। নিজের নিরাপত্তার জন্যই থানায় শুক্রবার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওসমানীনগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেছি। তবে কে বা কারা ঘটনার মূলহোতা এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূলহোতাদের আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনসহ সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করছি।